যে যুবক নিজের প্রেমিকাকে ভুলতে পারছে না; তার প্রতি পরামর্শ

জিজ্ঞাসা–১৩১৪: আসসালামু আলাইকুম, শায়েখ, আশা করি, আল্লাহর রহমতে সুস্থ এবং ভালো আছেন। প্রশ্ন: আমার সাথে একজন মেয়ে ক্লাশমেটের সাথে অনেক কথা হতো। সে ও আমি একই কলেজের একই বিভাগের, প্রায় ১ বছরের মত ওর সাথে কথা হয়েছিল, কিন্তু আমাদের কোনো রিলেশন ছিল না। আমি ঐ মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেই। কিন্তু সে প্রত্যাখান করে। কয়েকদিন পর সে আমাকে বন্ধু হওয়ার প্রস্তাব করে। আমি তা প্রত্যাখান করি। এর কয়েকদিন পর আমি আমার ফেসবুক মেয়েদের লিষ্ট ব্লক করি এবং সিদ্ধান্ত নেই আর কখনো গাইরে মাহরাম মেয়েদের সাথে কথা বলবো না এবং আমার আইডিও ডিলেট করে দেই। আজ প্রায় এক বছর হয়ে গেছে। আমি আজও পর্যন্ত ওকে ভুলতে পারতছি না। আজ খুব কষ্ট লাগছে এবং কান্না করছি। আল্লাহর কাছে চাইতেছি, ওকে যেন পেয়ে যাই। প্রতিদিন পাচঁ ওয়াক্ত নামাযে এবং তাহাজ্জুদ নামাযে প্রায় সময় ওকে আল্লাহর কাছে স্ত্রী হিসেবে চাই। কিন্তু মাঝে মাঝে ওকে স্ত্রী হিসেবে চাইতে ইচ্ছা করে না। আরো ভালো দ্বীনদার মেয়েকে চাইতে ইচ্ছা করে। শায়েখ, এখন আমার মনের মধ্যে কষ্টটা কিভাবে দূর করতে পারি এবং কিভাবে ওকে ভুলে থাকতে পারি? শায়েখ, অন্য কোনো মেয়েকে বিবাহ করলে ওকে ভুলে থাকতে পারবো এবং আমার মনের কষ্টটা থেকে মুক্ত হতে পারবো?–Adnan

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

প্রেম মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে অনেক দূরে ঠেলে দেয়। প্রেমিকার ভাবনা তাকে দিন দিন আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করে দেয়। ইতালির পিজা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডোনাটেলা মারাজ্জিতি ২০ জন সদ্য প্রেমে পড়া যুগলের ওপর একটি গবেষণা চালান। গবেষণায় তিনি দেখতে চেয়েছেন যে সারাক্ষণ ভালোবাসার মানুষটির কথা ভাবার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কেমন হতে পারে। গবেষণায় ডোনাটেলা মারাজ্জিতি ছেলে-মেয়েদের রক্ত পরীক্ষা করে দেখেছেন, সদ্য প্রেমে পড়া তরুণ-তরুণীদের ও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির রক্তের সেরোটোনিনের পরিমাণ একই মাত্রায় রয়েছে। (সূত্র : বাংলানিউজ২৪)

এজন্যই রাসূল   বলেন,

وَالْقَلْبُ يَهْوِىْ وَيَتَمَنَّى وَيُصَدِّقُ ذَالِكَ الْفَرْجُ اَوْ يُكَذِّبُه

আর অন্তরের ব্যভিচার হল কামনা-বাসনা আর গুপ্তাঙ্গঁ তা সত্য অথবা মিথ্যায় পরিণত করে। (সহীহ মুসলিম ২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ ৮৯৩২)

প্রিয় ভাই, সুতরাং আপনার প্রতি আমাদের পরামর্শ হল–

১. উক্ত চিন্তা থেকে তাওবা করুন এবং সাহসিকতার সঙ্গে মনের বিরোধিতা করুন। আল্লাহ তো বলেছেন,

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ
যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন। (সুরা আনকাবুত ৬৯)

২. নির্দিষ্ট কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে কামনা না করে আল্লাহর কাছে উত্তমটা কামনা করুন। আল্লাহর পক্ষে আপনার ধারণা থেকেও উত্তম জীবনসঙ্গী দেয়া কোন বিষয়‌ই না।

কেননা, অনেক সময় এমন হয়, আজ যে জিনিস পাওয়ার জন্য আমরা উদগ্রীব থাকি, দু’ দিন পরই তা পেয়েছি বলে উৎকণ্ঠিত হই। আবার আজ যা থেকে দূরে সরে থাকার ব্যাপারে চেষ্টিত থাকি, কয়েক দিন পর তা পেয়েছি বলে আনন্দিত হই। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। (সূরা বাকারা ২১৬)

৩. প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ অথবা এই আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবেন- هُوَ مَعَكُمْ اَيْنَمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।’

এভাবে নিয়মিত কিছুদিন করতে পারলে -ইনশা আল্লাহ- ধীরে ধীরে আল্লাহর সান্নিধ্যের সার্বক্ষণিক অনুভূতি অন্তরে বসে যাবে এবং বাজে চিন্তা থেকে বের হওয়া সহজ হয়ে যাবে।

৪. এরপরেও যদি উক্ত মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে পেতে চান তাহলে এভাবে দোয়া করুন যে, ‘হে আল্লাহ! যদি সে আমার জন্য কল্যাণকর হয় তাহলে তাকে আমার জন্য জীবনসঙ্গী হিসেবে কবুল করুন। ইবনুল জাওযী রহ. বলেন,
আল্লাহ তাআলার কাছে কোন কিছু নির্দিষ্ট করে চাওয়া থেকে বিরত থাকবে। তবে (কোন কিছু নির্দিষ্ট করে চাওয়ার) সময় কল্যাণের দোয়া যুক্ত থাকলে অসুবিধা নেই। কেননা, অনেক সময় অনেক দুনিয়াবি কাম্য বস্তু অর্জন ভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ হয়। (চায়দুল খাতির ৩৫২)

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, আপনি যদি এভাবে আমাদের পরামর্শগুলো মেনে ধৈর্য্য ধারণ করে চলতে পারেন তাহলে নিশ্চিত থাকেন যে, আল্লাহ আপনাকে এমনভাবে পুষিয়ে দিবেন; যার কল্পনাও বান্দা করতে সক্ষম নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ

‘যারা ধৈর্য্য ধারণকারী, তারাই নিজেদের পুরস্কার পায় অগণিত।’ (সূরা যুমার ১০)

নিশ্চয় আল্লাহ তাওফিকদাতা।

والله اعلم بالصواب