একই সম্পদের যাকাত প্রতি বছর আদায় করতে হবে কি?

জিজ্ঞাসা–৩৪৬: কোরআনের কোন আয়াতে আছে যে, এই বছর যে সম্পদের যাকাত আদায় করলাম ঠিক সেই একই সম্পদের যাকাত পরবর্তী বছরে আবারো আদায় করতে হবে? উত্তর পেলে চির কৃতজ্ঞ থাকবো। –MOHAMMAD KHALED KABI: [email protected]

জবাব: পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল আলেম এ ব্যপারে একমত যে, নিসাবের মালিক যাকাতযোগ্য সম্পদের যাকাত প্রতি বছর আদায় করবে। ইবন হাযাম রহ. বলেন,   اتفقوا على أن الزكاة تتكرر في كل مال عند انقضاء كل عام উম্মতের ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, বছর পূর্তি হলে প্রতি বছর যাকাত দিতে হয়। (মারাতিবুল ইজমা ৩৮)

উক্ত ইজমা’ তথা ঐকমত্যের দলিল হল, রাসূলুল্লাহ থেকে এই পর্যন্ত চলে আসা উম্মতের অবিচ্ছিন্ন আমল। কেননা, রাসূলুল্লাহ যখন বিভিন্ন গোত্র ও শহরে যাকাত উসুলকারী পাঠাতেন, তখন কেউই বিগত বছর যে সম্পদের যাকাত দিয়েছে তা আলাদা করত না। বরং তারা যাকাতযোগ্য সমুদয় সম্পদ একসাথ করত আর রাসূলুল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত যাকাত উসুলকারীগণ সমুদয় সম্পদ থেকেই যাকাত উসুল করতেন।

ইবন সিরিন রহ.বলেন,

كان المصدق يجيء فأين ما رأى زرعا قائما أو إبلا قائمة أو غنما قائمة أخذ منها الصدقة

যাকাত উসুলকারীগণ যেখানেই ফসল, উট কিংবা মেষপাল দেখত, সেখান থেকেই যাকাত উসুল করত। (আল মুদাওয়ানা ১/৩৬১)

হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُعَاوِيَةَ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ ثَلاَثٌ مَنْ فَعَلَهُنَّ فَقَدْ طَعِمَ طَعْمَ الإِيْمَانِ مَنْ عَبَدَ اللهَ وَحْدَهُ وَأَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَعْطَى زَكَاةَ مَالِهِ طَيِّبَةً بِهَا نَفْسُهُ رَافِدَةً عَلَيْهِ كُلَّ عَامٍ وَلاَ يُعْطِى الْهَرِمَةَ وَلاَ الدَّرِنَةَ وَلاَ الْمَرِيْضَةَ وَلاَ الشَّرَطَ اللَّئِيْمَةَ وَلَكِنْ مِنْ وَسَطِ أَمْوَالِكُمْ فَإِنَّ اللهَ لَمْ يَسْأَلْكُمْ خَيْرَهُ وَلَمْ يَأْمُرْكُمْ بِشَرِّهِ-

আব্দুল্লাহ ইবনু মা‘আবিয়া রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি কাজ করবে সে পরিপূর্ণ ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করবে। যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে এবং স্বীকার করে যে আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই; যে ব্যক্তি প্রত্যেক বছর তার সম্পদের যাকাত হিসাবে উত্তম মাল দান করে এবং বৃদ্ধ বয়সের, রোগগ্রস্থ, ত্রুটিপূর্ণ, নিকৃষ্ট মাল প্রদান করে না; বরং মধ্যম মানের মাল প্রদান করে। আল্লাহ তোমাদের নিকট তোমাদের উত্তম মাল চান না এবং নিকৃষ্ট মাল প্রদান করতেও নির্দেশ দেননি। (আবুদাউদ হা/১৫৮২)

প্রিয় প্রশ্নকারী দীনি ভাই, এটা তো অকাট্য প্রমাণিত কথা যে, কোরআন যেমন শরিয়তের দলিল, অনুরূপভাবে সহিহ হাদিস এবং  উম্মতের ওলামায়ে কেরামের ইজমা’ও শরিয়তের দলিল। উক্ত বিধানের মত শরিয়তের এমন অসংখ্য বিধান আছে, যা কোরআন দ্বারা নয়; বরং হাদিস কিংবা ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। মুসলিম হিসাবে আপনার কর্তব্য হল, তা মেনে নেয়া। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا

“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন কাজের নির্দেশ দিলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে কোন এখতিয়ার থাকে না, আর যে আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হয় সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়”। (আল আহযাব ৩৬)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

আরও পড়ুন–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × five =