হিজড়াদের বিবাহের কোন হুকুম আছে কি না?

জিজ্ঞাসা–১০২৬: হিজড়াদের বিবাহের কোন হুকুম আছে কি না?  থাকলে কিভাবে এবং তারা সাধারণ পুরুষ বা মহিলাকে বিবাহ করতে পারবে কি না?– md. aminul islam

জবাব:

এক. দেখতে হবে হিজড়ার প্রস্রাব করার অঙ্গটি কেমন? সে কি পুরুষদের গোপনাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে? না নারীদের মত গোপনাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে? গোপনাঙ্গ যাদের মত হবে হুকুম তাদের মতই হবে। অর্থাৎ গোপনাঙ্গ যদি পুরুষালী হয়, তাহলে পুরুষ। যদি নারীর মত হয়, তাহলে নারী। আর সেই হিসেবেই তাদের উপর শরয়ী বিধান আরোপিত হবে। হাদীস শরীফে এসেছে–

أن عليا رضي الله عنه : سئل عن المولود لا يدري أرجل أم امرأة فقال علي رضي الله عنه يورث من حيث يبول

হযরত আলী রাযি. রাসূল ﷺ-কে জিজ্ঞেস করলেন, প্রসূত বাচ্চা যে পুরুষ নারী তা জানা যায় না তার বিধান কি? রাসূল ﷺ জবাব দিলেন যে, সে মিরাস পাবে যেভাবে প্রস্রাব করে। (সুনানে বায়হাকী কুবরা ১২৯৪, কানযুল উম্মাল ৩০৪০৩, মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক ১৯২০৪)

এ হাদীসে স্পষ্ট যে,পৌরুষপ্রবণ হিজড়াদের জন্য সুস্থ পুরুষদের বিধান প্রযোজ্য হবে। নারীত্বপ্রবণ হিজড়াদের জন্য সুস্থ নারীদের বিধান প্রযোজ্য হবে।

সুতরাং ঈমান, ইসলাম, নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাত এমনকি বিয়ে-শাদীসহ সকল ইসলামী বিধিবিধান তাদের উপর (নারী ও পুরুষ হিসেবেই) বর্তাবে। অনুরূপভাবে হালাল হারাম, ন্যায় অন্যায় ও জান্নাত জাহান্নামও তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। ( হাওয়াশী আল আশবাহ ওয়ান নাযায়ির-ইবনু নুজাঈম, ছায়্যিদ আহমাদ হামুভী; ফাতাওয়া আবদুল হাই লাক্ষৌনভী ৪০১; ফাতাওয়ায়ে অযীযী, শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিছে দেহলভী ৫৩৯; ফাতাওয়ায়ে রশিদিয়া, রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী ৪৬৫)

দুই. উপরোক্ত দুই শ্রেণী ছাড়াও এক শ্রেণীর হিজড়া আছে, যাদেরকে মুশকিল-হিজড়া বলা হয়। অর্থাৎ, যার প্রস্রাবের রাস্তা দুটি, যথা পুঃলিঙ্গ (যকর/penis) স্ত্রীঃলিঙ্গ(ফরয/pussy) এবং যাকে বালেগ হওয়ার পরও কোনোভাবেই পুরুষ বা মহিলা কোনোটার আওতাভুক্ত করা যায় না। যদিও এশ্রেণীর হিজড়া পৃথিবীতে একেবারে নাই বলা চলে। এশ্রেণীর হিজড়া কখনো বিবাহ করতে পারবে না। কেননা কোনোভাবেই বুঝা যাচ্ছেনা সে পুরুষ নাকি মহিলা। এখন যদি তার বিবাহ পুরুষের সাথে হয়,অন্যদিকে সেও এক হিসাবে পুরুষ তাহলে পুরুষে পুরুষে বিবাহ হয়ে যাবে। আর যদি মহিলার সাথে বিবাহ হয় অন্যদিকে সেও এক হিসাবে মহিলা তাহলে মহিলায় মহিলায় বিবাহ হয়ে যাবে। যা কখনো বৈধ হবে না।

نكاحه: وإن زوجه أبوه أو مولاه امرأة أو رجلا لا يحكم بصحته حتى يتبين حاله أنه رجل أو امرأة فإذا ظهر أنه خلاف ما زوج به تبين أن العقد كان صحيحا، وإلا فباطل لعدم مصادفة المحل

যদি মুশকিল-হিজড়াকে তার পিতা বা মালিক কোনো পুরুষ বা মহিলার সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত তার পুরুষ বা মহিলা হওয়ার পৃথক নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যাবে না ততক্ষণ পর্যন্ত বিবাহ বৈধ হবে না। সুতরাং যখন প্রমাণিত হবে যে,তার বিবাহ বিপরীতলিঙ্গ কারো সাথে হয়েছে তখন উক্ত বিবাহ বৈধ হবে। নতুবা বিয়ের ক্ষেত্র পাওয়া না যাওয়ার কারণে বিবাহ বাতিল হয়ে যাবে। (তাবয়ীনুল হাক্বাঈক৬/২১৮)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 1 =