জিজ্ঞাসা–১৩২৭: আমি যিনা করেছিলাম আমার প্রেমিকের সাথে। পরে ভুল বুঝতে পেরে তওবা করি এবং এরূপ ভুল না করার সিদ্ধান্ত নেই। পরে আমি যখন বিয়ে করব তখন যদি কোনো কারণে আমার স্বামী জেনে যায়, সংসার ভাঙ্গবার ভয়ে যদি আমি বিষয়টি অস্বীকার করি তা যায়েজ হবে কি?–ইচ্ছাকৃতভাবে নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হয় নি।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক. প্রিয় প্রশ্নকারী বোন, নিসন্দেহে ব্যভিচার একটি ভয়াবহ গুনাহ। তবে তাওবা করার পর যত বড় গুনাহই হোক না কেন; আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِينَ لا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آَخَرَ وَلا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلا بِالْحَقِّ وَلا يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا . يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا . إِلا مَنْ تَابَ وَآَمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا
আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে প্রাণকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কেয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে আর সে সেখানে লাঞ্ছিত হয়ে চিরবাস করবে। তবে তারা নয় যারা তাওবা করবে, ঈমান আনবে, আর সৎ কাজ করবে; আল্লাহ তাদের পাপ পরিবর্তন করে দিবেন উত্তম আমলের দ্বারা; আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আলফুরকান ৬৮-৭০)
সুতরাং মূল বিষয় হল, তাওবা করা। আর তাওবার মূল হল, লজ্জিত হওয়া। এমনকি সহিহ বুখারীর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে এসেছে, মাশায়েখগণ এও বলেছেন, يَكْفِي فِي التَّوْبَةِ تَحَقُّقُ النَّدَمِ লজ্জিত হওয়াটা পাওয়া গেলেই চলবে, তাওবা হয়ে যাবে। হাদিসেও আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, النَّدَمُ تَوْبَةٌ লজ্জিত হওয়াটাই তাওবা। (সহিহ ইবন হিব্বান ২/৩৭৯)
সুতরাং আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে তাওবা এবং তাওবা করেছেন; এটা বুঝানোর জন্য অধিকহারে ইস্তেফার করুন। ভবিষ্যতে আর এজাতীয় পাপকর্মে লিপ্ত হবেন না বলে দৃঢ় সংকল্প করুন। এই কাজে পুনরায় জড়িয়ে পড়া থেকে পরিপূর্ণ সতর্ক থাকুন। নেক কাজের প্রতি মনোযোগী হোন এবং তাওবা করার সময় আল্লাহ তাআলার রহমতের আশা রাখুন।
দুই. বান্দার উপর আল্লাহ তাআলার অন্যতম পরম অনুগ্রহ এই যে, তিনি বান্দার গুনাহগুলো গোপন রাখেন। সুতরাং বান্দার উচিত নয়, কারো কাছে গুনাহগুলো প্রকাশ করা। এজন্যই রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
اِجْتَنِبُوْا هَذِهِ الْقَاذُوْرَاتِ الَّتِيْ نَهَى اللهُ عَنْهَا، فَمَنْ أَلَمَّ بِهَا فَلْيَسْتَتِرْ بِسِتْرِ اللهِ، وَلْيَتُبْ إِلَى اللهِ، فَإِنَّهُ مَنْ يُبْدِ لَنَا صَفْحَتَهُ نُقِمْ عَلَيْهِ كِتَابَ اللهِ تَعَالَى
তোমরা ব্যভিচার থেকে দূরে থাকো, যা আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এরপরও যে ব্যক্তি শয়তানের ধোঁকায় পড়ে তা করে ফেলে সে যেন তা লুকিয়ে রাখে। যখন আল্লাহ তাআলা তা গোপনই রেখেছেন। তবে সে যেন এ জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করে নেয়। কারণ, যে ব্যক্তি তা আমাদের (তথা বিচারকের) নিকট প্রকাশ করে দিবে তার ওপর আমরা অবশ্যই আল্লাহ তাআলার বিধান প্রয়োগ করবোই। ( হাকিম ৪/২৭২)
উক্ত হাদিস এবং এজাতীয় আরো কিছু হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয়, স্বামী তার স্ত্রীকে কিংবা স্ত্রী তার স্বামীকে নিজেদের অতীত ব্যভিচার কিংবা অন্য কোনো গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করবে না; এমনকি জিজ্ঞেস করলেও নয়।
তিন. আর যদি স্বামী স্ত্রীকে কিংবা স্ত্রী স্বামীকে জিজ্ঞেস করে বসে তাহলে সরাসরি মিথ্যা বলা থেকে বাঁচার জন্য ইসলাম যে তিনটি ক্ষেত্রে ‘তাওরিয়া’ তথা কৌশলী-উত্তর দেয়ার অবকাশ দিয়েছে, তন্মধ্য থেকে একটি হল, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা ও মিল সৃষ্টি বা রক্ষা করার জন্য। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
لاَ يَحِلُّ الْكَذِبُ إِلاَّ فِي ثَلاَثٍ يُحَدِّثُ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ لِيُرْضِيَهَا وَالْكَذِبُ فِي الْحَرْبِ وَالْكَذِبُ لِيُصْلِحَ بَيْنَ النَّاسِ
তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত অসত্য বলা হালাল নয়–১। স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে যেয়ে কিছু বলা ২। যুদ্ধের প্রয়োজনে অসত্য বলা ৩। এবং পরস্পর সুসম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে কিছু অসত্য বলা। (তিরমিজী ১৯৪৫)
সুতরাং এক্ষেত্রে তারা পরস্পরের কাছে ‘তাওরিয়া’ তথা কৌশলী-উত্তর দিবে। যেমন, এভাবে উত্তর দিতে পারে যে, ‘আমার তো কারো সঙ্গে এরকম সম্পর্কই ছিল না।’ উক্ত বাক্য বলার সময় মনে মনে চিন্তা করবে যে, ‘বিয়ের পর থেকে সম্পর্ক ছিল না’। অথবা এভাবে উত্তর দিতে পারে যে, ‘আমি কক্ষনো ব্যভিচার করি নি’। আর মনে মনে উদ্দেশ্য নিবে যে, ‘আমি বিয়ের পর থেকে কক্ষনো ব্যভিচার করি নি’।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী