তালাকের ক্ষমতা স্বামীর হাতে না স্ত্রীর হাতে?

জিজ্ঞাসা–১১৮৮: আমি জানি যে স্ত্রী যতবারই তালাক বলুক তালাক হয় না কথাটা কতটুকু সত্য? আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার এক পর্যায়ে বলি যে, আমাকে ভালো না লাগলে তালাক দাও, সে মুখে বলে যে, তালাক। তাতে কি তালাক সাব্যস্ত হবে? দয়া করে জানাবেন।  দেলাওয়ার।

জবাব:

এক. প্রয়োজনে ও যৌক্তিক কারণে স্ত্রী তালাক চাইতে পারে; দিতে পারে না। কেননা, ইসলামী শরিয়ত মতে, তালাক দেয়ার ক্ষমতা স্বামীর হাতে ন্যস্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন,

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاء بِمَا فَضَّلَ اللّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُواْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ

পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে তাদের জন্য ব্যয় করে থাকে। (সূরা নিসা ৩৪)

সুতরাং স্ত্রী শত বার তালাক দিলেও তা কার্যকর হবে না। কেননা, রাসুলুল্লাহ বলেছেন,

مَنِ اشْتَرَطَ شَرْطًا لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ فَلَيْسَ لَهُ، وَإِنْ شَرَطَ مِائَةَ مَرَّةٍ، شَرْطُ اللَّهِ أَحَقُّ وَأَوْثَقُ

যে এমন কোন শর্ত আরোপ করবে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তা তার জন্য প্রযোজ্য হবে না; যদিও সে শতবার শর্তারোপ করে। কেননা আল্লাহর দেওয়া শর্তই সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য। (বুখারী ২৩৯১)

দুই. তবে স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেয়, তাহলে স্ত্রী তালাক দিতে পারবে। এটাকে ‘তালাকে তাফবীয’ বলে। এটা স্ত্রীর নিজস্ব ক্ষমতা নয়; বরং এটা স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেয়া। আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্বামী ‘আমাকে ভালো না লাগলে তালাক দাও’ বাক্যের মাধ্যমে স্ত্রীকে তালাক প্রদানের এই ক্ষমতা দিয়েছে। স্ত্রী তা ‘তালাক’ শব্দ স্পষ্ট উচ্চারণের মাধ্যমে গ্রহণ করেছে। সুতরাং প্রশ্নপত্রের বক্তব্য অনুযায়ী স্ত্রীর উপর এক তালাক পতিত হয়েছে। এখন স্বামীর অধিকার আছে, স্ত্রীকে ইদ্দত তথা তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে রাজআত করা তথা স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে আনা। এতে কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে স্ত্রীকে ফিরিয়ে না আনা হয়, তাহলে স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে নতুন করে মোহর ধার্য করে বিবাহ করা আবশ্যক। নতুবা স্বামী স্ত্রী হিসেবে উভয়ের বসবাস করা জায়েজ নয়। (ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ-৯/৪৪১,২৪৫)

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلاَثَةَ قُرُوَءٍ وَلاَ يَحِلُّ لَهُنَّ أَن يَكْتُمْنَ مَا خَلَقَ اللّهُ فِي أَرْحَامِهِنَّ إِن كُنَّ يُؤْمِنَّ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَبُعُولَتُهُنَّ أَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِي ذَلِكَ إِنْ أَرَادُواْ إِصْلاَحًا

আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহর প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষণ করে। (সূরা বাকারা ২২৮)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 5 =