মসজিদে নববীতে চল্লিশ ওয়াক্ত নামায জরুরি মনে করা

জিজ্ঞাসা–৪৪৩: আসসালামু আলাইকুম। মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত নামায আদায় করলে রাসুল (সাঃ) এর শাফায়াত লাভ হবে বলে যা প্রচলিত আছে তা কি হাদিস সম্মত? দয়া করে জানাবেন।–Mohammad Tafsir Ahmed

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক- প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, মসজিদে নববীতে চল্লিশ ওয়াক্ত নামায আদায় করলে রাসূলুল্লাহ এর শাফায়াত লাভ হবে মর্মে কোন হাদিস নেই। এ প্রসঙ্গে মুসনাদে আহমদ (১২১৭৩) ও তবারানিতে (৫৪৪) একটি দুর্বল রেওয়ায়েত আছে। তা হলো এই-

 مَنْ صَلَّى فِي مَسْجِدِي أَرْبَعِينَ صَلاةً لا يَفُوتُهُ صَلاةٌ كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَةٌ مِنْ النَّارِ ، وَنَجَاةٌ مِنْ الْعَذَابِ ، وَبَرِئَ مِنْ النِّفَاقِ

‘কেউ যদি আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) ধারাবাহিকভাবে চল্লিশ নামাজ আদায় করে তাহলে সে জাহান্নামের আজাব ও নেফাক থেকে মুক্তি পাবে।’

এই রেওয়ায়েতের কারণে লোকেরা সেখানে আট দিন অবস্থান করা এবং চল্লিশ ওয়াক্ত নামায আদায় করাকে জরুরি মনে করে নিয়েছে। অথচ সেখানে অবস্থানের জন্য শরীয়তের পক্ষ থেকে কোনো মেয়াদ নির্ধারিত নেই। অর্থাৎ এটা অপরিহার্য নয় যে, সেখানে কমপক্ষে আট দিন থাকতে হবে এবং চল্লিশ ওয়াক্ত নামায আদায় করতে হবে। কেননা, প্রায় সকল মুহাদ্দিস বলেন, নুবাইত ইবন উমর নামক এক অজ্ঞাত রাবী’র কারণে হাদিসটি সনদের বিচারে দুর্বল। আর দুর্বল রেওয়ায়েত দ্বারা শরিয়তের কোনো বিধান প্রমাণ হয় না এবং কোনো মেয়াদ বা পরিমাণ নির্ধারিত হয় না।

উপরন্তু উক্ত হাদিসের প্রসিদ্ধ ও বিশুদ্ধ মতন (মূল বক্তব্য) তিরমিজিত আছে। সেখানে মসজিদে নববীর কথা নেই এবং চল্লিশ ওয়াক্তের কথা নেই। বরং সেখানে আছে-রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الأُولَى كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ بَرَاءَةٌ مِنْ النَّارِ وَبَرَاءَةٌ مِنْ النِّفَاقِ

যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য চল্লিশ দিন জামাতে তাকবিরে উলার সঙ্গে নামাজ আদায় করে তার জন্য দু’টি পরোয়ানা লেখা হয়। জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরওয়ানা ও নেফাক থেকে মুক্তির পরওয়ানা। (জামে তিরমিজি ২৪১)

এর দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায়, উক্ত ফজিলত কেবল মসজিদে নববীর জন্য নয় এবং চল্লিশ ওয়াক্তের জন্য নয় ;বরং যে কোনো মসজিদে চল্লিশ দিন জামাতে তাকবিরে উলার সঙ্গে শামিল হওয়া দ্বারা হাসিল হতে পারে।

দুই- মসজিদে নববীতে নামায আদায় সংক্রান্ত সহিহ হাদিসও আছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

صَلَاةٌ فِي مَسْجِدِي أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَام

‘আমার মসজিদে একটি নামায মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার নামায অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’(আহমাদ ১৪৬৯৪, ১৫২৭১, ইবনে মাজাহ ১৪০৬)

সুতরাং প্রকৃত করণীয় হচ্ছে, হারামাইনে (মক্কা-মদিনা) যতদিন থাকার সুযোগ হয় চেষ্টা করবে যেন মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা যায়। এজন্য সহজভাবে সেখানে আট দিন থাকার সুযোগ হয়ে গেলে ভালো, কিন্তু একে জরুরি মনে করা কিংবা আট দিন থাকতে না পারলে নিজে কষ্ট পাওয়া এবং অন্যকে কষ্ট দেয়া উচিত হবে না।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

১ টি মন্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × two =