শর্ট ডিভোর্সি দীনদার মেয়েকে বিয়ে করার পর বাবা-মা তাকে তালাক দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছে; সন্তানের করণীয় কী?

জিজ্ঞাসা–৯০১: আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ! মুহতারাম! আমার বয়স ২৫+। পারিবারিকভাবে বিয়ের জন্য মেয়ে খোঁজা হচ্ছে। আমাকে মেয়ে খোঁজার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। বেশ কয়েক মাস পূর্বে লোক-মারফতে একজন মেয়ের সন্ধান পাই। মেয়ের বয়স ২০+, ‘শর্ট ডিভোর্সি; তবে মেয়ে দীনদারিতে অতুলনীয়া। খোঁজ-খবর নিয়ে, সেটা যাচাইও করেছিলাম। দীনদারির ক্ষেত্রে নবিজি যেমনটি বলেছেন, ঠিক তেমনই। তাই বিয়ের উদ্দেশ্যে আগ্রহভরে আমি একাই মেয়েকে দেখার জন্য প্রস্তাব পাঠাই। মেয়ের পরিবার রাজি হয়। দেখা-সাক্ষাতের পরে আমার খুব পছন্দ হয় মেয়েকে। মেয়েসহ তার পরিবারও আমাকে পছন্দ করে। বিয়ের জন্য মেয়ের পরিবার সম্মতিও জানান। এদিকে আমার পরিবারে কিছু ঝামেলা থাকায়, আমার পরিবারকে না জানিয়ে মেয়েকে বিয়ে করি– যাতে সম্পর্কটা অটুট থাকে। এদিকে মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে যেহেতু কোনো সমস্যা নেই, তাই আমারও কোনো চিন্তা হয় নি। মাঝে আমরা দেখা-সাক্ষাত এবং একান্তে মিলিত হই অনেকবার। এবং আমি স্ত্রী’র অনুমতিক্রমে ‘আজল’ করি। যেহেতু তাকে এখনো আমাদের পারিবারিকভাবে উঠিয়ে আনতে পারি নি।পরবর্তীতে বেশ কয়েক মাস পরে আমার পারিবারিক সমস্যাগুলো দূর হলে, আমার পরিবারের প্রধান অভিভাবক আমার বাবাকে সব জানাই খুব আকুতি-মিনতি করে। অনেককিছুই বলে বলে বুঝানোর জন্য যথার্থ চেষ্টাও করি। কিন্তু মেয়ে ‘শর্ট ডিভোর্সি’ বলে, আমার বাবা কোনোভাবেই রাজি হচ্ছেন না। এতে করে তাদের নাকি কথা শুনতে হবে, সম্মানও নষ্ট হবে। বাবা আমার কাছে খুব মিনতি করে, পায়ে ধরেছেন– যেন আমি মেয়েকে ছেড়ে দিই এবং বাবার পছন্দসই কুমারী মেয়েকে বিয়ে করি।এদিকে আমার স্ত্রীকে আমি যেমন ছাড়তে রাজি নই; তেমনই আমার স্ত্রী আমাকে ছাড়তে রাজি নয়। প্রয়োজনে সম্মান ঠিক রাখার জন্য আমার স্ত্রী এতেও রাজি হয়েছে যে, ‘কেউ কাউকে ছাড়া যাবে না। প্রয়োজনে তাকে তুলে আনব না। বাবার পছন্দের মেয়েকেও বিয়ে করব। না হয় সব ছেড়ে তার কাছে চলে যাব।’মেয়ের পরিবার আমাকে খুব পছন্দও করেন। আমার ইচ্ছে হয়, বাবা-মাকে ছেড়ে চলে যাই, বা আত্মহত্যা করি। মোটকথা, খুব কষ্টে আছি আমরা। আশা করি, পুরো বিষয়টা আপনি বুঝতে পেরেছেন। মুহতারাম!এমন নাজুক অবস্থায় আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে পরামর্শ দেওয়ার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি। না হয় বিপদে পড়ে যাব (আল্লাহ না করুন)। মহান আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আপনার বিনিময় আল্লাহর কাছে।— অয়ন।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. প্রিয় দীনি ভাই, সন্তানের উপর বাবা-মায়ের পর্যাপ্ত অধিকার ইসলামে অবশ্যই স্বীকৃত। যার কারণে তাঁদের অনুগত থাকা সন্তানের উপর ওয়াজিব। তবে তাঁদের বাধ্য থাকার বিষয়টি কেবল বৈধ কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। অনুরূপভাবে বাবা-মা যদি এমন কাজ করতে বলেন যা সন্তানের পক্ষে অসম্ভব কিংবা সম্ভব তবে জীবনের ঝুঁকি আছে তাহলে সে ক্ষেত্রে তাঁদের প্রতি বাধ্য থাকা জরুরি নয়। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, لا ضرر ولا ضرار ক্ষতি ও ক্ষতি সাধনের কোন অনুমতি নেই। (সুনানে দারাকুতনী ৩০৭৯)

আর আপনার কথা থেকে বুঝা যাচ্ছে, আপনি ও আপনার স্ত্রী পরস্পরকে এতটাই ভালোবাসেন যে, একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকা আপনাদের জন্য নিদারুণ কষ্টকর হবে। উপরন্তু আপনার স্ত্রীর দীনদারিতে আপনি যথেষ্ট সন্তুষ্ট। কিন্তু আপনার বাবা আপনার উপর চাপ প্রয়োগ করছেন, তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। সুতরাং আপনার কর্তব্য হল, আপনার বাবাকে যে কোনোভাবে বুঝিয়ে নেয়া। এক্ষেত্রে আপনার বাবার বিশ্বস্ত কিংবা আপনাদের পরিবারে প্রভাব রাখেন এমন তৃতীয় কোনো ব্যক্তির সহযোগিতা নিতে পারেন।

কেননা, ডিভোর্সি হওয়া এটা এমন কোনো দোষ নয় যে, যার কারণে তাকে তালাক দেয়া যেতে পারে। বিশেষত আপনি তো তার এই দুর্বলতা জেনেও তার দীনদারি দেখে বিয়ে করেছেন। সুতরাং আপনি আপনার বাবার উক্ত নির্দেশ পালন করতে বাধ্য নন।

মনে রাখবেন, তালাকের বৈধ কারণ ছাড়া তালাক দিলে যেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন অনুরূপভাবে এটা স্ত্রীর উপর জুলুমও হয়। হাদীসে এসেছে,أبغض الحلال عند الله الطلاق ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল–তালাক।’ (আবু দাউদ ২১৭৭)

ইমাম আহমদ রহ.-কে একেবারে এরকমই একটি মাসআলা জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, আমার বাবা আমাকে জোর দিচ্ছেন, যেন আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেই। এখন আমি কি তাঁকে তালাক দিব? তিনি উত্তর দিলেন, না। ওই ব্যক্তি তখন বলল, ওমর রাযি. তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ রাযি.-কে যখন নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তিনি যেন তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেন। তখন রাসুলুল্লাহ আব্দুল্লাহ রাযি.-কে তো বলেছিলেন, বাবার নির্দেশ পালন করার জন্য? এর উত্তরে ইমাম আহমদ রহ. বললেন, তোমার বাবা কি ওমর রাযি.-এর মত?

দুই. বাকি রইল, আপনার দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি। এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হল, আপনি যদি সক্ষম হন এবং সার্বিক বিবেচনায় নিজের জন্য প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে দ্বিতীয় বিয়ে আপানার জন্য নিষেধ নয়। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হল, উভয়ের মাঝে সমতা ও ন্যায় বিচার অটুট রাখতে হবে। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تَعْدِلُواْ فَوَاحِدَةً

আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই (তখন একাধিক বিয়ে নয়।) (সূরা নিসা ৩)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 + fourteen =