নিম্নস্বরের কেরাত-বিশিষ্ট নামাজে ইমামের পিছনে কিরাত পড়তে হবে?

জিজ্ঞাসা–৩০০: ইমামের পিছনে নামায পড়ার সময় ইমামের সাথে সাথে বা ইমাম যখন চুপি চুপি সুরা পড়েন তখন কি সুরা ফাতিহা পড়তে হবে? নফল নামাজের নিয়্যেত জানালে উপকৃত হতাম।–abdul aziz : [email protected]

জবাব:

এক. না। পড়তে হবে না। বরং চুপ থাকবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ   বলেছেন, مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ فَقِرَاءَتُهُ لَهُ قِرَاءَةٌ ‘যে ব্যক্তির ইমাম আছে তার ইমামের কেরাতই তার জন্য কেরাত বলে ধর্তব্য হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৮৫০)

ইমামের কেরাতই মুক্তাদির পক্ষে যথেষ্ট- এটি সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীন-যুগের ‘আমলে মুতাওয়াতির’ (যুগ পরম্পরায় চলে আসা ব্যাপক ও অনুসৃত কর্মধারা)-এর মাধ্যমে প্রমাণিত। এর বিশুদ্ধতা তাঁদের কাছে ছিল এক স্বীকৃত বিষয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, যায়েদ ইবনে ছাবিত, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ ও আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. প্রমুখের আমলও এ অনুযায়ীই ছিল। যদি রাসূলুল্লাহ মুক্তাদিকে ইমামের পেছনে কুরআন পড়ার নির্দেশ দিতেন, তাহলে তাঁদের সেটা জানা থাকত এবং তাঁরা সে অনুযায়ীই আমল করতেন আর মানুষকে শেখাতেন। অথচ তাঁদের আমল ছিল ইমামের পেছনে কুরআন না পড়া এবং তাঁরা মানুষকে এরই তালীম দিয়েছেন। (উমদাতুল ক্বারী ৬৭:৩ ফাতহুল মুলহিম ২০:২ ইলাউস সুনান ৪৩:৪ তাবারী ৩৭৮ : ১১ তাফসীর ইবনে কাসীর ১ :২৮১)

একারণে এই বিষয়ে হানাফী মাযহাবের ফাতওয়া হলো, যে কোন ধরনের নামাযে মুক্তাদির জন্য যে কোন কিরাত ওয়াজিব নয়। বরং মুক্তাদী চুপ থাকবে। কেউ যদি ইমামমের পিছনে কিরাত পড়ে তাহলে তার নামায আদায় হয়ে গেলেও মাকরূহের সহিত আদায় হবে।

হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ আলেম আল্লামা বুরহানুদ্দীন মরগনানী রহ. বলেন,ولا يقرأ المؤتم خلف الإمامঅর্থাৎ, মুক্তাদী ইমামের পিছনে কিরাত পড়বে না। (শরহ বেদায়াতুল মুবতাদী ১/৫৫)

মাউসূআতুল ফিকহিয়্যা-এর মধ্যে রয়েছে ,
وذهب الحنفية إلى أن المأموم لا يقرأ مطلقا خلف الإمام حتى في الصلاة السرية ، ويكره تحريما أن يقرأ خلف الإمام অর্থাৎ, এবং হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কিরাম এই দিকে গিয়েছেন যে, মুক্তাদী ইমামের পিছনে কোন অবস্থায় কিরাত পড়বে না। এমন কি নিরবে কিরাত পড়ার নামাযেও। এবং ইমামের পিছনে কিরাত পড়া মাকরূহে তাহরীমী। (আল মাউসূআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা ৩৩/৫৩)

দুই. আমলের শুদ্ধি ও গ্রহণযোগ্যতার অন্যতম শর্ত হচ্ছে নিয়ত। উমর রাযি. বলেছেন,لا عمل لمن لا نية له ‘যার নিয়ত নেই, তার কোন আমল নেই।’ (যাদুদ দায়িয়াহ : ৬) তবে নিয়ত মুখের আমল নয়; বরং নিয়ত বলা হয় মনের সংকল্পকে। (যার স্থল হল হৃদয় ও মস্তিষ্ক।) সুতরাং আপনি যে নফল নামায পড়তে যাচ্ছেন, তা মন-মস্তিষ্কে উপস্থিত করবেন। তারপর তাকবীরে তাহরীমা বলে ওই নামায শুরু করবেন। এতেই যথেষ্ট হয়ে যাবে। মুখে কোনও কিছু  বলতে হবে না। (রওযাতুত ত্বালেবীন ১/২২৪)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 5 =