ব্যাংকে চাকুরিরত ভাইয়ের টাকা দিয়ে ব্যবসা করা জায়েয হবে কি?

জিজ্ঞাসা–১৪২৫: আমার ভাই সুদভিত্তিক ব্যাংকে চাকরি করে, আমি একজন ছাত্র। একটা ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু মূলধন কম থাকায় সম্ভব হচ্ছে না। ভাই তার বেতনের কিছু টাকা আমাকে দিতে চাচ্ছে। এমন অবস্থায় ভাইয়ের বেতনের টাকা কি আমার জন্য বৈধ হবে?–রাকিবুল ইসলাম (ছদ্মনাম)। 

জবাব:

এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, ঈমানের পূর্ণতার জন্য অপরিহার্য শর্ত হল, সুদ ও যাবতীয় হারাম পন্থা পরিহার করে বৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জন করা। অতএব আপনার ভাইয়ের উচিত, সুদী ব্যংকে কাজ করার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করা এবং যত দ্রুত সম্ভব হালাল উপার্জনের পথ খুঁজে বের করা। যদি তিনি তাওবা করেন তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাকে মাফ করবেন। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَمَن جَاءهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىَ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই জাহান্নামে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাকারা ২৭৫)

দুই. বাকি রইল, আপনি আপনার ভাইয়ের উপার্জিত টাকা দ্বারা ব্যবসা করতে পারবেন কিনা? এর উত্তর হল, যদি এছাড়া আপনার অন্য কোনো উপায় না থাকে তাহলে পারবেন। তবে উত্তম হল, এই টাকা না ধরা। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা হল এই যে,

শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম মৌলিকভাবে দুই প্রকার। ১- মূল সম্পদটাই হারাম। যেমন, চুরি-ডাকাতি বা ছিনতাই করা করা জিনিস, সুদ ও ঘুষের মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকা ইত্যাদি। কেউ যদি সরাসরি সেই জিনিসটা উপহার দেয় বা তাহলে তা গ্রহণ করা জায়েয নেই।

২- মূল সম্পদটা হালাল কিন্তু উপার্জনের পদ্ধতিগত কারণে হারাম। যেমন, সুদী ব্যাংক, বীমা ইত্যাদিতে চাকরি করে প্রাপ্ত বেতন, এমন ব্যবসা যাতে হালাল-হারামের মিশ্রণ রয়েছে ইত্যাদি। এ প্রকারের হারাম সম্পর্কে কতক আলেম বলেন, তা কেবল উপার্জনকারীর জন্য হারাম। অন্যরা যদি তা শরিয়তসম্মত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে গ্রহণ করে তাহলে দ্বিতীয় পক্ষের জন্য হারাম হবে না। যেমন, হাদিয়া, দান, বেচাকেনা ইত্যাদির মাধ্যমের গ্রহণ করলে তা দ্বিতীয় পক্ষের জন্য হারাম হবে না। এর দলিল হল, রাসূল ﷺ ইহুদিদের দাওয়াত খেয়েছেন এবং তাদের হাদিয়া গ্রহণ করেছেন। (বুখারী: ২৬১৫-১৮, ‘মুশরিকদের নিকট থেকে হাদিয়া গ্রহণ’ অনুচ্ছেদ) বলা বাহুল্য, ইহুদিরা যে সুদের কারবার করত তা পবিত্র কোরআনেই উল্লেখ আছে।

উক্ত মূলনীতির আলোকে আমরা বলতে পারি, আপনার ভাই সুদি ব্যাংকে চাকরি করার কারণে তিনি অবশ্যই গুনাহগার হচ্ছেন। কিন্তু তাঁর উপার্জিত টাকা আপনাকে দিলে আপনার জন্য তা হারাম হচ্ছে না।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. হতে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে,

أنه سئل عمن له جار يأكل الربا ، ويدعوه إلى طعامه؟ فقال : أجيبوه ؛ فإنما المهنأ لكم ، والوزر عليه

তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, সুদ খায় এমন প্রতিবেশী যদি দাওয়াত দিলে তাতে অংশ গ্রহণ করা যাবে কি না? তিনি বলেন, দাওয়াতে অংশ গ্রহণ কর। এটা তোমাদের জন্য স্বাচ্ছন্দে গ্রহণীয় জিনিস। গুনাহ তার উপর বর্তাবে। (জামেউল উলুম ওয়াল হেকাম ৭১)

والله أعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − seven =