ইমামের পিছনে কেরাত পড়লে নামাজ হবে কিনা?

জিজ্ঞাসা১৫৭: ইমামের পিছনে কেরাত পড়লে নামাজ হবে কিনা?farhan : [email protected]

জবাব: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

 مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ فَقِرَاءَتُهُ لَهُ قِرَاءَةٌ

‘যে ব্যক্তির ইমাম আছে তার ইমামের কেরাতই তার জন্য কেরাত বলে ধর্তব্য হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৫০, সুনানুল বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৭২৩, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১১৮৬, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৬৪৩, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-১০৫০, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৮০০, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-২৭৯৭, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৭৫৭৯, মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ-৯৬, মুসনাদে ইমামে আজম-৬১)   

একারণে এই বিষয়ে হানাফী মাযহাবের ফাতওয়া হলো, যে কোন ধরনের নামাযে মুক্তাদির জন্য যে কোন কিরাত ওয়াজিব নয়। বরং মুক্তাদী চুপ থাকবে। কেউ যদি ইমামমের পিছনে কিরাত পড়ে তাহলে তার নামায আদায় হয়ে গেলেও মাকরূহের সহিত আদায় হবে।

হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ আলেম আল্লামা বুরহানুদ্দীন মরগনানী রহ. বলেন,
ولا يقرأ المؤتم خلف الإمام অর্থাৎ, মুক্তাদী ইমামের পিছনে কিরাত পড়বে না।
(শরহ বেদায়াতুল মুবতাদী ১/৫৫)

মাউসূআতুল ফিকহিয়্যা-এর মধ্যে রয়েছে ,
وذهب الحنفية إلى أن المأموم لا يقرأ مطلقا خلف الإمام حتى في الصلاة السرية ، ويكره تحريما أن يقرأ خلف الإمام অর্থাৎ, এবং হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কিরাম এই দিকে গিয়েছেন যে, মুক্তাদী ইমামের পিছনে কোন অবস্থায় কিরাত পড়বে না। এমন কি নিরবে কিরাত পড়ার নামাযেও। এবং ইমামের পিছনে কিরাত পড়া মাকরূহে তাহরীমী।
(আল মাউসূআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা ৩৩/৫৩)

উল্লেখ্য, ইমামের কেরাতই মুক্তাদির পক্ষে যথেষ্ট- এটি সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীন-যুগের ‘আমলে মুতাওয়াতির’ (যুগ পরম্পরায় চলে আসা ব্যাপক ও অনুসৃত কর্মধারা)-এর মাধ্যমে প্রমাণিত। এর বিশুদ্ধতা তাঁদের কাছে ছিল এক স্বীকৃত বিষয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, যায়েদ ইবনে ছাবিত, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ ও আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. প্রমুখের আমলও এ অনুযায়ীই ছিল। যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্তাদিকে ইমামের পেছনে কুরআন পড়ার নির্দেশ দিতেন, তাহলে তাঁদের সেটা জানা থাকত। এবং তাঁরা সে অনুযায়ীই আমল করতেন আর মানুষকে শেখাতেন। অথচ তাঁদের আমল ছিল ইমামের পেছনে কুরআন না পড়া এবং তাঁরা মানুষকে এরই তালীম দিয়েছেন।(সুনানে ইবনে মাজাহ-৬২ সহীহ মুসলিম-১/১৭৪, হাদীস নং-৯৩২ আবু দাঊদ ৯৬ : ১ইবনি আবি শাইবাহ ৩৭৭: ১আবদুর রাজ্জাক ১২৮ : ২ মুয়াত্তা মুহাম্মদ ৯৮ মজমাউজজাওয়াইদ ১১০:২আল জাওহারুন নাকীহ ১৬২ : ১আছারুসসুনান ১১৬ : ১উমদাতুল ক্বারী ৬৭:৩ফাতহুল মুলহিম ২০:২ ইলাউস সুনান ৪৩:৪;তাবারী ৩৭৮ : ১১ তাফসীর ইবনে কাসীর ১ :২৮১)
এজন্যই ইমাম আহমদ রহ. বলতেন, “আমরা কোন মুসলিম মনীষীর কাছ থেকে কখনো শুনি নি যে, যদি ইমাম জোরে কেরাত পড়েন আর মুক্তাদী নীরব থাকে, তাহলে মুক্তাদীর নামায হবে না।” তি্নি আরও বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবী, এবং তাবেঈন, হিজাজ এর জনগণ থেকে মালিক, ইরাকের মনীষীদের থেকে ছাওরী, সিরিয়ার জনগণ থেকে আওযায়ী এবং মিশর থেকে লাইছ, কেউ বলেননি, যে ব্যক্তির ইমাম তিলাওয়াত করল আর সে তা করল না তার নামায শুদ্ধ হবে না ।” (আল মুগনী ৬০২ : ১ )

والله اعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen + 15 =