এক ব্যক্তি এনজিওতে চাকরিরত স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দিয়েছে…

জিজ্ঞাসা–৮৫৬: আসসালামুয়ালাইকুম। হুযুর, আমার একটা মাসায়েল জরুরী ভিত্তিতে জানার ছিল। আমার স্ত্রী চাকরির কারণে ঢাকার বাইরে থাকে। উল্লেখ্য সে একটা এনজিওতে চাকরি করে। আমরা গোপনে বিয়ে করে এক সাথে থাকতেছি ৩ বছর ধরে। আমাদের মাঝে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে সমস্যা হয়ে থাকে। মূলত দুজনের স্বভাব দুই ধরনের। এ নিয়ে আগে এক বার করে করে দুই তালাক দিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে পুণরায় সংসার জীবন চালিয়ে যাই। গতকাল আমি বিকাল চারটা পনের মিনিটের দিকে যুহরের নামায আদায় করেছে কিনা জিজ্ঞেস করলে সে আদায় করেনি বলে। আমি তাকে নামাজ আদায় করতে বললে সে বাসায় গিয়ে পড়ার কথা বলে। কিন্তু তার কর্মস্থল থেকে বাসায় গিয়ে নামাজ পড়লে কাযা হয়ে যাবে বিধায় তাকে ওখানেই পড়ে নিতে বলি। সে ওখানে পড়তে অস্বীকার করলে আমি তাকে ঢাকায় এসে একটা মিমাংসার জন্য আসার তারিখ নির্ধারণ করতে বললে একমাস পরে আসবে বলে। কিন্তু আমি তাড়াতাড়ি সময়ে আসতে বললে সে তা অস্বীকার করে ওই মুহূর্তে। আমি তাকে না আসলে তালাক দিব বললেও সে বারবার অস্বীকার করতে থাকে। এ অবস্থায় আমি তাকে তিন তালাক বলি। কিন্তু সে সময় দিব বা দিলাম কোন কিছু মুখে উচ্চারণ না করলেও মনের মধ্যে আমার ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছাই ছিল। এমতাবস্থায় হুজুরের কাছে আমার জানার বিষয় ১। স্ত্রী কি আমার জন্য হারাম হয়ে গেছে ২। বা অন্য কোন উপায় আছে কি না? ৩। অনেক চেষ্টার পরেও যদি বনিবনা না হওয়ায় কারণে তালাক দেওয়াতে কি শিরক বা কুফরী তুল্য পাপ হবে? হুজুরের কাছে বিনীত অনুরোধ যেন উত্তর দিয়ে উপকৃত করেন। জরুরী বিবেচনায় মেসেঞ্জারেও দেওয়া প্রশ্নটা।–নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. প্রিয় দীনি ভাই, আপানার প্রশ্নের বিবরণ থেকে বুঝা যাচ্ছে, আপনাদের বিয়েটা ছিল প্রেমের বিয়ে। এজন্য আমরা বলব, আপনাদের উক্ত নাজুক পরিস্থিতির পেছনে কারণ একটাই– তাহল, আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন তা থেকে দূরে না থাকা। বিয়ের পূর্বে প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা হারাম ছিল। আর আপানারা তা করেছেন! ইসলাম বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর মতামতকে ‘চূড়ান্ত মতামত’ হিসাবে সাব্যস্ত করলেও পাশাপাশি অভিভাবকের মতামতকেও সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। আর আপনারা তার পরোয়া করেন নি! ইসলামের দৃৃষ্টিতে গোপন বিয়ে একটি অসামাজিক অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ ঘৃনিত কাজ; যা আপনারা করেছেন! সর্বোপরি নারীর প্রধান কাজ ও দায়িত্ব হচ্ছে স্বামীর খেদমত করা, তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা ও মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করা। যদি চাকরি করতে গিয়ে এসব দায়িত্ব পালনে ব্যাপক অসুবিধা হয় তাহলে তার জন্য চাকরি করা জায়েয হয় না। অথচ আপনি আপনার স্ত্রীকে চাকরির জন্য দূর-অবস্থানে পাঠিয়ে দিয়েছেন! এখন আবার আদর্শিক-দ্বন্ধের কারণে তিন তালাকও দিয়ে দিয়েছেন! এসবই ছিল আপনার/আপনাদের অন্যায়ের ধারবাহিকতা। ফলে যা হওয়ার তা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা যথার্থ বলেছেন,

وَمَآ أَصَابَكُمْ مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُواْ عَن كَثِيرٍ

তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন। (সূরা শুরা ৩০)

দুই. যাই হোক, এখন তিন তালাক দেয়ার মাধ্যমে আপনাদের মাঝে বিবাহ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। (আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ৭/৩৬৪ দারুল ফিকর)

হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাযি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

ثَلاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ : النِّكَاحُ ، وَالطَّلاقُ ، وَالرَّجْعَةُ

তিনটি বিষয় এমন রয়েছে যা গোস্বায় হোক বা হাসি ঠাট্টায় হোক সর্বাবস্থায় কার্যকরী হয়ে থাকে। বিবাহ, তালাক ও রজয়াত। (আবু দাউদ ২১৯৪ তিরমিযি ১১৮৪)

তিন. এখন যদি আপনি আপানার স্ত্রীকে পুনরায় বরণ করে নেয়ার ইচ্ছা পোষণ করে থাকেন তাহলে এর জন্য একমাত্র বৈধ ব্যবস্থা হলো ‘হালালাহ’ করা। অর্থাৎ আপানার স্ত্রীকে অন্য স্বামীর নিকট নিয়মিত বিবাহ দেয়া এবং তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠা। অতঃপর তাদের মাঝে সংসার জীবনে কোনো কারণে যদি ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়; তবে ইদ্দত পালনের পর তাকে আপনি পুনরায় বিয়ে করতে পারবেন। আপনার স্ত্রীকে পুনরায় বরণ করে নেয়ার এই ছাড়া দ্বিতীয় কোন রাস্তা নেই।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

অতঃপর স্বামী যদি স্ত্রীকে তৃতীয় তালাক দেয় তবে অন্য লোকের সাথে বিবাহ দেয়া ব্যতিত সেই স্ত্রী (প্রথম) স্বামীর জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। (সূরা বাকারা-২৩০)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × one =