বিদআত সম্পর্কে একটি প্রশ্নের উত্তর

জিজ্ঞাসা–৮২৭: আস-সালামু আলাইকুম, মুহতারাম, আমার এক পরিচিত ব্যক্তি মিলাদ কিয়াম করেন, এ বিষয়ে আমাকে তিনি দাওয়াত দেয়ার পর আমি বললাম, আলেমদের কাছে শুনেছি মিলাদ কিয়াম করা বিদ’আত তাই আমি আপনার দাওয়াত গ্রহণ করতে পারছিনা। তখন তিনি আমাকে বললেন, বিদ’আত কি আপনি জানেন? আমি বললাম দ্বীনের ভিতর নবতর কোনো বিষয় সংযোজন করা। তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ ঠিক আছে, কিন্তু বিদ’আত দুই প্রকার, উপকারী বিদ’আত এবং মন্দ বিদ’আত। যেমন রাসূলের যুগে কোরানের হরকত ছিলোনা এটা অনেক পরে যুক্ত হয়েছে। তাই কোরানে হরকত যুক্ত করা যেমন উপকারী বিদ’আত তেমনি মিলাদও উপকারী বিদ’আত। আর যদি মিলাদ গোনাহের কাজ হয় তবে হরকত দ্বারা কোরান পড়াও গোনাহের কাজ হবে। আমি তার এই কথার কোনো জবাব দিতে পারি নি। দয়া করে আমার মনের সংশয় দূর করুন– শাহাদাত হোসাইন। 

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله

এক. বিদআতের সংজ্ঞা ও বিদআত সম্পর্কিত হাদিসগুলো সামনে রাখলে এটা পরিষ্কার হয় যে, ‘দীনের জন্য নতুন বিষয়ের প্রচলন’ আর ‘দীনের মধ্যে নতুন বিষয়ের প্রচলন’ এ দু’য়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রথমটি বিদআত নয়। আর দ্বিতীয়টি বিদআত। প্রথমটির উদাহরণ হিসেবে আজকের যুগের মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আজানের জন্য মাইক ব্যবহার ইত্যাদি পেশ করা যেতে পারে। কোরআনে হরকত যুক্ত করাও এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এগুলো সব দীনের মধ্যে নয় ; বরং দীনের জন্য প্রচলন করা হয়েছে বিধায় এগুলো বিদআত নয়। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় প্রকারের উদাহরণ হিসেবে মিলাদ-কিয়াম করা, শবে মেরাজ উদযাপন করা ইত্যাদিকে পেশ করা যেতে পারে। এগুলো সব দীনের জন্য নয়; বরং দীনের মধ্যে নতুন আবিস্কার বিধায় এগুলো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌ

যে আমাদের দীনের মধ্যে (দীনের জন্য নয়) এমন কিছু প্রবর্তন করে যা এর অন্তর্ভূক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। (বুখারী ২৬৯৭; মুসলিম ১৭১৮)

উক্ত হাদিসে ‘যে আমাদের দীনের মধ্যে’ বাক্য দ্বারা বুঝানো হয়েছে, বিদআত দীনের মধ্যে হয়; দুনিয়াবি নব আবিষ্কৃত বিষয়ে বিদআত হয় না এবং বিদাআত ‘দীনের মধ্যে’ হয়; ‘দীনের জন্য’ নব আবিষ্কৃত বিষয় বিদআত হয় না।

দুই. এটা ঠিক যে, কতক আলেম বিদআতকে দুই ভাগে ভাগ করে থাকেন। বিদআতে হাসানাহ বা উত্তম বিদআত এবং বিদআতে সাইয়িয়াহ বা মন্দ বিদআত। প্রকৃত ব্যাপার হল, তাঁরা ‘বিদআতে হাসানাহ’ বলে যা কিছু বুঝিয়েছেন, তা শাব্দিক অর্থে বিদআত হলেও শরিয়তের পরিভাষায় বিদআত হয় না। অন্যথায় শরিয়তের পরিভাষায় সকল বিদআতই গোমরাহি। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِي النَّارِ
আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। (মুসলিম ১৫৩৫ নাসায়ী ১৫৬০ )

এজন্য আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. বলেন,

كُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ، وإن رآها الناسُ حسنةً

প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহি, যদিও মানুষ তা ‘হাসানাহ’ (উত্তম) মনে করে। (আল ইবানাহ ১/৩৩৯)

ইমাম মালিক রহ. বলেন,

مَن ابتدع في الإسلام بدعةً يراها حسنةً، فقد زعم أن محمداً صلى الله عليه وسلم خان الرسالة؛ لأن الله تعالى يقول: {الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ}، فما لم يكن يومئذٍ ديناً فلا يكون اليوم ديناً

যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো বিদআতের প্রচলন করে এবং এটাকে ‘হাসানাহ’ মনে করে সে যেন এই ধারণা করল যে, মুহাম্মদ রিসালাতের দায়িত্বে খেয়ানত করেছেন। কেননা, আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন, আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। সুতরাং সেই যুগে যা দীন হিসাবে পরিগণিত ছিল না, তা এই যুগেও দীন হিসাবে গণ্য হতে পারে না। (আল ই’তিসাম লিশ-শাতিবী ১/৬৪)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 5 =