স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর করণীয়

জিজ্ঞাসা–৫১০: স্বামী মারা গেলে, গহনা খুলে ফেলতে হয়, নাকফুল, চুড়ি তারপর একদম হােকা রংয়ের সাদামাটা জামাকাপড় পড়তে হয় – এসব নিয়ম কি ইসলামিক? জানতে চাচ্ছি, স্বামী মারা গেলে যতটা না দ্রুতটা নিয়ে তার দাফনের আয়োজন করা হয় তার চেয়েও দ্রুততায় তার স্ত্রীকে বিধবা সাজাতে ব্যস্ততা দেখা যায়। এ বিষয়ে কি কোনো হাদীস আছে?- Ahona ahmed

জবাব: স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর ইদ্দতকালীন সময় স্ত্রীর করণীয় সম্পর্কে হাদিসে যা এসেছে তা এই-

১- উম্মে হাবীবা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أني سمعت رسول الله ﷺ يقول : لا يحل لامرأة تؤمن بالله واليوم الآخر أن تحد على ميت فوق ثلاث إلا على زوج فإنها تحد عليه أربعة أشهر وعشرا

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য তার স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি সময় হিদাদ (শোক করা ও সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা) বৈধ নয়। আর স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন হিদাদ পালন করবে। (সহীহ বুখারী ৫১২৮)

২- উম্মে সালামা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عن النبي ﷺ أنه قال ” المتوفى عنها زوجها لا تلبس المعصفر من الثياب ولا الممشقة ولا الحلي ولا تختضب ولا تكتحل

নবী কারীম ﷺ বলেছেন, যে স্ত্রী লোকের স্বামী মৃত্যুবরণ করে সে যেন ইদ্দতকালীন সময়ে রঙিন এবং কারুকার্যমণ্ডিত কাপড় ও অলংকার পরিধান না করে। আর সে যেন খিযাব ও সুরমা ব্যবহার না করে। ( আবু দাউদ ২২৯৮)

আল্লামা কুরতুবী রাহ. তার বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘আলজামে লিআহকামিল কুরআন’ও ইদ্দত সংক্রান্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন,

الإحداد : ترك المرأة الزينة كلها من اللباس والطيب والحلي والكحل والخضاب بالحناء ما دامت في عدتها

হিদাদ পালনের অর্থ হল, মহিলা তার ইদ্দতকালীন সুগন্ধি, সুরমা, মেহেদি, অলঙ্কারাদিসহ পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে যাবতীয় সাজসজ্জা ত্যাগ করবে। (তাফফীরে কুরতুবী ৩/১৭৯)

উক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, বিধবা নারীর ইদ্দতে পাঁচটি বস্তু হারাম, যার আরবি নাম হিদাদ–
এক. সকল প্রকার সুগন্ধি: বিধবা নারী নিজের শরীরে কিংবা কাপড়ে সুগন্ধি ব্যবহার করবে না, অনুরূপ সুগন্ধি যুক্ত বস্তুও ব্যবহার করবে না।

দুই. শারীরিক সাজসজ্জা গ্রহণ করা: বিধবা নারীর সাজসজ্জা গ্রহণ করা, যেমন খিযাব ও অন্যান্য রূপচর্চার বস্তু সুরমা, শরীরের তক রঙ্গিনকারী বিভিন্ন প্রকার রঙ ব্যবহার করা হারাম। ওষুধ হিসেবে সুরমা ব্যবহার করা বৈধ, যদি প্রয়োজন হয়, সৌন্দর্যের অংশ হিসেবে নয়, সুরমা শুধু রাতে ব্যবহার করবে, দিনে মুছে ফেলবে। সুরমা ব্যতীত অন্যান্য বস্তু দ্বারা চোখের চিকিৎসা করাও বৈধ, যাতে সৌন্দর্য নেই।
তিন. সাজসজ্জার কাপড় পরিধান করা: বিধবা নারীর জন্য সাজসজ্জার কাপড় পরিধান করা হারাম। সাধারণ কাপড় পড়বে, এ সময় নির্দিষ্ট রঙের কাপড় পরিধান করার কোনো ভিত্তি নেই, সমাজে যার প্রচলন রয়েছে।
চার. অলঙ্কার: বিধবা নারীর জন্য সকল প্রকার অলঙ্কার পরিধান করা হারাম, এমন কি আঙ্কটি পর্যন্ত।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 3 =