বিয়ে হচ্ছেনা; কী করব?

জিজ্ঞাসা–৩৩২: আমার বয়স ২৮ পার হয়ে গেছে। আমি সংসদ ভবনে ভাল একটি পোস্টে চাকুরী করি। আমার একাডেমিক রেজাল্ট অনেক ভাল। আমার বাবা গ্রামের একটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। কিছুদিন আগে অবসরে গেছেন। আমার ২ ভাই। বড় ভাই ব্যাংক এর অফিসার। ছোট ভাই ইন্টারমিডিয়েট পড়ে। সামাজিকভাবে আমাদের অবস্থান অনেক ভাল। আমি বোন একাই। এলাকায় আমাদের খুবি সুনাম। আমার বাবার পরিচিতি অনেক ভাল। সমস্যা হচ্ছে এত বয়স হয়ে যাওয়ার পরো বিয়ে হচ্ছে না। এমনকি বিয়ের কোন প্রস্তাব ও আসেনা। কেউ কেউ বলে শত্রুতা করে আমার বিয়ে হয়তো বন্ধ করে রাখছে। এখন আমার করনীয় কী। খুবই টেনশনে আছি আমি। –ইচ্ছাকৃতভাবে নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হয়নি।

জবাব:

এক. আমাদের সমাজের একটি বড় বিচ্যুতি হল, ক্যারিয়ার গঠনের ধোঁয়াশায় পড়ে যথাসময়ে বিয়ে না করা। পরবর্তীতে যা হয়, তাহল, পাত্র/পাত্রীর বয়স বেড়ে যায় এবং বিবাহ কঠিন হয়ে যায়। আর নিজেদের এই বিচ্যুতি থেকে জন্ম নেয় জাদু-টোনা-নির্ভর নানা ধরণের অন্ধ-বিশ্বাস। মনে রাখবেন, বিয়ে-শাদি অবশ্যই আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর জাদু আমাদের জীবনের ভাল-মন্দের আসল কার্যকারণ নয়, বরং আমাদের জীবনে সেটাই ঘটে যা আল্লাহ তাআলা আমাদের ভাগ্যে নির্ধারণ করে রেখেছেন। আল্লাহ বলেন, قُلْ لَنْ يُصِيْبَنَا إِلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। (তওবা ৫১)

সুতরাং আপনার বিয়ে কেউ বন্ধ করে রেখেছে-প্রথমে এই অমূলক ধারণা পরিহার করুন। দুরাবস্থা, দুর্ভাগ্যের নাগাল ও মন্দভাগ্য থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। রাসূলুল্লাহ বলেছেন,لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দোয়া ব্যতীত। (তিরমিযী ২১৩৯)

দুই. প্রিয় দীনি বোন, পাশাপাশি আপনাকে কিছু আমল বলে দিচ্ছি, ইনশা-আল্লাহ এর উসিলায়ও আপনার এই দুরাবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে।

  • নিম্নের দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ুন–

اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنْ جَهْدِالْبَلَاءِ وَدَرْكِ الشَّقَاءِ وَسُوْءِ الْقَضَاءِ و شَمَاتَةِ الْاَعْدَاءِ

অর্থাৎ, হে আল্লাহ, অবশ্যই আমি তোমার নিকট কঠিন দুরাবস্থা, দুর্ভাগ্যের নাগাল, মন্দভাগ্য এবং দুশমনের হাসি থেকে রক্ষা কামনা করছি। (বুখারি ৬৩৪৭)

اَللّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِيْ نُحُوْرِهِمْ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ 

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমরা তোমাকেই তাদের মুখোমুখী করছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি ।

যেহেতু আপনি আপনার সাথে কারো শত্রুতার  আশঙ্কা করছেন, তাই উক্ত দোয়াটি বেশি করে পড়ুন। আবু মুসা আল-আশআরী রাযি.থেকে বর্ণিত। নবী যখন কোন সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা করতেন তখন দোয়াটি বলতেন। (আবূদাউদ ১৫৩৭)

  • যথাসম্ভব সার্বক্ষণিক ইস্তেগফার করুন। কেননা রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِب

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। (আবূদাউদ ১৫২০)
  • কোনো কোনো আলেম বলেন, যেসব যুবক-যুবতীদের বিবাহের বয়স অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না, তাদের মধ্যে যুবকেরা ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি চেপে ধরে এবং যুবতীরা বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কব্জি চেপে ধরে প্রত্যহ ফজরের নামাজের পর সূর্যোদয়ের আগে ৪০ বার হিসাবে ৪০ দিন পর্যন্ত আল্লাহর গুণবাচক নাম ‘ইয়া ফাত্তাহু’ (يا فتّاح) -অর্থ হে উন্মুক্তকারী বা প্রস্তুতকারী-পড়লে দ্রত বিয়ে হয়।
  • কোনো কোনো আলেম বলেন, চল্লিশ দিন সূরা মুমতাহিনা তেলাওয়াত করলে দ্রত বিয়ে হয়।

তিন.  প্রিয় দীনি বোন, আমলের পাশাপাশি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে বৈধ পন্থায় পাত্রের সন্ধান ও চেষ্টা করুন। وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ‘‘আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।” (সূরা তালাক ৩)

রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﺣَﻖٌّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻮْﻧُﻬُﻢْ : ﺍﻟﻤُﺠَﺎﻫِﺪُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟﻤُﻜَﺎﺗَﺐُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻷَﺩَﺍﺀَ، ﻭَﺍﻟﻨَّﺎﻛِﺢُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﻌَﻔَﺎﻑَ

অর্থাৎ, তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ্ তায়ালার জন্য কর্তব্য হয়ে যায়। আল্লাহ্ তায়ালার রাস্তায় জিহাদকারী, চুক্তিবদ্ধ গোলাম যে তার মনিবকে চুক্তি অনুযায়ী সম্পদ আদায় করে মুক্ত হতে চায় এবং ওই বিবাহিত ব্যক্তি যে (বিবাহ করার মাধ্যমে) পবিত্র থাকতে চায়। (তিরমিযী ১৬৫৫, নাসায়ী ৩২১৮)

রপর  দীনদার ও চরিত্রবান পাত্র পেলে  তার প্রস্তাব নাকচ করা উচিত হবে না। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ ، إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ

তোমরা যে ছেলের দ্বীনাদারি ও চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পার সে যদি প্রস্তাব দেয় তাহলে তার কাছে বিয়ে দাও। যদি তা না কর তাহলে পৃথিবীতে মহা ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। (তিরমিযী ১০৮৪)

পরিশেষে দোয়া করি, আল্লাহ আপনার সকল পেরেশানি দূর করে দিন। আমীন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

��ন্তব্য

  1. উপরের দুয়াটি যদি স্পস্টভাবে দিতেন,তাহলে ভালো হতো।
    এখানকার লেখাটা পড়তে কষ্ট হচ্ছে এবং ভালো বুঝতে পারছি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × five =