বাবা নামাজ পড়ে না; সন্তানের করণীয় কী?

জিজ্ঞাসা–৫৭০: বাবাকে অনেক বার বুঝানোর পরও নামাজ পড়ে না। এখন আমি বড় ছেলে হয়ে করণীয় কী?–Md.sumon hossain

জবাব:

এক. সন্তান হিসেবে আপনার করণীয় হল, আপনার বাবাকে হেকমত ও বুদ্ধিমত্তার সাথে নামাজের দাওয়াত অব্যাহতভাবে দিতে থাকবেন। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ

মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম ৬)

আর দেয়ার ক্ষেত্রে আদর্শ পদ্ধতি হবে সংক্ষেপে নিম্নরূপ:

১। তাকে মাঝে মাঝে স্মরণ করিয়ে দিন যে, নামায একটি ফরয ইবাদত এবং ঈমানের পর নামায ইসলামের সবচেয়ে মহান রুকন।

২। কখনওবা তাকে নামাযের কিছু ফযিলত অবহিত করুন; যেমন- আল্লাহ্‌ বান্দার উপর যা কিছু ফরয করেছেন তার মধ্যে নামায সর্বোত্তম। বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। একটিমাত্র সেজদার মাধ্যমে বান্দার এক ধাপ মর্যাদা সমুন্নত হয় এবং একটি পাপ মোচন হয়…ইত্যাদি নামাযের ফযিলতের ব্যাপারে আরও যা কিছু বর্ণিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আশা করি, তার অন্তর খুলে যাবে এবং নামায তার চক্ষুশীতলে পরিণত হবে।

৩। মাঝে মাঝে তাকে আল্লাহ্‌র সাক্ষাত, মৃত্যু ও কবরের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। নামায বর্জনকারীর যে, খারাপ মৃত্যু হয় ও কবরে আযাব হয় তাকে সেটা স্মরণ করিয়ে দিন।

৪। তাকে মাঝে মাঝে স্মরণ করিয়ে দিন, নির্ধারিত সময় এর চেয়ে দেরীতে নামায আদায় করা কবিরা গুনাহ্‌। আল্লাহ্‌ তাআলা  বলেন, فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ সেসব নামাযীদের জন্য ধ্বংস যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর। (সূরা মাউন ৪,৫)

৫। তাকে নামায সংক্রান্ত, নামায বর্জনকারী ও অবহেলাকারীর শাস্তি সংক্রান্ত কিছু পুস্তিকা উপহার দিন।

দুই. দাওয়াত দিতে গিয়ে কোনো অবস্থাতেই তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। কেননা, তিনি আপনার বাবা। আর মা-বাবা সর্বাবস্থায় সদ্ব্যবহারে হকদার; এমন কি তারা অমুসলিম হলেও।  আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَإِن جَاهَدَاكَ عَلى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا

পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। (সূরা লুকমান ১৫)

তিন. প্রিয় ভাই, আপনার উক্ত মেহনত ও দরদ আরও বেশি কার্যকরী ও সহজ হবে, যদি তাকে কোন হক্কানী আলেমের সঙ্গে সম্পর্ক করিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি প্রথমে তাকে কোন হক্কানী আলেমের বয়ান শোনার জন্য আগ্রহী করে তুলতে পারেন। ওলামাদের মজলিসে আসা যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে পারেন। অথবা তাকে দাওয়াত-তাবলিগে কিছু সময় দেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

প্রিয় ভাই, উক্ত মেহনত আপনাকে চালিয়ে যেতে হবে প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি তার হেদায়তের জন্যও দোয়া করতে হবে নিয়মিত। কোন অবস্থায় আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। আশাহত হয়ে চেষ্টা কিংবা দোয়া বর্জন করবেন না। ইনশাআল্লাহ একদিন না একদিন সাফল্য পাবেন। وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। (সূরা ত্বলাক ৩) রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দোয়া ব্যতীত। (তিরমিযী ২১৩৯)

তথাপি যদি তিনি থেকে ফিরে না আসেন, তাহলে আপনি দায়িত্বমুক্ত বলে বিবেচিত হবেন এবং উক্ত চেষ্টা ও দোয়ার জন্য অশেষ সাওয়াবের অধিকারী হবেন। আমরাও দোয়া করি, আল্লাহ আপনার বাবাকে পরিপূর্ণ হেদায়াত দান করুন। আমিন।

والله أعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন

১ টি মন্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen + six =