জিজ্ঞাসা–৫৩৭: আমি প্রেগন্যান্ট। আমার স্বামী আমাকে খুবই কেয়ার করে ও ভালবাসা দেখায়। প্রেগন্যান্ট হওয়ায় আমি মায়ের বাসায় গিয়ে টানা ১৫ দিন থাকতাম আবার কয়েকদিন শশুরঘর এ থেকে আবার নায়র এ যেতাম। আমার স্বামী আমাকে গিয়ে দেখে আসত। একদিন আমি তার মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম সে একটা ডেটিং আপস এ বিভিন্ন মেয়েদের সাথে চ্যাট করে। তাকে ধরতে সে আমার পায়ে ধরে মাফ চায় আর বলে আমার অনুপস্থিতি তে সে ভুলে এসব চ্যাট করসে বাট নোংরা কিছু করে নি। অনেক মাফ চায় ও কান্নাকাটি করে। কিন্তু আমি তাকে কোনভাবে আর বিশ্বাস করতে পারছি না। খুব মানসিক অশান্তিতে দিন কাটাচ্ছি। আমার প্রেগন্যান্সিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ভয় পাই। শুধু কান্না পায়। আমি কী করব?–nisha
জবাব:
এক: প্রিয় বোন, নিশ্চয় আপনি আমাদের কাছে প্রশ্নটি এজন্য করেন নি যে, আপনি বিচ্ছেদ চান। প্রশ্নটি করেছেন, কারণ, আপনার জীবনসঙ্গী আপনার খুব কাছের মানুষ। কাছের মানুষটি দূরে সরে যাচ্ছে দেখে আপনি চিন্তিত, অজানা শঙ্কায় বিচলিত। তাই আমাদের কাছে এর একটা সুন্দর সমাধান চান। আমরা আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আপনার স্বামীকে হেদায়েত করেন এবং আপনার অন্তরে স্বস্তি এনে দেন।
আর আপনার প্রতি আমাদের প্রথম উপদেশ হল, বিচলিত না হয়ে আপনার স্বামী থেকে প্রাপ্ত কষ্টে ধৈর্য ধরুন। আপনি তার মাঝে যে দোষ বা ঘাটতি দেখতে পাচ্ছেন সেটা যেন প্রশান্তি ও পথ চলা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক না হয়। মনে রাখবেন, আপনাদের মাঝে তিক্ততা সৃষ্টি হলে সবচে’ বেশি খুশি হবে ইবলিস। যেমনভাবে সে খুশি হয়েছিল আপনার স্বামীকে ধোঁকায় ফেলে দিয়ে, আপনার বিশ্বাসের বাতিঘরে অন্ধকার ডেকে এনে। আমরা আশা করব, ধৈর্য্যহারা হয়ে ইবলিসকে দ্বিতীয়বার খুশি হওয়ার সুযোগ দিবেন না। কেননা, ইবলিস আমাদের প্রধান শত্রু। সুতরাং তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ করুন।
দুই: আপনি বলেছেন, আপনার স্বামী আপনার প্রতি যত্ন নেয়, ভালোবাসা দেখায়। মূলত: ভালোবাসার জন্য জীবনের আয়ু অতি অল্প। সুতরাং বর্তমানকে প্রাধান্য দিন। যা হয়ে গেছে তা নিয়ে ঘাটাঘাটি করে তিক্ততার দ্বার খুলে রাখা মানে নিজের অশান্তি নিজে ডেকে আনা। তাছাড়া আপনার স্বামী তো ক্ষমা চেয়েছেন। এটা কিন্তু বেশ বড় ব্যাপার। এতে প্রমাণ করে, আপনার স্বামী মানুষ হিসেবে খারাপ নয় এবং তিনি আপনাকে সত্যিকার অর্থেই ভালবাসেন। সুতরাং এর গুরুত্ব দিন। তাকে ক্ষমা করে দিন। ভালোবাসার স্পর্শে পুনরায় জীবনের ছন্দ নিয়ে আসুন। বাবার বাড়িতে বেশি না থেকে স্বামীকে বেশি সময় দিন।
وَإِن تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
যদি মার্জনা কর, উপেক্ষা কর, এবং ক্ষমা কর, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। (সুরা তাগাবুন ১৪)
তিন: আজ আপনার কাছে আপনার স্বামীর একটি দোষ প্রকাশ পেয়েছে; যে দোষটির কারণে তিনি আপনার কাছে লজ্জিত। একটু নিজেকে যাচিয়ে-খতিয়ে দেখুন তো, আপনার মঝেও কি অতীতের কিংবা বর্তমানের এমন কোন দোষ নেই, যা আপনার স্বামীর কাছে প্রকাশ পেলে আপনাকে লজ্জিত হতে হবে! কিংবা ভাবুন তো, যে দোষটি আপনার স্বামী করেছে, -আল্লাহ না করুন- যদি এ দোষটি আপনার কাছ থেকে হত, তাহলে আপনি আপনার স্বামীর কাছে কী আশা করতেন! নিশ্চয় ‘ক্ষমা’ আশা করতেন। সুতরাং আবারও বলছি, আপনারও উচিত তাকে ক্ষমা করে দেওয়া। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
أَحِبَّ لِلنَّاسِ مَا تُحِبُّ لِنَفْسِكَ تَكُنْ مُسْلِمًا
নিজের জন্য যা পছন্দ কর মানুষের জন্যও তা পছন্দ করবে তাহলে প্রকৃত মুসলিম হতে পারবে। (তিরমিযি ২৩০৮)
দেখুন, পরিবার ভেঙ্গে যাওয়া ও সন্তানেরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার চেয়ে ধৈর্য ধারণ করা ও ক্ষমা করে দেয়া অতি উত্তম। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
وَاعْلَمْ أنَّ فِي الصَّبْرِ عَلَى مَا تَكْرَهُ خَيْرًا كَثِيرًا، وَأَنَّ النَّصْرَ مَعَ الصَّبْرِ، وَأَنَّ الْفَرَجَ مَعَ الْكَرْبِ، وَأَنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
জেনে রাখ, কষ্ট সত্ত্বেও ধৈর্য ধারণ করার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ রয়েছে। ধৈর্যের সাথে আসে বিজয়। বিপদের সাথেই আসে মুক্তি। দুঃখের সাথেই আছে সুখ। (মুসনাদে আহমাদ ২৮০৩)
চার: আপনি বেশি বেশি নেক আমল করুন, নামাজ পড়ুন, ইস্তেগফার করুন। স্বামীকে খারাপ পথ থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপূর্ণ পথ অনুসরণ করুন। আল্লাহর কাছে বেশি বেশ দোয়া করুন। সন্তান প্রতিপালনের উপর গুরুত্ব দিন। এসব কাজ করার ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাওয়াবের প্রত্যাশা করুন।
আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাকে তিনি যা পছন্দ করেন ও ভালোবাসেন তার উপর আমল করার তাওফিক দান করুন।
আরো পড়ুন– ☞ গর্ভবতী মায়ের আমল ও দোয়া ☞ আমি ডিপ্রেশনে ভুগছি; কী করতে পারি? ☞ সন্তান লাভের আমল ও দোয়া ☞ সুস্বাস্থ্যের জন্য আমল ও দোয়া ☞ গর্ভবতী-মায়ের নামাজ এবং কিছু পরামর্শ ☞ স্বামী স্ত্রীর মাঝে আদর্শিক দ্বন্দ্ব; তাহলে কি তালাকের উপদেশ দিব? ☞ সংসার সুখের হয় দু’জনের গুণে ☞ আমার স্বামী ভাল মানুষ; কিন্তু নামাজ পড়ে না; কী করব? ☞ সন্তান লাভের আনন্দে মিষ্টি বিতরণ করা যাবে কি? ☞ ‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর জান্নাত’ কথাটা সত্য কিনা? ☞ প্রবাসী স্বামী মায়ের কথা শুনে যোগাযোগ করে না; কী করব? ☞ গর্ভাবস্থায় সহবাসের হুকুম কি? ☞ ফেসবুকে পরনারীর সাথে ম্যাসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা ☞ হারাম রিলেশনের পর তাওবা করলে শাস্তি মওকুফ হবে কিনা? ☞ সুখময় দাম্পত্যজীবনের জন্য স্ত্রীদের প্রতি পনেরটি উপদেশ