জিজ্ঞাসা–৪২৯: আস্সালামুআলাইকুম। ভাই, আমার স্বামী অনেক ভালো মানুষ। আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া এই মানুষটির জন্য। আমার স্বামী কোনো মানুষের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করে না। যেকোনো মানুষের বিপদে নিজে থেকে এগিয়ে যায়, মেহমানদারী খুব পছন্দ করেন, বাবা মা ভাসুর দেবর মানে পরিবারের সবাইকে খুব ভালোবাসেন,, মামুষের বিপদে তাড়াতাড়ি চলে যাবে যত রাতই হোক, বিপদে পড়লে আল্লাহ কে ডাকবে। সব কিছু আল্লাহর রহমতে ঠিক আছে,, শুধু একটাই সমস্যা, সেটা হল, উনি নামাজ পড়েন না। যেটাই আসলে কাজ সেটাই করেন না, আমি অনেক পদ্ধতি অবলম্বন করেছি যেমন না খেয়ে থাকতাম। কান্নাকাটি করতাম, অনেক হাদিস শুনাতাম। তারপরও কিছু হয় নি। এমন কি রমজান মাসে রোজা রাখে সব। প্রথম ৬/৭ দিন নামাজ পড়ে। এরপরে আর পড়ে না। এখন আমার প্রশ্ন হলো , ১) আমি কি কি করলে উনি নামাজ পড়বেন? ২) স্ত্রী হিসেবে এমন যদি কিছু থাকে যে আমি আমল করলে উনি নামাজ পড়বেন তাহলে সেটা বলুন? আমার সারাদিন মাথায় ঘুরে আমি কিভাবে উনাকে নামাজ পড়াবো। হে ভাই, আমাকে একটু উপকার করেন। জরুরি একটু জানাবেন। কারণ উনি তো অনেক গুনাহগার হচ্ছেন। (আল্লাহর কাছে সবসময় চাইছি,, চাইতেই থাকবো আমি)। আপনারা দোয়া করবেন আমার আর আমার পরিবারের জন্য।–Jannatul ferdoush
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله
এক: আপনার কথা থেকে মনে হচ্ছে, আপনার স্বামীর ক্ষেত্রে অভিমানের চাইতে ভালবাসাপূর্ণ আচরণই কার্যকর হবে বেশি। তাছাড়া অতিরিক্ত অভিমান অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়। তাই ভালবাসাপূর্ণ আচরণ, আদর-সোহাগ দিয়ে প্রথমে তার পরিপূর্ণ আস্থা অর্জন করুন। আচার-আচরণে মার্জিত থাকুন। তার সমালোচনা না করে তার চেহারা, বা বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদির প্রশংসা করুন। তার অন্তরে এই আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলুন যে, স্বামী হিসেবে তিনি শ্রেষ্ঠ। এটা আপনার প্রতি তার ভালবাসাকে আর তাঁতিয়ে তুলবে এবং আপনি হয়ে ওঠবেন তার কাছে ‘শ্রেষ্ঠ স্ত্রী’।
দুই: আপনার উক্ত রোমান্টিকতার ভেতর দিয়েই সমানতালে আপনি তাকে নামায আদায়ের দাওয়াত দিতে থাকুন। খেয়াল রাখতে হবে, আপনার দাওয়াত যেন এতটা দীর্ঘ না হয় যে, এতে আপনাদের রোমান্টিকতায় ছেদ পড়ে কিংবা আপনার স্বামীর কাছে তা আপনার ‘ঘ্যান ঘ্যান আচরণ’ মনে হয়। আর দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে আদর্শ পদ্ধতি হবে সংক্ষেপে নিম্নরূপ:
১। তাকে স্মরণ করিয়ে দিন যে, নামায একটি ফরয ইবাদত এবং ঈমানের পর নামায ইসলামের সবচেয়ে মহান রুকন।
২। তাকে নামাযের কিছু ফযিলত অবহিত করুন; যেমন- আল্লাহ্ বান্দার উপর যা কিছু ফরয করেছেন তার মধ্যে নামায সর্বোত্তম। বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। একটিমাত্র সেজদার মাধ্যমে বান্দার এক ধাপ মর্যাদা সমুন্নত হয় এবং একটি পাপ মোচন হয়…ইত্যাদি নামাযের ফযিলতের ব্যাপারে আরও যা কিছু বর্ণিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আশা করি, তার অন্তর খুলে যাবে এবং নামায তার চক্ষুশীতলে পরিণত হবে।
৩। মাঝে মাঝে তাকে আল্লাহ্র সাক্ষাত, মৃত্যু ও কবরের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। নামায বর্জনকারীর যে, খারাপ মৃত্যু হয় ও কবরে আযাব হয় তাকে সেটা স্মরণ করিয়ে দিন।
৪। তাকে মাঝে মাঝে স্মরণ করিয়ে দিন, নির্ধারিত সময় এর চেয়ে দেরীতে নামায আদায় করা কবিরা গুনাহ্। আল্লাহ্ তাআলা বলেন, فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ ‘সেসব নামাযীদের জন্য ধ্বংস যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর।’ (সূরা মাউন, আয়াত ৪,৫)
৫। তাকে নামায সংক্রান্ত, নামায বর্জনকারী ও অবহেলাকারীর শাস্তি সংক্রান্ত কিছু পুস্তিকা উপহার দিন।
৬। উপর্যুপরি সে নামায ত্যাগ করতে থাকলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার মৃদু হুমকি দিতে পারেন। আর এই হুমকিটা দিবেন আপনাদের রোমান্টিকতার মুহূর্তগুলোতে। লক্ষ্য রাখতে হবে, এই অভিমান যেন খুব বেশি জোরালো না হয়।
তিন: প্রিয় বোন, আপনার উক্ত মেহনত ও দরদ আরও বেশি কার্যকরী ও সহজ হবে, যদি তাকে কোন হক্কানী আলেমের সঙ্গে সম্পর্ক করিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি প্রথমে তাকে কোন হক্কানী আলেমের বয়ান শোনার জন্য আগ্রহী করে তুলতে পারেন। ওলামাদের মজলিসে আসা যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে পারেন। অথবা তাকে দাওয়াত-তাবলিগে কিছু সময় দেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)
প্রিয় বোন, উক্ত মেহনত আপনাকে চালিয়ে যেতে হবে প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি তার হেদায়তের জন্যও দোয়া করতে হবে নিয়মিত। কোন অবস্থায় আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। আশাহত হয়ে চেষ্টা কিংবা দোয়া বর্জন করবেন না। ইনশাআল্লাহ একদিন না একদিন সাফল্য পাবেন। وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সূরা ত্বলাক : ৩) রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দোয়া ব্যতীত। (তিরমিযী ২১৩৯)
তথাপি যদি তিনি থেকে ফিরে না আসেন, তাহলে আপনি দায়িত্বমুক্ত বলে বিবেচিত হবেন এবং উক্ত চেষ্টা ও দোয়ার জন্য অশেষ সাওয়াবের অধিকারী হবেন। আমরাও দোয়া করি, আল্লাহ আপনার স্বামীকে পরিপূর্ণ হেদায়াত দান করুন। আমিন।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন– ☞ ☞ ☞ ☞ ☞ স্ত্রীর ঋতুকালীন স্বামী কোনো উপায়ে চাহিদা পূরণ করতে পারবে কি? ☞ রুমে কেবল স্বামী স্ত্রী থাকলে বস্ত্রহীন হয়ে কি ঘুমানো যায়? ☞ ‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর জান্নাত’ কথাটা সত্য কিনা ☞ স্বামী ও স্ত্রী কি একসাথে জামাতে সালাত অাদায় করতে পারেন? ☞ বৌয়ের দুধ স্বামীর মুখে দিতে পারবে কি? ☞ হায়েয অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে কী করণীয়? ☞ বাবা-মায়ের কথায় স্ত্রীকে তালাক দেয়া যাবে কিনা? ☞ রোজা রেখে স্ত্রীকে ধরে বা জড়িয়ে শোয়া যাবে? ☞ চেহারা অসুন্দর আলেম-পাত্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে গুনাহ হবে কি? ☞ আযানের সময় মহিলাদের মাথায় কাপড় দেওয়া ☞ ফরজ গোসল না করে ভুলে নামাজ আদায় করে ফেললে কী করণীয়? ☞ নামাযে নারীর ইমামতি ☞ ঘুমের কারণে দেরিতে ফজরের নামাজ পড়লে গুনাহ হবে কি? ☞ জীবনের কাযা নামাযগুলো কিভাবে আদায় করবেন? ☞ মহিলারা সবখানে যেতে পারলে মসজিদে কেন পারবে না? ☞ গর্ভবতী-মায়ের নামাজ এবং কিছু পরামর্শ ☞ নারী-পুরুষের নামাজের ভিন্নতা প্রসঙ্গে ☞ ঘরের মাহরাম মহিলাদের নিয়ে জামাত ☞ মহিলারা নামাজে কিভাবে দাঁড়াবে ?