জিজ্ঞাসা–৭২৫: কোন অমুসলিম রোগাক্রান্ত হয়েছে কিন্তু সে আমার প্রিয় ব্যক্তি যেমন ধরুন একজন খেলোয়াড় সেক্ষেত্রে তার রোগ মুক্তি কামনা করে আল্লাহ পাকের কাছে দোওয়া করা জায়েজ আছে কিনা? জানাবেন।–মোকাদ্দেস আলী।
জবাব:
এক. অমুসলিমদের জন্য দোয়া করার ক্ষেত্রে সাধারণ মূলনীতি হল, তাদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করা যায় না। ইমাম নববী রহ. বলেন,
الصلاة على الكافر والدعاء له بالمغفرة : حرام بنص القرآن والإجماع
অমুসলিমের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করা কোরআনের বক্তব্য ও সকলের ঐক্যমতে হারাম। (আলমাজমু’ ৫/১১৯)
তবে তাদের জন্য হেদায়েতের দোয়া করা যায়। হাদিস শরিফে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جَاءَ الطُّفَيْلُ بْنُ عَمْرٍو إِلَى النَّبِيِّ ﷺ ، فَقَالَ : إِنَّ دَوْسًا قَدْ عَصَتْ وَأَبَتْ ، فَادْعُ اللَّهَ عَلَيْهِمْ ، فَقَالَ : اللَّهُمَّ اهْدِ دَوْسًا وَأْتِ بِهِمْ
তুফায়েল ইবনু আমর রাযি. রাসূল ﷺ–এর কাছে এসে বললেন, দাওস গোত্র হালাক হয়ে গেছে। তারা নাফরমানী করেছে এবং (দীনের দাওয়াত) গ্রহন করতে অস্বীকার করেছে। সুতরাং আপনি তাদের প্রতি বদদোয়া করুন। তখন রাসূল ﷺ বললেন, হে আল্লাহ্! দাওস গোত্রকে হেদায়েত দান করুন এবং (দীনের দিকে) নিয়ে আসুন। (বুখারী ২৯৩৭ মাগাযী অধ্যায়)
অনুরূপভাবে জাগতিক বিষয় যেমন, রিজিক সুস্থতা ইত্যাদির জন্য দোয়া করা যায়। বিশেষত যদি তার সুস্থতার কারণে মুসলমানদের উপকার হয় কিংবা তার জন্য দোয়া করলে ইসলামের প্রতি তার অন্তর বিনম্র হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং অনুরূপভাবে যদি সে দোয়াকারীর আত্মীয় হয় তাহলেও তার জন্য দোয়া করা নিষেধ নয়।
এর দলিল হল, আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাযি. হতে বর্ণিত যে,
নবী ﷺ–এর সহাবীদের কতক সহাবী আরবের এক গোত্রের নিকট আসলেন। গোত্রের লোকেরা তাদের কোন আতিথেয়তা করল না। তাঁরা সেখানে থাকতেই হঠাৎ সেই গোত্রের নেতাকে সর্প দংশন করল। তখন তারা এসে বলল, আপনাদের কাছে কি কোন ঔষধ আছে কিংবা আপনাদের মধ্যে ঝাড়-ফুঁককারী লোক আছেন কি? তাঁরা উত্তর দিলেন, হাঁ। তবে তোমরা আমাদের কোন আতিথেয়তা কর নি। কাজেই আমাদের জন্য কোন পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট না করা পর্যন্ত আমরা তা করব না। ফলে তারা তাদের জন্য এক পাল বকরী পারিশ্রমিক দিতে রাযী হল। তখন একজন সহাবী উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) পড়তে লাগলেন এবং মুখে থুথু জমা করে সে ব্যক্তির গায়ে ছিটিয়ে দিলেন। ফলে সে রোগমুক্ত হল। এরপর তাঁরা বকরীগুলো নিয়ে এসে বলল, আমরা নবী ﷺ-কে জিজ্ঞেস করার পূর্বে এটি স্পর্শ করব না। এরপর তাঁরা এ বিষয়ে নবী ﷺ-কে জিজ্ঞেস করলেন। নবী ﷺ শুনে হেসে দিলেন এবং বললেন, তোমরা কীভাবে জানলে যে, এটি রোগ সারায়? ঠিক আছে বকরীগুলো নিয়ে যাও এবং তাতে আমার জন্যও এক ভাগ রেখে দিও। (বুখারী ৫৭৩৬ চিকিৎসা অধ্যায়)
বলা বাহুল্য, ঝাড়-ফুঁক করা মানে দোয়া করা। যা উক্ত সাহাবী একজন মুশরিকের সুস্থতার জন্য করেছিলেন এবং রাসুলুল্লাহ ﷺ তা সমর্থন করেছেন। এর মাধ্যমে অমুসলিমের জাগতিক বিষয়ের জন্য দোয়া করার বৈধতা পাওয়া গেল।
দুই. কেবল দোয়াই নয়; বরং কোনো অমুসলিম অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়ার এবং তার সেবা করারও অনুমতি আছে। যেমন, হাদিস শরিফে এসেছে, আনাস রাযি. বলেন,
كان للنبيﷺ غلام يهودي يخدمه ، فَمَرِضَ ، فَأَتَاهُ النَّبِيُّ ﷺ يَعُودُهُ فَقَعَدَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَقَالَ لَهُ أَسْلِمْ فَنَظَرَ إِلَى أَبِيهِ وَهُوَ عِنْدَهُ فَقَالَ لَهُ أَطِعْ أَبَا الْقَاسِمِ ﷺ فَأَسْلَمَ فَخَرَجَ النَّبِيُّ ﷺوَهُوَ يَقُولُ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنْقَذَهُ مِنْ النَّارِ
এক ইয়াহূদী বালক, নবী ﷺ– –এর খিদমত করত, সে একবার অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী ﷺ তাকে দেখার জন্য আসলেন। তিনি তার মাথার কাছে বসে তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কর, সে তখন তার পিতার দিকে তাকাল, সে তার কাছেই ছিল, পিতা তাকে বলল, আবূল কাসিম (নবী ﷺ–এর কুনিয়াত) এর কথা মেনে নাও, তখন সে ইসলাম গ্রহণ করল। নবী ﷺ সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, যাবতীয় প্রশংসা সে আল্লাহর, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন। (বুখারি ১২৭৩ জানাযা অধ্যায়)
তিন. উল্লেখ্য, একজন অমুসলিম খেলোয়াড়কে ভালোবাসা জায়েয নেই। কেননা এর মাঝে কমপক্ষে দু’টি খারাপ দিক রয়েছে–
১. এটি খেলার মধ্যে ডুবে থাকার প্রতি ইঙ্গিত করে। অথচ আল্লাহ তাআলার ভাষায়; এটা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। মুনাফিকরা বলত, إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلُعَبُ আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং খেলা করছিলাম। (সূরা তাওবা ৬৫)
২. একজন অমুসলিম খেলোয়াড়ের প্রতি ভালোবাসা নিশ্চয় আল্লাহর জন্য নয়। সুতরাং এটি অমুসলিমকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করারই নামান্তর। অথচ আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হচ্ছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِّن دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও। (সূরা আলি ইমরান ১১৮)