পালিয়ে বিয়ে করার পর মেয়েটি স্বামীকে ছাড়তে পারবে কি?

জিজ্ঞাসা–১১৩৫: আচ্ছা! একটা মেয়ে একটা ছেলের সাথে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। আমি জানি, পালিয়ে বিয়ে করলে বিয়ে বাতিল। একথাটা মেয়ে টা বুঝতে পেরেছে সে ছেলেটিকে ছাড়তে চায়। তার অভিভাবকরা এ ব্যাপারে কিছু জানে না যে, তাদের মেয়ে বিয়ে করেছে আবার স্বামীকে ছেড়ে দিবে। এখন প্রশ্ন হল, সে কি তার স্বামীকে ছাড়তে পারবে, তার পরিবারকে না জানিয়ে?–ইব্রাহিম।

জবাব:

এক. হানাফি ফেকাহ মতে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক সমঝদার স্বাক্ষীর সামনে প্রাপ্তবয়স্ক পাত্র ও পাত্রীর একজন প্রস্তাব দিলে এবং অপরপক্ষ তা গ্রহণ করে নিলে বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়।

বিস্তারিত জানতে চাইলে পড়ুন জিজ্ঞাসা নং–২১৬ ও জিজ্ঞাসা নং–৫৫৫

তবে ইসলাম বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর মতামতকে ‘চূড়ান্ত মতামত’ হিসাবে সাব্যস্ত করলেও পাশাপাশি অভিভাবকের মতামতকেও সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। দেখুন, আল্লাহ তাআলা বিয়ে দেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وأَنْكِحوا الأيامى منكم

আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও। (সূরা নুর ৩২)

সুতরাং উক্ত পদ্ধতিতে বিয়ে করে থাকলে তাদের বিবাহ বৈধ হয়েছে। তবে অভিভাবককে গুরত্ব না দিয়ে তারা একটি মহা অন্যায় এবং অমানবিক ও অসামাজিক করেছে, সুতরাং আল্লাহ তাআলার নিকট এই গুনাহর জন্য তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে।

দুই. গোপন বিয়ে অমানবিক ও অসামাজিক হলেও যেহেতু তারা করেই ফেলেছে, এখন এই বন্ধন রক্ষা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এটি কোনো ছেলেখেলা নয় বরং এটি হলো, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক প্রদত্ত ও নির্দেশিত নারী-পুরুষের সারাজীবনের একটি চিরস্থায়ী পূত-পবিত্র বন্ধন। ইসলামে তালাকের সুযোগ রাখা হয়েছে খুবই অপছন্দনীয়ভাবে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্ক যখন তিক্ত পর্যায়ে চলে যায় এবং সমাধানের কোনো পথ থাকে না তখনই তালাক দেওয়া হয়ে থাকে। তারপরও ইসলামে তালাক একটি জঘন্যতম বৈধ কাজ। রাসূলুল্লাহ ﷺ তা চরমভাবে ঘৃণা করতেন। হাদীসে এসেছে,

أبغض الحلال عند الله الطلاق

‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল–তালাক।’ (আবু দাউদ ২১৭৭)

এজন্য যেমনিভাবে অতীব প্রয়োজন (যা শরীয়তে ওজর বলে গণ্য) ছাড়া স্বামীর জন্য  তালাক দেওয়া জায়েয নয়, অনুরূপভাবে স্ত্রীর জন্যও তালাক চাওয়া বৈধ নয়।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত বোন এখন যা করবে তাহল, অস্বীকার করে অন্যায়ের পর অন্যায় আর নয়; বরং মা-বাবার সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করবে। তাদের সঙ্গে অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ আচরণ করেছে, তা তাদের কাছে স্বীকার করে নিবে। তারপর যা কিছু করবে, পারিবারিকভাবেই করবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, এর প্রতিকার হিসাবে তালাকের মত দূর্ঘটনা ঘটলে তা হবে আরেকটি অন্যায়।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + fifteen =