হারাম টাকায় কুরবানি এবং সুদের কিস্তি প্রদান থেকে মুক্তির উপায়

জিজ্ঞাসা–১২৫১: আসসালামুআলাইকুম। আমার এক নিকটতম আত্মীয়, ব্যাংক লোন নিয়ে বাড়ির অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করেছে। এখনও তার কিস্তি চলে। এহেন কাজের জন্য সে বলে সে তাওবা করেছে৷ কিন্তু কিস্তি চলমান এবং সেই রুম ভাড়া চলে। কোরবানীতে হালাল টাকার সাথে সে রুম ভাড়ার টাকাও যোগ করেছে। তার স্ত্রী হারাম থেকে বেঁচে থাকার আমল করেন। এ ক্ষেত্রে তার কোরবানীর পশুর গোশত খাওয়ার বিধান কি? এবং সে এ লোন নেয়ার অপরাধ থেকে কিভাবে মাফ পেতে পারে? দয়া করে জানাবেন। ধন্যবাদ।–মুহাম্মদ মেহেদী হাসান।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. হারাম টাকা দ্বারা কুরবানি দেয়া জায়েয নেই। কেননা, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

إنَّ اللَّهَ طيِّبٌ لا يقبلُ إلَّا طيِّبًا

নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র। তিনি একমাত্র পবিত্রটাই গ্রহণ করেন…(তিরমিযি ২৯৮৯)

দুই. যে ব্যক্তি হারাম উপার্জন থেকে কুরবানি দিয়েছে, তার কুরবানির পশুর গোশত খাওয়া যাবে কিনা, এক্ষেত্রে শরিয়তের মূলনীতি হল, হারাম উপার্জনকারীর যদি হালাল-হারাম উভয় ধরনের সম্পদ থাকে এবং সে তার হারাম সম্পদ থেকে হাদিয়া দিয়ে থাকে তাহলে তা গ্রহণ করাও হারাম। আর যদি হালাল সম্পদ থেকে হাদিয়া দিয়ে থাকে তাহলে তা গ্রহণ করাও হালাল হবে।

তবে কোন সম্পদ থেকে দিয়েছে তা যদি জানা সম্ভব না হয়, তাহলে দেখতে হবে তার অধিকাংশ সম্পদ হালাল না হারাম। যদি অধিকাংশ সম্পদ হালাল হয়, তাহলে হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ। আর যদি অধিকাংশ সম্পদ হারাম হয়, তাহলে হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ হবে না।

আর  যে সকল ক্ষেত্রে কিছুই জানা যাবে না, সে সকল ক্ষেত্রে হাদিয়া গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার মাঝেই সতর্কতা রয়েছে।

আপনি আপনার উক্ত আত্মীয় থেকে হাদিয়া গ্রহণ করতে পারবেন কিনা, তা উক্ত মূলনীতির আলোকে বিচার করবেন।

তিন. উক্ত সুদি কারবার থেকে ক্ষমা পাওয়ার উপায় হল, অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে এবং ভবিষ্যতে এহেনতর জঘন্য গুনাহ আর করবেন না মর্মে আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা করা। এরপর এখনও যদি উক্ত সুদী লেনদেনের কিস্তি অবশিষ্ট থাকে তাহলে তার জন্য ওয়াজিব হল, কেবল মূল টাকা দেয়া এবং সুদের অংশ দেয়া থেকে বিরত থাকা। কিন্তু কোনো কারণে যদি সে দিতে বাধ্য থাকে তাহলে অত্যন্ত ঘৃণাভরে তা দেয়া এবং আল্লাহর কাছে তাওবা করা অব্যাহত রাখা।  কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَ رَسُوْلِهٖ وَإِن تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُؤُوسُ أَمْوَالِكُمْ لاَ تَظْلِمُونَ وَلاَ تُظْلَمُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা পরিত্যাগ করো। যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তা না কর তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সংবাদ জেনে নাও। কিন্তু যদি তোমরা তাওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না। (সূরা বাকারা  ২৭৮-২৭৯)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 3 =