অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে বা প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা করা যাবে কি?

জিজ্ঞাসা–৫৪৬: অমুসলিমরা তাদের ধর্মীয় উৎসবে/ প্রতিষ্ঠানের জন্য সহোযোগিতা চাইলে করা যাবে কি?–মাজহারুল ইসলাম।

জবাব:

এক- পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হল, সাহায্য-সহযোগিতা হতে হবে শুধু সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির ক্ষেত্রে। গুনাহ ও জুলুমের ক্ষেত্রে কাউকে সহযোগিতা করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ

তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অন্যের সহযোগিতা করো, গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহায়তা করো না। (সূরা মায়েদা ২)

উক্ত মূলনীতির আলোকে অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে বা প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা করা জায়েয হবে না।

আল্লামা ইবন নুজাইম মিসরি রহ. বলেন,

( والإعطاء باسم النيروز والمهرجان لا يجوز ) أي الهدايا باسم هذين اليومين حرام بل كفر , وقال أبو حفص الكبير رحمه الله لو أن رجلا عبد الله خمسين سنة ثم جاء يوم النيروز , وأهدى لبعض المشركين بيضة ، يريد به تعظيم ذلك اليوم ، فقد كفر , وحبط عمله

নওরোজ ও মেলার নামে কিছু দেয়া নাজায়েয। অর্থাৎ এ দুই দিনের নামে প্রদত্ত হাদিয়া হারাম; বরং কুফর। আবুল আহওয়াছ আল-কাবির রহ. বলেন, যদি কোন ব্যক্তি পঞ্চাশ বছর আল্লাহর ইবাদত করার পর নওরোজের দিন এসে কতিপয় মুশরিককে কিছু উপহার দেয় এবং এ উপহারের মাধ্যমে এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে এবং তার সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে। (তাবইনুল হাকায়েক ৬/২২৮)

ফাতাওয়া শাবাকাতুল ইসলামিয়াতে (ফতওয়া নং ৪৭০১৬) এসেছে,

حكم مشاركة المسلم في بناء كنيسة يعمل أوتبرع غيرجائِزلأنه على الباطل

গির্জা বানানোর সময় কাজের মাধ্যমে কিংবা দানের মাধ্যমে শরিক হওয়া মুসলিমের জন্য জায়েয নয়। কেননা, এতে বাতিলের সহযোগিতা হয়।

দুই- অনেক সময় মুসলিমরা বিভিন্ন কারণে মন্দির ইত্যাদিতে সাহায্য করতে বাধ্য হয়। এরুপ পরিপ্রেক্ষিতে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছে কিংবা তার বিয়ে ভেঙ্গে গেছে মর্মে ফতওয়া দেয়া যাবে না। তবে কাজটি নিঃসন্দেহে অন্যায় ও ঈমানের দুর্বলতার আলামত। তাই কেউ করে ফেললে তাওবা করতে হবে। (ফাতাওয়া রাহিমিয়া ১/৬৮)

মুসলমানের উচিত তার ধর্ম নিয়ে গর্ববোধ করা। ধর্মীয় বিধানগুলো বাস্তবায়ন করা। লজ্জাবোধ করে অথবা সৌজন্য দেখাতে গিয়ে এক্ষেত্রে কোন শৈথিল্য না দেখানো। বরং আল্লাহকে লজ্জাবোধ করা অধিক যুক্তিযুক্ত।

والله أعلم بالصواب
আরো পড়ুন-
মুসলিম হওয়ার পর কুফরি যামানার ভাল কাজগুলোর সাওয়াব পাবে কিনা?
নওমুসলিম কতদিন পর্যন্ত নিজেকে ‘নওমুসলিম’ হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে?
বিধর্মীর ঘরে জন্ম নেয়া মানে কি আল্লাহ্‌র রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া?
চিরকাল জান্নাতে এবং চিরকাল জাহান্নামে বলতে কী বুঝানো হয়েছে?

অমুসলিমের সাথে লেন-দেন করলে ইবাদতের কোনো ক্ষতি হয় কি?
অমুসলিমের হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে কিনা?
অমুসলিমদের সেমিনারে অংশগ্রহণ করা যাবে কি?
অমুসলিম মারা গেলে ইন্নালিল্লাহি…পড়া যাবে কিনা?
অমুসলিম দেশে বসবাসকারীরা গরু-মুরগি বিসমিল্লাহ বলে খেতে পারবে কিনা?
অমুসলিম অবস্থায় মারা গেলে তার জন্য দোয়া করা যায় কিনা?
হিন্দু কাজের বুয়া রাখা যাবে কিনা?
হিন্দুকে সালাম দেয়া যাবে কি?হিন্দু বাড়িতে খানা খাওয়া এবং নামাজ আদায় করা যাবে কিনা?
অমুসলিম দুনিয়া ও আখেরাতে ভাল কাজের প্রতিদান পাবে কিনা?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − eleven =