সুন্নতে খতনা বা মুসলমানি উপলক্ষে অনুষ্ঠান করা যাবে কি?

জিজ্ঞাসা–১৩৮৭: আসসালামু আলাইকুম, সুন্নাতে খাৎনা উপলক্ষে আমাদের সমাজে যে অনুষ্ঠান করা হয়, তা কি জায়েজ আছে?–Kaniz Fatema

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

খতনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

الفطرَةُ خمسٌ : الختانُ ، وحلقُ العانةِ ، ونتفُ الإبطِ ، وتقليمُ الأظافرِ ، وحلقُ الشَّاربِ

ফিতরাত (নবীগণের তরিকা) পাঁচটি। খতনা করা, নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা, বগলের পশম তুলে ফেলা, নখসমূহ কাটা এবং মোচ কাটা। (বুখারী ৬২৯৭)

এ উপলক্ষে ইসালামে কোনো আনুষ্ঠানিকতার বিধান দেয়া হয় নি। সুতরাং এ উপলক্ষে কোনো আনুষ্ঠানিকতাকে সুন্নত মনে করে আয়োজন করলে তা বেদআত হবে।

তবে কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিকতাকে সুন্নত মনে না করে কেবল সৌন্দর্যের জন্য কিংবা আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ ও আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সাদামাঠাভাবে দাওয়াত-অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে দোষের কিছু নেই। ইবনে কুদামা রহ. বলেন,

حُكْمُ الدَّعْوَةِ لِلْخِتَانِ وَسَائِرِ الدَّعَوَاتِ غَيْرِ الْوَلِيمَةِ : أَنَّهَا مُسْتَحَبَّةٌ ؛ لِمَا فِيهَا مِنْ إطْعَامِ الطَّعَامِ ، وَالْإِجَابَةُ إلَيْهَا مُسْتَحَبَّةٌ غَيْرُ وَاجِبَةٍ. وَهَذَا قَوْلُ مَالِكٍ ، وَالشَّافِعِيِّ ، وَأَبِي حَنِيفَةَ وَأَصْحَابِهِ وَإِجَابَةُ كُلِّ دَاعٍ مُسْتَحَبَّةٌ ، وَلِأَنَّ فِيهِ جَبْرَ قَلْبِ الدَّاعِي ، وَتَطْيِيبَ قَلْبِهِ ، وَقَدْ دُعِيَ أَحْمَدُ إلَى خِتَانٍ ، فَأَجَابَ وَأَكَلَ فَأَمَّا الدَّعْوَةُ فِي حَقِّ فَاعِلِهَا، فَلَيْسَتْ لَهَا فَضِيلَةٌ تَخْتَصُّ بِهَا؛ لِعَدَمِ وُرُودِ الشَّرْعِ بِهَا، وَلَكِنْ هِيَ بِمَنْزِلَةِ الدَّعْوَةِ لِغَيْرِ سَبَبٍ حَادِثٍ ، فَإِذَا قَصْدَ فَاعِلُهَا شُكْرَ نِعْمَةِ اللَّهِ عَلَيْهِ، وَإِطْعَامَ إخْوَانِهِ ، وَبَذْلَ طَعَامِهِ ، فَلَهُ أَجْرُ ذَلِكَ ، إنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى

বিয়ের অলিমা ব্যতীত খতনাসহ যে কোন উপলক্ষে খাওয়ার দাওয়াত করা মুস্তাহাব। যেহেতু এর মাধ্যমে খাদ্য খাওয়ানোর নেক আমল অর্জিত হয়। এ ধরনের দাওয়াত গ্রহণ করাও মুস্তাহাব; তবে ওয়াজিব নয়। এটি ইমাম মালেক রহ., শাফেয়ি রহ., আবু হানিফা রহ. ও তাঁর ছাত্রদের অভিমত। যে কোন দাওয়াতকারীর দাওয়াত গ্রহণ করা মুস্তাহাব। যেহেতু দাওয়াত গ্রহণ করলে দাওয়াতকারীর কাছে ভাল লাগে, তার মন প্রশান্ত হয়। ইমাম আহমাদকে একবার খতনার অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হলে তিনি দাওয়াত গ্রহণ করেন এবং খাবার খান। তবে এ ধরনের দাওয়াত খাওয়ানোর বিশেষ কোনো ফজিলত নেই। যেহেতু এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো শরয়ি দলিল উদ্ধৃত হয়নি। কোনো কারণ ছাড়া দাওয়াত খাওয়ানোর সাধারণ যে মর্যাদা এ আয়োজনেরও সে মর্যাদা। যদি দাওয়াতকারী এর মাধ্যমে আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মুসলমান ভাইদের খাবার খাওয়ানোর আমল পালনের উদ্দেশ্য করে, স্বীয় খাদ্যসামগ্রী ব্যয় করার নিয়ত করে তাহলে আল্লাহ চাহেত তিনি সে সওয়াব পাবেন। (আলমুগনি ৭/২৮৬)

উল্লেখ্য, বর্তমানে খতনা উপলক্ষে যে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজনের রেওয়াজ শুরু হয়েছে তা অবশ্যই বর্জনীয়। এমন অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমিত ইসলাম দেয় না। এ ছাড়া ওই অনুষ্ঠানে গান-বাদ্য ইত্যাদি শরিয়তবিরোধী কিছু থাকলে তা সম্পূর্ণ নাজায়েয।

والله اعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 5 =