কিভাবে নিজেকে অশ্লীল চিন্তা থেকে দূরে রাখা যাবে?

জিজ্ঞাসা–৮৬০: কিভাবে নিজেকে খারাপ ও অশ্লীল চিন্তা ফিকির থেকে দূরে রাখা যাবে?–আব্দুল্লাহ আল মামুন।

জবাব:

এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, আসুন, আমরা প্রথমে আল্লাহ তাআলার এই বাণীটি পড়ে নেই–

حَتَّى إِذَا مَا جَاءُوهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُودُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ. وَقَالُوا لِجُلُودِهِمْ لِمَ شَهِدْتُمْ عَلَيْنَا قَالُوا أَنْطَقَنَا اللَّهُ الَّذِي أَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُوَ خَلَقَكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের চামড়া তাদের বিরুদ্ধে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষী দেবে, আর তারা তাদের চামড়াগুলোকে বলবে, কেন তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে? তারা বলবে, আল্লাহ আমাদের বাক্শক্তি দিয়েছেন যিনি সবকিছুকে বাক্শক্তি দিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁরই প্রতি তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা হা-মীম সেজদাহ ২০-২১)

সুতরাং যখন অশ্লীল চিন্তা মাথায় কিলবিল করবে কিংবা গুনাহয় লিপ্ত হওয়ার উদগ্র বাসনা সৃষ্টি হবে, তখন স্মরণ করবেন যে, আপনার এইসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সেই দিন আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে, যে দিন এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিয়ন্ত্রণ আপানার হাতে নেই!

দুই. হৃদয়ে ঈমানের বীজ যত্ন করে রাখুন। যখন এ-বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বেড়ে ওঠে, তখন তা দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানের কামিয়াবি নিয়ে আসে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

اَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِيْنَ آمَنُوْا اَنْ تَخْشَعَ قُلُوْبُهُمْ لِذِكْرِ اللهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ

যারা ঈমান আনে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর স্মরণে ও যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিগলিত হওয়ার সময় কি আসে নি? (সূরা হাদীদ ১৬)

যখন নগ্ন ও অশ্লীল চিন্তা দ্বারা আপনি তাড়িত হবেন তখনই সঙ্গে সঙ্গে আয়াতটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা করবে। এরপর নিজেকে সম্বোধন করে ব্লুন, ‘ঈমানদারের কি এখনও আল্লাহকে ভয় করার সময় হয় নি?’

তিন. কথায় আছে, ‘অলস মস্তিস্ক শয়তানের ঘর।’ অলস মস্তিস্কে এ জাতীয় ফালতু ভাবনা বেশি আসে। সুতরাং অবসর সময় কাটাবেন না। সময়কে কাজে লাগাতে সদা সচেষ্ট থাকবেন। যখনই অবসর থাকবেন তখনই নিজেকে কোনো কাজে ব্যস্ত করে নিবেন। কাজটি দুনিয়ার বৈধ কাজ হলেও অসুবিধা নেই। আর যদি কাজটি হয় ভাল বই পড়া, জিকির-মোরাকাবা করা, তেলাওয়াত করা তাহলে তো সবচে’ ভাল।  ডা. আব্দুল  হাই আরেফী রহ. বলতেন, কাজের ভেতরে কাজ ঢুকিয়ে দাও। অবসর আছো তো কোনো কাজের প্রোগ্রাম করে নাও। হাতে একটি কাজ আছে তো আরেকটি কাজের প্রোগ্রাম বানিয়ে নাও।

চার. হারাম জিনিস থেকে দৃষ্টিকে সংযত রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। যেমন- অশ্লীল ছবি বা ভিডিও ইত্যাদি; যা অবৈধ যৌনাচার ও মহাপাপে জড়িয়ে পড়তে মানুষকে প্ররোচিত করে এবং মনের মধ্যে খারাপ প্রভাব গভীরভাবে জিইয়ে রাখে। এসব থেকে আমরা আল্লাহর আশ্রয় চাই। আল্লাহ তাআলা বলেন,

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ

মুমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। (সূরা আন-নূর ৩০)

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, আপনি জিজ্ঞাসা নং–১২৪,জিজ্ঞসা নং–৮২৪জিজ্ঞাসা নং–৮৩৩ পড়ে দেখুন। ইনশা-আল্লাহ উপকৃত হবেন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

��ন্তব্য

  1. আপনাদের লেখাগুলো ফেইসবুক পেইজে কপি করে শেয়ার দিতে পারি?
    জাযাকাল্লাহ অগ্রিম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − 4 =