জিজ্ঞাসা–৩৮৪: আসসালামু আলাইকুম। হুজুর, কোরবানি ও আকিকা প্রসংগে, স্ত্রী,দুই মেয়েসহ ৪ জন নিয়ে আমার পরিবার। আমার বাবা জীবিত নেই। আমরা ছয় ভাই। আম্মার সাথে অন্য ভাই-রা থাকে। বর্তমানে ৪ ভাই বিদেশে থাকে। বড় ভাই মূলত পরিবারের খরচের টাকা দেয়। ঈদুল আযহায় গরু কোরবানিতে ৪/৫ অংশ হতে অধিকাংশ সময় পরিবার হতে আমার নাম দেয়, যদিও আমাকে টাকা দিতে হয় না। আমি আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় ভাই-রা আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করে। তবে ২০১৮ এর রমজান মাসের নিদিষ্ট তারিখে আমার জমাকৃত টাকা ও স্বর্ণের উপর জাকাতের হিসাব বের করে কিছু পরিশোধ করেছি অবশিষ্ট টাকা পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করবো আল্লাহ্ যদি তৌফিক দেয়। আমার বড় মেয়ে ২য় শ্রেনী ও ছোট মেয়ে প্লেতে পড়ে। বড় মেয়ের আকিকা যথাসময়ে দেয়া হয়নি, পরবর্তীতে কোরবানি ঈদে গরু ৭ অংশ হতে ১ অংশ বড় মেয়ের আকিকার নামে দিয়েছি, এই আকিকার নামের অংশের টাকা আমি পরিশোধ করেছি। ছোট মেয়ের আকিকা এখনও দেয়া হয়নি। আমার জানার বিষয় হচ্ছে -১। আমার নামে যে কোরবানি হয় তা হবে কিনা এবং আমার নিজের টাকায় গরু বা ছাগল কোরবানি দেয়া বাধ্যতামূলক কিনা? ২। বড় মেয়ের আকিকা দেয়ার প্রক্রিয়া হয়েছে কিনা এবং ছোট মেয়ের আকিকা দেয়ার প্রক্রিয়া। হুজুর দয়া করে উপরোক্ত বিষয়ের আলোকে ধর্মীয় দৃষ্টিতে আমার করনীয় সর্ম্পকে জানালে অনেক উপকৃত হবো।–shamim Ahmed
জবাব:وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক- নিজের টাকায় কুরবানী করা আবশ্যক নয়; বরং একই পরিবারভুক্ত কোন সদস্য অন্য সদস্যের পক্ষ থেকে তার জ্ঞাতসারে নিয়মিত কুরবানী করে আসলে তার কুরবানী হয়ে যায়। তবে প্রকাশ্যে অনুমতি নেওয়া উত্তম। (আদ্দুররুল মুখতার ৬ /৩১৫)
হাদীস শরিফে এসেছে, উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ হতে গরু দ্বারা কুরবানী করেছেন। (সহীহ বুখারী ২/৮৩৪; ১/২৩১)
সুতরাং আপনার কুরবানী হয়ে যাবে। এ নিয়ে সংশয়ে থাকার প্রয়োজন নেই।
দুই- কুরবানীর গরুতে আকীকার নিয়তে শরীক হওয়া নিষেধ নয়; তবে উত্তম নয়। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬)
উত্তম হল, পুত্র সন্তান হলে দু’টি আর কন্যাসন্তান হলে একটি ছাগল/ভেড়া/দুম্বা দ্বারা আকীকা করা। কেননা, উম্মে কুরয রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,
عَنْ الْغُلَامِ شَاتَانِ وَعَنْ الْأُنْثَى وَاحِدَةٌ
পুত্রসন্তানের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল আর কন্যাসন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল যবাই করবে। (তিরমিযী ১৫১৬ নাসাঈ ৪২১৭)
আর নিষেধ নয় এজন্য যে, কেননা, কোনো হাদীসে কুরবানীর সাথে আকীকা করতে নিষেধ করা হয় নি; বরং কুরবানীর সাথে হজ্বের কুরবানী, জরিমানা দম একত্রে এক পশুতে দেওয়ারও প্রমাণ আছে। অর্থাৎ কুরবানীর পশুতে অন্য ইবাদতের নিয়তে শরিক হওয়া জায়েয। সুতরাং আকীকার নিয়তে শরিক হওয়াও জায়েয।
তাছাড়া এ দুটো আমলের মাধ্যমে উদ্দেশ্য হচ্ছে পশু জবাই করার মাধ্যমে আল্লাহ্র নৈকট্য হাছিল করা। তাই একটি অপরটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
আতা ইবনে আবী রবাহ রহ. বলেছেন, উট-গরু সাতজনের পক্ষ হতে কুরবানী হতে পারে। আর এতে শরিক হতে পারে কুরবানীকারী, তামাত্তু হজ্বকারী এবং হজ্বের ইহরাম গ্রহণের পর হজ্ব আদায়ে অপারগ ব্যক্তি। (আসসুনান, সায়ীদ ইবনে মানসূর-আলকিরা লী কাসিদি উম্মিল কুরা ৫৭৩)
ইবনে আবু শাইবা রহ. আল-মুসান্নাফ গ্রন্থে (৫/৫৩৪) বলেন,
عَنْ الْحَسَنِ قَالَ : إذَا ضَحُّوا عَنْ الْغُلَامِ فَقَدْ أَجْزَأَتْ عَنْهُ مِنْ الْعَقِيقَةِ. وعَنْ هِشَامٍ وَابْنِ سِيرِينَ قَالَا : يُجْزِئُ عَنْهُ الْأُضْحِيَّةُ مِنْ الْعَقِيقَةِ
‘হাসান বসরী রহ. থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, কেউ যদি ছেলের পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে সেটা আকীকা হিসেবে যথেষ্ট হবে। হিশাম ও ইবনে সিরিন রহ. থেকে বর্ণিত আছে তারা উভয়ে বলেন, তার পক্ষ থেকে কোরবানী করলে সেটা আকিকা হিসেবে যথেষ্ট হবে।’
এছাড়া ফাতাওয়া শামীসহ ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবাদিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কুরবানীর সাথে আকীকা সহীহ। তবে এক্ষেত্রে ছেলের জন্য দুই অংশ আর মেয়ের জন্য এক অংশ দিতে হয়। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ৪/১১৬)
সুতরাং আপনার বড় মেয়ের আকীকা দেয়ার প্রক্রিয়া সহীহ হয়েছে। আর আকীকার আদায়ের নিয়ম আরও বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন–জিজ্ঞাসা নং–১৭৯।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন–
- আকীকা আদায়ের নিয়ম কী?
- মাদা বকরি দিয়ে কি আকীকা সহীহ হয় না?
- পাঠা কোরবানী দেওয়া যাবে কি?