জিজ্ঞাসা–৭৫৯: আমার স্বামী ও আমি নিজেরা পছন্দে বিয়ে করি। এরপর দুইজনে মিলে আল্লাহর কাছে নামাজ পড়ে ক্ষমা চাই। কিন্তু আমি তার ফোন থেকে কিছুদিন আগে দেখি সে মোবাইলে অন্যের সাথে সেক্সুয়াল মেসেজ আদানপ্রদান করে। আমি যে জানি এটা সে জানেনা। এক্ষেত্রে আমি এখন কি করতে পারি? আমরা দুইজন ই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি।–ইচ্ছাকৃতভাবে নাম প্রকাশ করা হয় নি।
জবাব:
এক. প্রিয় বোন, ভালোবেসে হোক আর পারিবারিকভাবেই হোক একটি মেয়ের জীবনের পথচলার সঙ্গী হয়ে থাকে তার স্বামী। আর সে স্বামী ধীরে ধীরে আপনার চোখের সামনে দূরে হারিয়ে যাচ্ছে দেখে নিশ্চয় আপনি এক অব্যক্ত বেদনা দ্বারা প্রতিনিয়ত পিষ্ট হচ্ছেন। এজন্য প্রথমেই আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আপনার বেদনা মুছে দেন এবং আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে যেন আপনার প্রতি পরিপূর্ণ আগ্রহী ও মনোযোগী করে দেন। আর আমরা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক এই অনাবিল ভালোবাসা কিন্তু আল্লাহর সৃষ্টি; বান্দা/বান্দীর প্রতি তাঁর বিশেষ নেয়ামত। আল্লাহ বলেন,
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
আর তাঁর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা রুম ২১)
সুতরাং আপনার প্রতি আমাদের প্রধান উপদেশ এটাই যে, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করুন। আর আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে হলে ইলম ও তরবিয়তের প্রয়োজন হয়। এজন্য তাঁর সঙ্গে যাঁদের সম্পর্ক পোক্ত ও দৃঢ় তাঁদের জীবনচরিত পড়ুন। একমাত্র তিনিই পারবেন আপনার পেরেশানি দূর করতে এবং আপনাদের মাঝে ভালোবাসা সুন্দর ও নিষ্কলুষ করে দিতে। আল্লাহ বলেন,
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنَّا الْحَزَنَ ۖ إِنَّ رَبَّنَا لَغَفُورٌ شَكُورٌ . الَّذِي أَحَلَّنَا دَارَ الْمُقَامَةِ مِن فَضْلِهِ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٌ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٌ
আর তারা বলবে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দূঃখ দূর করেছেন। নিশ্চয় আমাদের পালনকর্তা ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী। যিনি স্বীয় অনুগ্রহে আমাদেরকে বসবাসের গৃহে স্থান দিয়েছেন তথায় কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং স্পর্শ করে না ক্লান্তি। (সূরা ফাতির ৩৪, ৩৫)
দুই. পাশাপাশি আপনার প্রতি আমাদের আরো পরামর্শ হল–
১. স্বামীকে অনেক বেশী ভালবাসুন। কেননা, এই মুহূর্তে তার জন্য আপনার ভালোবাসা বেশি প্রয়োজন। সুতরাং তার জন্য নিজেকে পরিপাটি রাখুন। তার সাথে যতটা সম্ভব ঘনিষ্ঠ-সময় কাটান। আপনার আচরণ, কথা সব কিছুতেই যেন ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে। তার সঙ্গে এমনভাবে চলুন, যেন আপনি কিছুই জানেন না। দেখুন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সর্বোত্তম নারীর পরিচয় দেন এভাবে–
الَّتِي تُطِيعُ إِذَا أَمَرَ ، وَتَسُرُّ إِذَا نَظَرَ ، وَتَحْفَظُهُ فِي نَفْسِهَا وَمَالِهِ
যে স্বামীর অনুগত থাকে, স্বামী তার দিকে তাকালে সে আনন্দ প্রকাশ করে এবং নিজের চরিত্র ও স্বামীর সম্পদ হেফাজত করে। (নাসাঈ কুবরা ৮৬৩৮)
জনৈক জ্ঞানী চমৎকার বলেছেন,
خير النساء ما عفَّت ، وكفّت [ أي : لسانها ] ، ورضيت باليسير، وأكثرت التزين ، ولم تُظهره لسوى زوجها
‘সেই উত্তম নারী যে পবিত্র জীবন যাপন করে, যবান কাবু রাখে, অল্পে তুষ্ট থাকে, অধিক সাজগোজ করে এবং তা কেবল স্বামীর সামনে প্রকাশ করে।’
২. আপনার স্বামী নিশ্চয় একটা ফেতনার ভেতরে পড়ে গিয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ
পুরুষের জন্য স্ত্রীজাতি অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর কোন ফিতনা আমি রেখে গেলাম না। (বুখারি ৪৮০৮)
আর আপনি যেহেতু তার সবচেয়ে কাছের কল্যাণকামী, সেহেতু এই ফেতনা থেকে উত্তরণের জন্য তার জন্য আল্লাহর কাছে অধিকহারে দোয়া করুন। কোরআনে বর্ণিত এ দোয়াটিও করতে পারেন; ইনশা-আল্লাহ আল্লাহ আপনার স্বামীকে আপনার চোখের শীতলতা বানিয়ে দিবেন।
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের জীবনসঙ্গীর পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ দান করুন। (সূরা ফুরকান ৭৪)
৩. আপনি বিষয়টি জানেন না এমনভাবে তাকে নম্রতা ও ভালোবাসার সঙ্গে সুযোগ বুঝে কিছু কিছু নসিহত করুন। যেমন, এই হাদিসটি শোনাতে পারেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لَأَعْلَمَنَّ أَقْوَامًا مِنْ أُمَّتِي يَأْتُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِحَسَنَاتٍ أَمْثَالِ جِبَالِ تِهَامَةَ بِيضًا، فَيَجْعَلُهَا اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ هَبَاءً مَنْثُورًا ، قَالَ ثَوْبَانُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ صِفْهُمْ لَنَا، جَلِّهِمْ لَنَا أَنْ لَا نَكُونَ مِنْهُمْ ، وَنَحْنُ لَا نَعْلَمُ ، قَالَ: أَمَا إِنَّهُمْ إِخْوَانُكُمْ، وَمِنْ جِلْدَتِكُمْ، وَيَأْخُذُونَ مِنَ اللَّيْلِ كَمَا تَأْخُذُونَ ، وَلَكِنَّهُمْ أَقْوَامٌ إِذَا خَلَوْا بِمَحَارِمِ اللَّهِ انْتَهَكُوهَا
আমি জানি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের মধ্যে একদল তিহামা পাহাড়ের মত শুভ্র নেক আমল নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু আল্লাহ তাদের সেসব নেক আমলকে লাপাত্তা করে দিবেন। সাওবান বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদেরকে তাদের পরিচয় জানিয়ে দিন; যেন অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বললেন, তারা তোমাদেরই ভাই, তোমাদেরই বংশধর। তারা তোমাদের মত তাহাজ্জুদগুজার। কিন্তু তারা নির্জনে নিভৃতে আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হয়।(ইবন মাজাহ ৪২৪৫)
পরিশেষে আমরা আবারো দোয়া করছি, আল্লাহ তাআলা যেন আপনাদের পরস্পরকে পরস্পরের জন্য চোখের শীতলতা ও অন্তরের প্রশান্তি বানিয়ে দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বদ্রষ্টা ও সর্বশ্রোতা।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী