রোজা কিভাবে রাখতে হয়?

জিজ্ঞাসা–১৭৮৯: রোজা রাখার নিয়ম কী?–আব্দুর রাহমান।

জবাব: রোজার আরবী হল, ‘সিয়াম’ বা ‘সাউম’ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো- বিরত থাকা। তা যেকোনো কাজ থেকে হতে পারে। যথা- খাওয়া, পান করা, কথা বলা ও চলা ইত্যাদি।

তবে শরিয়তের পরিভাষায় ‘সিয়াম’ বা ‘সাউম’ কিংবা [আমাদের দেশের প্রসিদ্ধ ভাষা মতে] ‘রোজা’ বলা হয়, ‘আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে ফজরের সময়ের শুরু থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া, পান করা এবং স্ত্রী-সহবাস ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা।

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, ইসলামের অপরাপর ইবাদতের মত রোজা পালনেরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বিধি-বিধান রয়েছে। সেগুলো ইসলামী শরিয়তের অংশ ও মাসয়ালা আকারে বর্ণিত রয়েছে। যেমন–

রোজার নিয়ত:

নিয়ত অর্থ অন্তরের ইচ্ছা, উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা, সংকল্প গ্রহণ করা। দ্বিধাহীন চিত্তে নিয়ত করতে হয়। দোদুল্যমানতার মাধ্যমে সহিহ-শুদ্ধ নিয়ত হয় না। নিয়ত মনে মনে করা যায়। নিয়তের সময় এ সংকল্প করতে হয় যে, আমি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামীকাল রোজা রাখছি। মুখে কাউকে শুনিয়ে শুনিয়ে নিয়ত করার দরকার নেই। নিয়ত নিজে নিজে স্পষ্টভাবে ও দৃঢ়তার সঙ্গে করলেই হবে। হাদিস শরিফে আছে:

إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ

মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। (সহীহ বুখারী ০১)

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন,

من خطر بقلبه أنه صائم غداً فقد نوى

যে ব্যক্তির অন্তরে উদিত হয়েছে যে, সে আগামীকাল রোযাদার সেই নিয়ত করেছে। (আল-ইখতিয়ারাত পৃ ১৯১)

রোজার নিয়ত রাতে করাই উত্তম:

রোজার নিয়ত রোজা শুরুর আগেই করার দরকার। রমজানের প্রতিদিনই রোজার নিয়ত করতে হবে। সাবধানতা স্বরূপ রাতেই আগত দিনের রোজা সম্পর্কে মনে মনে নিয়ত করে রাখাই উত্তম। কারণ হাদিস শরিফে এ সম্পর্কে ইঙ্গিত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَنْ لَمْ يُجْمِعْ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلا صِيَامَ لَهُ

যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজার নিয়ত পাকাপোক্ত করে নি, তার রোজা নেই। (তিরমিযী ৭৩০)

তবে, রাতে নিয়ত করতে না পারলে দিনে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিয়ত করলেও রোজা হয়ে যাবে। আর রাত্রে নিয়ত করলেও সুবেহ সাদেক বা ফজরের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী মেলামেশার অবকাশ থাকে। এতে নিয়তের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَائِكُمْ

রমজানের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ হালাল করা হয়েছে। (সুরা বাকারা ১৮৭)

সাহরি খাওয়া:

রোজার উদ্দেশ্যে সাহরি খাওয়া সুন্নত। প্রয়োজনে এক চুমুক পানি ও সামান্য কিছু খাবার গ্রহণ করলেও সাহরি খাওয়ার সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময় সাহরি খাওয়া মুস্তাহাব। যাতে রোজা রাখা অধিকতর সহজ হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

تَسَحَّرُوا؛ فإن في السَّحُورِ بَركة

তোমরা সাহরি খাও। কেননা সাহরিতে বরকত রয়েছে। (সহীহ বুখারী ১৯২৩)

ইফতার খাওয়া:

রোজার সমাপ্তি হয় ইফতার করার মাধ্যমে। বিলম্ব না করে সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা এবং খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব। হাদিস শরিফে আছে, আনাস রাযি. বলেন,

كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يُفْطِرُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ عَلَى رُطَبَاتٍ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ رُطَبَاتٌ فَتُمَيْرَاتٌ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تُمَيْرَاتٌ حَسَا حَسَوَاتٍ مِنْ مَاءٍ

নবী ﷺ নামাযের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে। (তিরমিযী ৬৩২)

والله أعلم بالصواب