এক ব্যক্তি স্ত্রীর অনুরোধে তার ছোট বোনকে বিয়ে করে নিয়েছে…

জিজ্ঞাসা–৬২০: আস্সালামুআলাইকুম। ১ বছর আগে এক বিশেষ কারণ বসত আমার বউ এর অনুরোধে তার ছোট বোনকে বিয়ে করি তবে সেটা আমরা ৩ জন ছাড়া অন্য কেউ জানতো না। আজ ১ বছর পর জানতে পারলাম এটা হারাম হয়েছে। আমাদের মধ্যে ভালোবাসা এতো বেশি যে কাউকে ছেড়ে দিলে সেও বাচঁবেনা এবং আমিওনা। সূরা আন নিসা ২৩ নম্বর আয়াতের শেষের দিকে লিখা আছে ”তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” . আমরা এর জন্য প্রতিদিন আল্লাহর কাছে মাফ চাইলে উনি কি আমাদের মাফ করে দিবেন না? দয়া করে জানাবেন।–মো: ইমতিয়াজ।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক বহাল থাকা অবস্থায় তার বোনকে বিবাহ করা বৈধ নয়। করলেও সে বিবাহ ‘বিবাহ’ হয় না এবং শালী তথা স্ত্রীর বোন ‘স্ত্রী’ হয় না। তবে স্ত্রীর চূড়ান্ত তালাক ও ইদ্দত পালনের পর কিংবা মৃত্যু হলে তার অন্য বোনকে বিবাহ করা জায়েয। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, وَأَنْ تَجْمَعُوا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা (হারাম করা হয়েছে) (সূরা নিসা ২৩)

ইমাম কুরতুবি রহ. এর তাফসিরে বলেন,

وأجمعت الأمة على منع جمعهما في عقد واحد من النكاح لهذه الآية

মুসলিম উম্মাহ এব্যপারে একমত যে, দুই বোনকে এক সঙ্গে বিয়ে করা নিষেধ। (আল জামি’ লি আহকামিল কুরআন ৫//১১৬)

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা (১৮/২৩৫)-তে এসেছে,

الجمع بين الأختين في عقد نكاح محرم بالنصوص الصريحة من الكتاب والسنة …وقد أجمع على ذلك أهل العلم من الصحابة رضي الله عنهم والتابعين وسائر السلف ، وقد حكى ابن المنذر الإجماع على القول به

কোরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমাণিত যে, এক বোন স্ত্রী হিসেবে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বোনকে বিবাহ করা হারাম। এবিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবিঈগণ এবং সমস্ত পূর্বসূরী ফকিহগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন এবং ইবনুল মুনযির রহ. এবিষয়ে উম্মতের ইজমা (ঐকমত্য ) নকল করেছেন।

দুই. সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী শরীয়তের দৃষ্টিতে সে তো আপানার স্ত্রীই হয় নি। অথচ আপনি বলছেন, ‘আমাদের মধ্যে ভালোবাসা এতো বেশি যে কাউকে ছেড়ে দিলে সেও বাচঁবেনা এবং আমিওনা।’  এর জবাব আমাদের কাছে “আস্তাগফিরুল্লাহ’ ‘নাউযুবিল্লাহ’ ছাড়া আর কিছুই নেই! কেননা, সে তো আপনার জন্য পূর্বের মত এখনও পরনারী এবং হারাম।

আর আল্লাহ বলেছেন,

وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (সূরা বনী ইসরাইল ৩২)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

لَأَنْ يُطْعَنَ فِي رَأْسِ أَحَدِكُمْ بِمِخْيَطٍ مِنْ حَدِيدٍ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمَسَّ امْرَأَةً لَا تَحِلُّ لَهُ

নিশ্চয় তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ওই মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভাল, যে তার জন্য হালাল নয়। (তাবারানী, ছহীহুল জামে’ ৪৯২১)

অতএব, যদি আপনি আসলেই নিষ্কলুষভাবে আল্লাহর কাছে তাওবা করতে চান তাহলে প্রথমে হারামের সকল পথ বন্ধ করে দিন। এক কথায়, তার সাথে কথা বলা থেকে শুরু করে সকল অনৈতিক সম্পর্ক ত্যাগ করুন।

তিন. ভাবতে কষ্ট হচ্ছে যে, আপনি আপনার এই ব্যভিচার কর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য  সূরা নিসার ২৩ নং আয়াত থেকে একটি ভুল শিক্ষা নিয়ে বসে আছেন। অথচ إلا ما قد سلف ‘তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা।’ এর তাফসিরে ইবন আব্বাস রাযি. বলেন,

 كان أهل الجاهلية يحرمون ما حرم الله ، إلا امرأة الأب والجمع بين الأختين ، فأنزل الله : ( ولا تنكحوا ما نكح آباؤكم من النساء ) ( وأن تجمعوا بين الأختين )

যে সকল আত্মীয়কে বিয়ে করা আল্লাহ তাআলা হারাম করেছেন, তাদেরকে বিয়ে করা জাহিলিয়াত যুগের লোকেরাও হারাম বলে জানত। শুধুমাত্র বিমাতা ও দুই বোনকে এক সাথে বিয়ে করাকে তারা হালাল মনে করত। তাই আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদের মাধ্যমে এদেরকেও হারাম করেছেন। (তাফসিরে ইবন কাসীর ৪/৪০৩)

হাফেজ ইবন কাসীর রহ. বলেন,

على كل تقدير فهو حرام في هذه الأمة ، مبشع غاية التبشع ولهذا قال : ( إنه كان فاحشة ومقتا وساء سبيلا )

উক্ত সম্বন্ধ এই উম্মতের জন্য হারাম ও অত্যন্ত জঘন্য কাজ। তাই আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় তা অশ্লীল, ক্রোধজনক ও নিকৃষ্ট আচরণ। (প্রাগুক্ত)

والله اعلم بالصواب

��ন্তব্য

  1. নিশ্চয় তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ওই মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভাল, যে তার জন্য হালাল নয়।

    এখানে স্পর্শ বলতে কি বুঝাইতে চাইছে আসলে!? ব্যাপারটা পরিষ্কার না। জানালে উপকৃত হব ইন শা আল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + 17 =