মদ বা বিয়ার পান করা কি হারাম?

জিজ্ঞাসা– ১৪০: আসসালামু আলাইকুম মদ বা বিয়ার পান করা কি হারাম? হারাম হওয়ার কারণ কি? আমি যদি এতটুকু পরিমাণ পান করি, যাতে আমি মাতাল হই না অথবা আমি যতটুকুই পান করি না কেনো; আমি আমার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে কি আমার জন্যে ২টা পান করা হালাল হবে? —মাহ্দী খান অয়ন

জবাব: ওয়ালাইকুমুসসালাম।

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, ইসলামী বিধিবিধানের যে অংশগুলো যুগ যুগ যাবৎ অন্যদের থেকে অনন্য প্রশংসিত, যে বিষয়গুলো অন্য জাতিরাও শ্রদ্ধার সঙ্গে বরণ করে নেয় এবং ইসলামী উম্মাহ যেসব বিধিবিধান নিয়ে গর্ব করে থাকেসেসবের মধ্যে মদের নিষিদ্ধতা অন্যতম। ধনদৌলতের দিক থেকে উন্নত জাতি দেশগুলো এই মদের যন্ত্রণা নিয়ে বর্তমানে কঠিন বিপদগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। শুধু মদের কারণে ওইসব দেশে এবং তাদের অনুসারীদের মাঝে মুসলিম দেশেও লাখো লাখো মানুষ চরম পর্যায়ের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত। ইসলাম বহু আগেই ব্যাপারে সতর্ক হয়েছে এবং দুনিয়াবাসীকে সতর্ক করেছে

সলামের দৃষ্টিতে যে কোনো প্রকারের মাদক হারাম। কমবেশি সবটুকুই হারাম। বিয়ারও মদ হিসেবেই বিবেচ্য। মদের যে বিধান এরও একই বিধান তথা বিয়ার পান করা হারাম। কুরআনে কারীমের বিভিন্ন জায়গায় মাদকদ্রব্য হারামের কথা বর্ণিত হয়েছে। এক জায়গায় মদ সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে

 رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّیْطٰنِ শয়তানের গান্ধা কর্ম (সূরা মায়েদা : ৯০)

এছাড়া বহু হাদীসেও মদের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হাদীস শরীফে একবার মদপানকারীদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে বেত্রাঘাত জুতাপেটা কিছুই বাদ না যাওয়ার একটি বর্ণনাও রয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট বলেছেন : ما أسكر كثيره فقليله حرام যে বস্তু বেশি পরিমাণ খেলে নেশা হয় তার সামান্য পরিমাণ খাওয়াও হারাম। (জামে তিরমিযী ১৮৬৫;সুনানে ইবনে মাজাহ৩৩৯৩;সুনানে আবু দাউদ,৩৬৮১)

এমনকি মদের খালি পাত্রবোতলগুলো ঘরে রাখার ব্যাপারেও স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণই হচ্ছে এসব বোতল চোখে পড়ার কারণে নিষিদ্ধ মদের প্রতি যেন আগ্রহ জেগে না ওঠে।

হাদীসে মদকে সকল অশ্লীলতার মূল আখ্যা দেয়া হয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবী হযরত মুআয রা.-কে যে বিশেষ দশটি অসিয়ত করেছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল ولا تشربن خمرا فإنه رأس كل فاحشة অর্থাৎ কখনো কোনো প্রকারের মদ পান করবে না। কারণ এটি সকল অশ্লীলতার মূল

প্রসঙ্গক্রমে আরেকটি বিষয়ে দৃষ্টিপাত করতে চাই তা হচ্ছে, যা সরাসরি মাদকদ্রব্য হিসেবে প্রচলিত নয়। সেই সাথে তা নেশাগ্রস্থ করে না, তাহলে এসব পণ্যে অন্য কোন হারাম উপাদান না থাকলে হারাম বলার সুযোগ নেই। যেমন পেপসি, সেভেন আপ, এসব কোনটিই মাদকদ্রব্য হিসেবে প্রচলিত নয়। আর এসব খাওয়ার দ্বারা ব্যক্তি মাতালও হয় না। তাই এসব সাধারণ পানীয়তে অন্য কোন হারাম উপাদান থাকার নিশ্চয়তা পাওয়া না গেলে পান করাতে কোন সমস্যা নেই

তবে আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায় যেহেতু এগুলো ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে তাই এগুলো গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকাই কাম্য

والله اعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − fifteen =