স্বামী স্ত্রীকে ‘তোমাকে মুক্ত করে দিলাম’ বা ‘স্বাধীন করে দিলাম’ বলা…

জিজ্ঞাসা–৮৭০: হুজুর, আমার বিয়ের পর বেশ কয়েকবার আমার স্ত্রীর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়া হয়েছে। তখন আমি বলেছি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম বা স্বাধীন করে দিলাম এ জাতীয় কথা। কিন্তু তখন ঠিক কি নিয়তে বলেছি তা এখন স্পষ্ট ভাবে মনে নেই। তবে খুব সম্ভবত তালাকের নিয়তে বলি নি। আমার নিয়তটা হয়তো এমন ছিলো- সে যেন তার ইচ্ছা মত কাজ করতে পারে বা চলতে পারে। সম্প্রতি আমি জানতে পেরেছি যে, এ জাতীয় কথা তালাকের বা ছেড়ে দিব এই নিয়তে বললে তালাক হয়ে যায়। যেহেতু আমি প্রায় তিন বছর আগে বলেছি তাই আমার তখনকার নিয়তের ব্যাপারে সন্দেহ হচ্ছে। আমাদের একটা বাচ্চা আছে। এমতাবস্থায় আমরা কি করতে পারি? আমরা কি আবারো বিয়ে করবো? মহান আল্লাহ আপনাকে দুনিয়া এবং আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দান করুন।–মোঃ আশিকুর রহমান।

জবাব:

এক. ‘তোমাকে মুক্ত করে দিলাম’ বা ‘স্বাধীন করে দিলাম’ শব্দগুলো প্রচলনে সারীহ বা স্পষ্ট তালাকের স্থলে ব্যবহার হয়ে থাকে। আর সারীহ তালাকের ক্ষেত্রে নিয়তের প্রয়োজন হয় না। বরং যদি কেউ স্ত্রীকে কেবল ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যেও এজাতীয় কথা বলে তাহলেও এর দ্বারা তালাক হয়ে যায়। (জামিউল ফাতাওয়া ১০/১২০ কিতাবুন নাওয়াযিল ৯/২৯৩, ২৯৬, ২৯৯, ৩০০)

সুতরাং যদি আপনি উক্ত বাক্য একবার বলে থাকেন তাহলে আপনার স্ত্রী এক তালাক এবং দুই বার বললে দুই তালাক আর তিন বা ততোধিক বার বললে তিন তালাক হয়ে গিয়েছে।

দুই. এক তালাক বা দুই তালাকের বিধান হল, তালাক দেয়ার পর স্বামীর অধিকার থাকে, স্ত্রীকে ইদ্দত তথা তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে রাজআত করা তথা স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে আনা। এতে কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে স্ত্রীকে ফিরিয়ে না আনা হয়, তাহলে স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে নতুন করে মোহর ধার্য করে বিবাহ করা আবশ্যক। নতুবা স্বামী স্ত্রী হিসেবে উভয়ের বসবাস করা জায়েজ নয়। এক্ষেত্রে ‘হালালা’র প্রয়োজন নেই। (ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ-৯/৪৪১,২৪৫)

পক্ষান্তরে তিন তালাকের বিধান হল, তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ‘হালালা’ ব্যতীত দ্বিতীয় বার গ্রহণ করার অবকাশ নেই। অর্থাৎ  স্ত্রীকে অন্য স্বামীর নিকট নিয়মিত বিবাহ দেয়া এবং তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠা। অতঃপর তাদের মাঝে সংসার জীবনে কোনো কারণে যদি ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়; তবে ইদ্দত পালনের পর তাকে আপনি পুনরায় বিয়ে করতে পারবেন।

এর দলিল হল, আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। (সূরা বাকারা-২৩০)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 − two =