বিধর্মীর রান্না করা খাবার খেয়ে এবং ধোপা দ্বারা ধোয়া কাপড় পরে ইবাদত করলে কবুল হবে কি?

জিজ্ঞাসা–৫০৯: আস্সালামুআলাইকুম। আমি যে সংস্থায় চাকুরী করি এখানে মুরগী অথবা গরু জবাই করা আমি দেখি না। আট নয়শ মানুষের এসব গোশত আবার রান্না করছে একজন বিধর্মী। এছাড়াও আমার কাপড় ধুপিতে দিতে হয় সেও সবার কাপড় একসাথে পরিষ্কার করে। এ ক্ষেত্রে যেহেতু হালাল রিযিক এবং পবিত্র পোষাক এবাদতের মূল শর্ত সেক্ষত্রে আমার এবাদত এ খাবার বা পোষাকের কারণে ত্রুটিপূর্ণ হচ্ছে কিনা? মেহেরবানী করে জানাবেন। আল্লাহ আপনার সহায় হউন।– মোঃ মেহেদী হাসান

জবাব:وعليكم السلام ورحمة الله

এক বিধর্মীদের রান্না করা খাবার খাওয়াতে ইসলামে কোন নিষেধ নেই। তাদের রান্না করা খাবার খাওয়া জায়েয আছে। যেহেতু রাসূলুল্লাহ ﷺ অমুসলিমদের দেয়া দাওয়াত খেয়েছেন এবং তাদের দেয়া হাদিয়াও গ্রহণ করেছেন। (বুখারী: ২৬১৫-১৮, ‘মুশরিকদের নিকট থেকে হাদিয়া গ্রহণ’ অনুচ্ছেদ)

মূল বিষয় হল, জবাই করার সময় আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে কিনা? কেননা, হালাল পশু-পাখি খাওয়া ‘হালাল’ হবার জন্য প্রধান শর্ত হল, সেটিকে আল্লাহর নামেই জবাই করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন–

وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ

যেসব জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয় নি, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করো না; এ ভক্ষণ করা গোনাহ। (সুরা আনআম-১২১)

সুতরাং আপনি যদি অমুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসরত হন তাহলে খোঁজখবর নিবেন। এরপর যদি প্রমাণিত হয় যে, কোন মুসলিম জবাই করে না, তাহলে আপনার জন্য তা হালাল হবে না। আর যদি মুসলিম রাষ্ট্র হয় তাহলে খোঁজখবর নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কেননা মুসলিম রাষ্ট্রে সাধারণত মুসলিমই জবাই করে থাকে এবং জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম নিয়ে থাকে। (কিতাবুন নাওয়াযিল ১৪/৪৭৯/)

দুই- মূলত ধোপা ঠিক করার সময় দেখা উচিৎ; সে কাপড় ধোয়ার সময় পবিত্রতার প্রতি লক্ষ্য রাখে কিনা। কিন্তু তাই বলে কেবল সন্দেহের কারণে ধুপির ধোয়া কাপড় নাপাক বলে দেয়া যাবে না। বরং কাপড়ে কোন অপবিত্র বস্ত্ত লেগে না থাকলে তা পবিত্র বলে গণ্য হবে। (ফাতাওয়া উসমানী ১/৩২১)

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, উক্ত আলোচনা থেকে বোঝা গেল, কেবল সন্দেহের বশে আপনার ইবাদত ত্রুটিপূর্ণ হচ্ছে; বলা যাবে না। বরং সতর্ক থাকুন এবং আল্লাহর ব্যাপারে এ ধারণা রাখুন যে, তিনি আপনার ইবাদত কবুল করে নিচ্ছেন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন-
মুসলিম হওয়ার পর কুফরি যামানার ভাল কাজগুলোর সাওয়াব পাবে কিনা?
নওমুসলিম কতদিন পর্যন্ত নিজেকে ‘নওমুসলিম’ হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে?
বিধর্মীর ঘরে জন্ম নেয়া মানে কি আল্লাহ্‌র রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া?
চিরকাল জান্নাতে এবং চিরকাল জাহান্নামে বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
অমুসলিমের সাথে লেন-দেন করলে ইবাদতের কোনো ক্ষতি হয় কি?
অমুসলিমের হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে কিনা?
অমুসলিমদের সেমিনারে অংশগ্রহণ করা যাবে কি?
অমুসলিম মারা গেলে ইন্নালিল্লাহি…পড়া যাবে কিনা?
অমুসলিম দেশে বসবাসকারীরা গরু-মুরগি বিসমিল্লাহ বলে খেতে পারবে কিনা?
অমুসলিম অবস্থায় মারা গেলে তার জন্য দোয়া করা যায় কিনা?
হিন্দু কাজের বুয়া রাখা যাবে কিনা?
হিন্দুকে সালাম দেয়া যাবে কি?হিন্দু বাড়িতে খানা খাওয়া এবং নামাজ আদায় করা যাবে কিনা? 
অমুসলিম দুনিয়া ও আখেরাতে ভাল কাজের প্রতিদান পাবে কিনা?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 18 =