মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিলে ওই বিয়ে বৈধ হবে কি?

জিজ্ঞাসা–১২০১: স্ত্রী যদি বলে আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে তাহলে কি বিয়ে বৈধ হবে?–নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

জবাব:

এক. বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলে কিংবা মেয়ের সম্মতি অপরিহার্য। ইসলামের দৃষ্টিতে জোর করে বিয়ে দেয়া অভিভাবকের জন্য নাজায়েজ এবং আল্লাহর নাফরমানির শামিল।। কেননা, এর কারণে দাম্পত্যজীবনের মূল নিয়ামক শক্তি প্রেম-ভালোবাসা ও পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্প্রীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আল্লাহর কাছে পানাহ চাই, অনেক সময় এই দাম্পত্য-কলহ উত্যুঙ্গ আকার ধারণ করে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটে যায়। এজন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

لاَ تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتَّى تُسْتَأْذَنَ وَلاَ الثَّيِّبُ حَتَّى تُسْتَأْمَرَ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ إِذْنُهَا قَالَ إِذَا سَكَتَتْ

কুমারী নারী বিয়ে দেয়া যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অনুমতি গ্রহণ করা হবে। আর বিধবা নারী বিয়ে দেয়া যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার মত গ্রহণ করা হবে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! তার অনুমতি কেমন করে? তিনি বললেন, যখন সে নীরব থাকে। (বুখারী ৬৪৯৭)

তবে বাবা কিংবা লিগ্যাল অভিভাবক যদি তাদের ছেলে কিংবা মেয়ের জন্য এমন সম্বন্ধ ঠিক করে যে, যে ধার্মিক সৎ ও যোগ্য, তাহলে ছেলে কিংবা মেয়ের জন্য অভিভাবকের আনুগত্য করা ওয়াজিব। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ ، إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ

তোমরা যার দ্বীনাদারি ও চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পার সে যদি প্রস্তাব দেয় তাহলে তার কাছে বিয়ে দাও। যদি তা না কর তাহলে পৃথিবীতে মহা ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। (জামে’ তিরমিযী ১০৮৪)

দুই. জোর করে বিয়ে দেয়া যদিও একটি অনৈতিক কাজ, তবে কুমারী মেয়ের সম্মতি থাকলেই (কুমারী নারীর ক্ষেত্রে নীরবতাই সম্মতি) জোরপূর্বক হলেও বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। (রদ্দুল মুহতার ৪/৮৭ বাদায়ে’ ২/৬০২) কেননা, হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাযি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

ثَلاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ : النِّكَاحُ ، وَالطَّلاقُ ، وَالرَّجْعَةُ

তিনটি বিষয় এমন রয়েছে যা গোস্বায় হোক বা হাসি ঠাট্টায় হোক সর্বাবস্থায় কার্যকরী হয়ে থাকে। বিবাহ, তালাক ও রজয়াত। (আবু দাউদ ২১৯৪ তিরমিযি ১১৮৪)

তবে এক্ষেত্রে বিয়ে সম্পাদিত হওয়ার পর মেয়েটির অধিকার থাকে পরবর্তীতে বিয়ে রাখা অথবা ভঙ্গ করার। আর প্রশ্নেল্লেখিত মেয়েটি সংসার শুরু করার মাধ্যমে তার এই অধিকার সে প্রয়োগ করেনি। সুতরাং এখন সে যদি বলে, ‘আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে’ তাহলে তার এই কথার কোনো মূল্য এখন আর নেই।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × four =