যে সকল কারণে নামাজ জামাতে আদায় না করার অনুমতি আছে

জিজ্ঞাসা–৫৫৯: আসসালামু আলাইকুম। কোন কোন কারণে মসজিদে জামাতের সাথে নামাজ আদায় না করার অনুমতি আছে ?–নোমান।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. অধিকাংশ ফকিহর মতে যে পুরুষ জামাতের সঙ্গে নামায আদায় করতে সক্ষম তার জন্য জামাতের সঙ্গে নামায আদায় করা ওয়াজিব। এর অন্যতম দলিল হল, আল্লাহ তাআলার বাণী-

وَإِذَا كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلاَةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌ مِّنْهُم مَّعَكَ وَلْيَأْخُذُواْ أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُواْ فَلْيَكُونُواْ مِن وَرَآئِكُمْ وَلْتَأْتِ طَآئِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّواْ فَلْيُصَلُّواْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُواْ حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ

যখন আপনি তাদের মধ্যে থাকেন, অতঃপর নামাযে দাঁড়ান, তখন যেন একদল দাঁড়ায় আপনার সাথে এবং তারা যেন স্বীয় অস্ত্র সাথে নেয়। অতঃপর যখন তারা সেজদা সম্পন্ন করে, তখন আপনার কাছ থেকে যেন সরে যায় এবং অন্য দল যেন আসে, যারা নামায পড়েনি। অতঃপর তারা যেন আপনার সাথে নামায পড়ে এবং আত্মরক্ষার হাতিয়ার সাথে নেয়। (সূরা নিসা ১০২)

ইবন মুনযির রহ. বলেন,

ففي أمر الله بإقامة الجماعة في حال الخوف : دليل على أن ذلك في حال الأمن أوجب

(উক্ত আয়াতে) আল্লাহ তাআলা ভয়ের পরিস্থিতিতে জামাত কায়েমের নির্দেশ দিয়েছেন। এটা একথার প্রমাণ যে, এটি সাধারণ অবস্থায় তিনি ওয়াজিব করেছেন। (আলআওসাত ৪/১৩৫)

এজন্য বিনা উযরে মসজিদের জামাতে শরিক না হলে গুনাহ হয়। (এলাউস সুনান  ৪/১৬৬; আহসানুল ফাতাওয়া ৩/২৭১)

দুই. পক্ষান্তরে যদি উযর থাকে অথবা যদি সে মুসাফির হয় তাহলে তার জন্য জামাতে নামায না পড়ার অনুমতি আছে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ

তিনি ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর সংকট আরোপ করেন নি।। (সূরা হজ ৭৮)

ইবন কুদামা রহ. বলেন,

وَيُعْذَرُ فِي ترك الجماعة... الْخَائِفُ ; لِقَوْلِ النَّبِيِّ الْعُذْرُ : خَوْفٌ أَوْ مَرَضٌ. وَالْخَوْفُ , ثَلَاثَةُ أَنْوَاعٍ : خَوْفٌ عَلَى النَّفْسِ , وَخَوْفٌ عَلَى الْمَالِ , وَخَوْفٌ عَلَى الْأَهْلِ

আর জামাত ছেড়ে দেয়ার ব্যাপার ভীত ব্যক্তিকে মাযুর হিসবে গণ্য করা হবে।  কেননা রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘উযর হল, ভয় অথবা অসুস্থতা।’ আর ভয় তিন প্রকার-প্রাণের ভয়, সম্পদের ক্ষতির ভয় বা পরিবারের ক্ষতির ভয়। (আল মুগনী ১/৩৬৬)

সুতরাং অসুস্থতার কারণে, অনুরূপভাবে নিজের ক্ষতির ভয়, সম্পদের বা পরিবারের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে কিংবা অন্য যুক্তিসঙ্গত উযর থাকলে অথবা যদি মুসাফির হয় তাহলে মসজিদে জামাতে না গিয়ে বাসা-বাড়িতে নামায পড়ার অনুমতি আছে।

والله أعلم بالصواب
আরো পড়ুন-
কোমরে ব্যাথার কারণে চেয়ারে বসে নামায পড়া যাবে কি?
নামাযে অলসতার প্রতিকার
নামাযের ফিদিয়া
আমার স্বামী ভাল মানুষ; কিন্তু নামাজ পড়ে না; কী করব?
নামাজের জন্য উত্তম পোশাকের ব্যবহার
আযানের সময় মহিলাদের মাথায় কাপড় দেওয়া
বাজে চিন্তার কারণে নামাজ নষ্ট হয় কি?
নামাজের মধ্যে ঘড়ি দেখলে কী হয়?
নামাজে দৃষ্টি কোথায় রাখবে?
তাশাহুদের সময় আঙ্গুল নাড়াচাড়া করা যাবে কি?
ঘুমের কারণে দেরিতে ফজরের নামাজ পড়লে গুনাহ হবে কি?
চোখ বন্ধ করে নামাজ পড়া যাবে কি?
জীবনের কাযা নামাযগুলো কিভাবে আদায় করবেন?
মহিলারা সবখানে যেতে পারলে মসজিদে কেন পারবে না?
তাকবীরে উলার সময় কতটুকু?
ফাসেক ইমামের ব্যাপারে মসজিদ কমিটির করণীয় কী?
বিদআতী ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার হুকুম কী?
গর্ভবতী-মায়ের নামাজ এবং কিছু পরামর্শ
মহিলা ইমাম হয়ে জামাতে নামাজ
নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার উপায়

��ন্তব্য

  1. আসসালামুয়ালাইকুম।
    করনা ভাইরাস এর ভয়ে জামাতে নামাজ বাদ দেওয়া যাবে কি?

    • وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
      কেউ যদি মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার ভয় করে বা তার মাধ্যমে অপরের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে তিনি মসজিদে না গেলেও চলবে।
      ইবন কুদামা রহ. বলেন,

      وَيُعْذَرُ فِي ترك الجماعة… الْخَائِفُ ; لِقَوْلِ النَّبِيِّ ﷺ الْعُذْرُ : خَوْفٌ أَوْ مَرَضٌ. وَالْخَوْفُ , ثَلَاثَةُ أَنْوَاعٍ : خَوْفٌ عَلَى النَّفْسِ , وَخَوْفٌ عَلَى الْمَالِ , وَخَوْفٌ عَلَى الْأَهْلِ

      আর জামাত ছেড়ে দেয়ার ব্যাপার ভীত ব্যক্তিকে মাযুর হিসবে গণ্য করা হবে।  কেননা রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘উযর হল, ভয় অথবা অসুস্থতা।’ আর ভয় তিন প্রকার-প্রাণের ভয়, সম্পদের ক্ষতির ভয় বা পরিবারের ক্ষতির ভয়। (আল মুগনী ১/৩৬৬)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − three =