কোন নামাযের পর কোন সূরা পড়তে হয় এবং ফজিলত কী?

জিজ্ঞাসা–৭৪৪: আসসালামু আলাইকুম। ফজরের পরে সূরা ইয়াসীন, যোহরের পর সূরা ফাতহ, আসরের পর সূরা নাবা, মাগরিবের পর সূরা ওয়াক্কিয়া, ঈশার পর সূরা মূলক ও সূরা আস-সেজদা তেলাওয়াত করার ফজিলত সম্পর্কে জানতে চাই। দয়া করে জানালে ভাল হয়।–Md. Samiul Islam

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. ফজরের পরে নির্দিষ্ট কোনো সূরা পাঠের কথা স্পষ্টভাবে কোনো হাদিসে নেই। তবে হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, 

مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ؛ تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّة

যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাতের সঙ্গে পড়ে। তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকির করে। তারপর দুই রাকাত নামায পড়ে। সেই ব্যক্তির একটি হজ ও একটি উমরার সাওয়াব লাভ হয়। পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ। (তিরমযি ৫৮৬)

আর কোরআন তেলাওয়াত সর্বোত্তম যিকির এবং সূরা ইয়াসিন কোরআনের রূহ। সুতরাং দিনের শুরুটা যদি সূরা ইয়াসিন দিয়ে করা হয় তাহলে তা অবশ্যই বরকতপূর্ণ হবে। এজন্য বিশিষ্ট তাবিঈ ইয়াহইয়া ইবন কাসীর রহ বলেন,

من قرأ ” يس ” إذا أصبح لم يزل في فرح حتى يمسي ، ومن قرأها إذا أمسى لم يزل في فرح حتى يصبح . قال : وأنبأنا مَن جرَّبَ ذلك

যে ব্যক্তি সকালে সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-স্বস্তিতে থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে। তিনি আরো বলেন, আমাকে এ বিষয়টি এমন এক ব্যক্তি বলেছেন, যিনি এর বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। (বর্ণনাকারী ইবন যুরাইস, ফাযায়েলুল কুরআন, বর্ণনা নং ২১৮ পৃষ্ঠা ১০১)

দুই. জোহরের পরেও নির্দিষ্ট কোনো সূরা পাঠের কথা হাদিসে নেই। তবে যেহেতু সূরা ফাতহ কোরআনের একটি ফজিলতময় সূরা, তাই এটি তেলাওয়াত করতে পারেন। এই সুরার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ওমর রাযি.-কে বলেছেন,

لَقَدْ أُنْزِلَتْ عَلَيَّ اللَّيْلَةَ سُورَةٌ لَهِيَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ ، ثُمَّ قَرَأَ :  إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا

আজ রাতে আমার উপর এমন একটি সূরা নাযিল হয়েছে, যা আমার কাছে সূর্যালোকিত সকল স্থান হতে উত্তম। এরপর রাসূলুল্লাহ পাঠ করলেন, إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।’ (বুখারি ৪১৭৭)

তিন. আসরের পরেও নির্দিষ্ট কোনো সূরা পাঠের কথা হাদিসে নেই। তবে সূরা নাবা’র ফজিলত সম্পর্কে একটি দুর্বল হাদিসে এসেছে,

مَنْ قَرَأَ سُورَةَ عَمَّ يَتَسَاءَلُونَ سَقَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ بَرْدَ الشَّرَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

যে ব্যক্তি সূরা নাবা পাঠ করবে আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন ঠাণ্ডা পানীয় দ্বারা তৃপ্ত করবেন। (তাফসিরে কাশশাফ ৬/৩০৩)

চার.  মাগরিবের পরে বা রাতে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ সম্পর্কে বিভিন্ন তাফসিরের কিতাবে অন্তিম রোগশয্যায় আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি.-এর শিক্ষাপ্রদ কথোপকথন এসেছে,  ইবন কাসীর ইবন আসাকিরের বরাত দিয়ে এই ঘটনা বর্ণনা করেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. যখন অন্তিম রোগশয্যায় শায়িত ছিলেন, তখন আমীরুল মু’মিনীন ওসমান রাযি. তাঁকে দেখতে যান৷ তখন তাঁদের মধ্যে শিক্ষাপ্রদ যে কথোপকথন হয় তা নিম্নরুপ:

— হযরত ওসমান: مَا تَشْتَكِي؟ আপনার অসুখটা কি?
—হযরত ইবনে মাসউদ: ذُنُوبِي আমার পাপসমূহই আমার অসুখ৷

— হযরত ওসমান: فَمَا تَشْتَهِي؟ আপনার বাসনা কি?
—হযরত ইবনে মাসউদ: رَحْمَةَ رَبِّي আমার পালনকর্তার রহমত কামনা করি৷

— হযরত ওসমান: أَلَا آمُرُ لَكَ بِطَبِيبٍ؟ আমি আপনার জন্যে কোন চিকিৎসক ডাকব কি?
—হযরত ইবনে মাসউদ: الطَّبِيبُ أَمْرَضَنِي চিকিৎসকই আমাকে রোগাক্রান্ত করেছেন৷

— হযরত ওসমান: أَلَا آمُرُ لَكَ بِعَطَاءٍ؟ আমি আপনার জন্যে সরকারী বায়তুল মাল থেকে কোন উপঢৌকন পাঠিয়ে দেব কি?
—হযরত ইবনে মাসউদ: لَا حَاجَةَ لِي فِيهِ এর কোনো প্রয়োজন নেই৷

— হযরত ওসমান:يَكُونُ لِبَنَاتِكَ مِنْ بَعْدِكَ؟ উপঢৌকন গ্রহণ করুন৷ তা আপনার পর আপনার কন্যাদের উপকারে আসবে৷
—হযরত ইবনে মাসউদ:  أَتَخْشَى عَلَى بَنَاتِي الْفَقْرَ؟ إِنِّي أَمَرْتُ بَنَاتِي يَقْرَأْنَ كُلَّ لَيْلَةٍ سُورَةَ الْوَاقِعَةِ আপনি চিন্তা করছেন যে, আমার কন্যারা দারিদ্র ও উপবাসে পতিত হবে৷ আমি তো আমার কন্যাদেরকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছি যে, তারা যেন প্রতিরাত্রে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করে৷

এরপর তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ -কে বলতে শুনেছি,

مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْوَاقِعَةِ كُلَّ لَيْلَةٍ ، لَمْ تُصِبْهُ فَاقَةٌ أَبَدًا

যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করবে, সে কখনও উপবাস করবে না৷ (তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন ৮/১০৬ সাফয়াতুত তাফাসীর ৩/৩০৪ ইবন কাসীর ৪/২৮১ তারিখে দামিশক ৩৬/৪৪৪ বাইহাকি ৪/১১৯

পাঁচ. ইশার পরে বা রাতে সূরা মুলক পাঠ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

 من قَرَأَ ( تبَارك الَّذِي بِيَدِهِ الْملك ) كل لَيْلَة مَنعه الله بهَا من عَذَاب الْقَبْر ، وَكُنَّا فِي عهد رَسُول الله نسميها الْمَانِعَة ، وَإِنَّهَا فِي كتاب الله سُورَة من قَرَأَ بهَا فِي كل لَيْلَة فقد أَكثر وأطاب

যে ব্যক্তি প্রতি রাতে তাবারাকাল্লাযী বি ইয়াদিহিল মুলকু.. পাঠ করবে, আল্লাহ্ তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন,) আমরা রাসূলুল্লাহ -এর যুগে সূরাটিকে মানেআ’ বা বাধাদানকারী সূরা বলে আখ্যা দিতাম। এটি আল্লাহ তাআলার কিতাবের মাঝে এমন একটি সূরা, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে পাঠ করবে সে অধিক ও উৎকৃষ্ট আমল করবে। (নাসাঈ ১০৫৪৭)

জাবির রাযি. বলেন, أَنَّ النَّبِيَّ كَانَ لَا يَنَامُ حَتَّى يَقْرَأَ الم تَنْزِيلُ ، وَتَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ المُلْكُ রাসূলুল্লাহ সূরা সাজদাহ ও সূরা মুলক তেলাওয়াত করা ব্যতিরেকে ঘুমাতেন না। (তিরমিযি ২৮৯২)

والله أعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve + thirteen =