কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান বা উদ্বোধন শুরু করা

জিজ্ঞাসা–১৬২৪: বিভিন্ন প্রোগ্রাম, অনুষ্ঠান কিংবা উদ্বোধন কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করার যে রেওয়াজ আছে, তা আসলে বৈধ কিনা? আমার কছে মনে হয় এটা বেদআতের পর্যায়ে পড়ে। হুজুরের মতামত জানালে খুশি হতাম।–আবির মাহমুদ। 

জবাব:

এক. বৈধ কোনো অনুষ্ঠান ও দ্বীনী মাহফিল কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা জায়েয এবং বরকতপূর্ণ কাজ। তা সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।

এক হাদীসে আছে, আবু সাঈদ খুদরী রাযি. বলেন,

أصحاب النبي ﷺ إذا جلسوا كان حديثهم – يعني الفقه – إلا أن يقرأ رجل سورة أو يأمر رجلا بقراءة سورة

রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাহাবীগণ যখন পরস্পর একত্রে বসতেন (এবং তারা ফিকহ ও দ্বীনী বিষয়াদি নিয়ে কথাবার্তা বলতেন) তখন তারা কথাবার্তা শুরুই করতেন না যতক্ষণ না তাদের মাঝে কেউ কোনো সূরা তিলাওয়াত করতেন, অথবা তাদের মাঝে কাউকে আদেশ করতেন কুরআনের কোনো সূরা পাঠ করার জন্য। (মুসতাদরাক হাকিম ৩২২ আততাবাকাতুল কুবরা, ইবনে সাআদ ২/৩৭৪ আলমাদখাল ইলাস সুনানিল কুবরা, বায়হাকী ৪১৯)

খতীব বাগদাদী রহ. ‘আলজামে লিআখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে’ কিতাবে হাদীস ইমলার মজলিসের আদব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, হাদীস ইমলা শুরু করার আগে উচিত হল, মজলিসের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা। কেননা, মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আমাদের নিকট বর্ণনা করেন … আবু নাযরা রাযি. বলেন,

كان أصحاب رسول الله ﷺ إذا اجتمعوا تذاكروا العلم وقرءوا سورة

রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাহাবীগণ পরস্পর যখন একত্রিত হতেন তখন তাঁরা ইলমের মুযাকারা করতেন। এবং কুরআনের কোনো সূরা তিলাওয়াত তরতেন। (আলজামে লিআখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে ২/৬৪)

হাফিয সামআনি রহ. ইবনে কাসীর রহ. ইমাম নববী রাহ. ও হাফিয সাখাবী রহ. প্রমূখ মুহাদ্দিসগণ থেকেও অনুরূপ বক্তব্য রয়েছে এবং তাঁরা এর সপক্ষে উক্ত হাদীসগুলো উল্লেখ করেছেন। (আদাবুল ইমলা ওয়াল ইসতেমলা, সামআনী ১/৪৮ আলবা-ইসুল হাসীস, ইবনে কাসীর ১/১৫৩ ফাতহুল মুগীস ৩/২৫৪ তাদরীবুর রাবী ২/৫৭৩)

আর সাহাবায়ে কেরামের আমলও শরীয়তের দলীল। যে ব্যপারে সাহাবায়ে কেরামের আমল প্রমাণিত আছে তা কখনো বিদআত হতে পারে না।

সুতরাং অনুষ্ঠান ও দ্বীনী মাহফিলের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা সম্পূর্ণ শরীয়ত সম্মত ও সালাফের আদর্শের অন্তর্ভুক্ত। এটিকে ভুল বা বিদআত বলা যাবে না।

দুই. কোনো বৈধ অনুষ্ঠান বা মাহফিলে কুরআন তিলাওয়াত করতে চাইলে তা অবশ্যই কুরআন মাজীদের আদব রক্ষা করেই করতে হবে। এবং নিম্নোক্ত বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

ক) মাইক পরীক্ষার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে না। এটা কুরআনের আদব পরিপন্থী।

খ) মজলিস এলোমেলো থাকলে মজলিস জমানোর উদ্দেশ্যে কেরাত পড়া হয়। এটাও ঠিক নয়।

গ) শ্রোতাগণ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে এবং তারা তিলাওয়াত মনোযোগ সহকারে শুনতে প্রস্তুত থাকে না। তখন তিলাওয়াত করা হয়। এতে মনোযোগসহ শোনা হয় না। তাই এটাও ঠিক নয়।

ঘ) যে অনুষ্ঠানে গান-বাদ্য হবে এ জাতীয় অনুষ্ঠান তিলাওয়াত দ্বারা শুরু করাও অন্যায়।

ঙ) যেসব অনুষ্ঠানে পর্দা পুশিদার ব্যবস্থা নেই কিংবা শরীয়ত গর্হিত বিভিন্ন জিনিস বা কর্মকা- বিদ্যমান সে সব অনুষ্ঠানে কুরআন তিলাওয়াত করাও ঠিক নয়। এতে কুরআন কারীমের অসম্মান হয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

(সৌজন্যে, মাসিক আল কাউসার, আগস্ট ২০১৫)

والله أعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন