ক্রয়-বিক্রয়ের নামে অভিনব সুদ

জিজ্ঞাসা–৭০৫: আমাদের এলাকায় একটি বড় সমিতি আছে। উক্ত সমিতি মানুষকে সুদমুক্তভাবে ঋণ দিয়ে থাকে। এর একটা শরীয়া বোর্ডও আছে। বাস্তবতা হল, সেখানে যারা আছে তাদের অধিকাংশের উপর আমার আস্থা নেই। যাই হোক, তাদের কাছে কেউ ঋণ নিতে গেলে, তারা এভাবে ঋণের ব্যবস্থা করে যে, তাদের (সমিতির) রড-সিমেন্টের দোকান আছে। তারা ঋণগ্রহীতাকে ঐ দোকানে নিয়ে যায়। তারপর ঋণগ্রহীতার নামে ঐ দোকান থেকে একটা মেমো করে নেয়। অনেক সময় ঋণগ্রহীতাও যায় না; বরং তারা নিজেরাই কাজটি করে নেয়। তারপর যত টাকার মেমো হয় তার চেয়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কমের টাকা একটা নির্দিষ্ট মেয়াদে ঋণগ্রহীতাকে ঋণ দেয়। কিন্তু তার থেকে উশুল করার সময় মেমোতে যত টাকা লেখা তাই কিস্তিতে উশুল করে। আমার প্রশ্ন হল, এভাবে ঋণ নেয়া কিংবা দেয়া হালাল কিনা?–আব্দুল হামিদ।

জবাব: প্রিয় ভাই, সমিতির দোকান থেকে ঋণগ্রহীতার নামে মেমো করার অর্থ হল, ওই দোকান থেকে ঋণগ্রহীতার নামে কোনো পণ্য বাকিতে ক্রয় করা। তারপর মেমোর চাইতে কম টাকা ঋণগ্রহীতাকে দেয়ার অর্থ হল, পুনরায় ঋণগ্রহীতা সমিতির কাছে ওই পণ্যটাই আরো কম মূল্যে নগদে বিক্রি করে দেয়া। এভাবে মূলত সমিতির পণ্য সমিতির কাছেই থেকে যায় আর সমিতি ঋণগ্রহীতাকে নির্দিষ্ট অংকের ঋণ দেয় এবং তা পরিশোধের জন্য নির্ধারিত সময় দেয় এবং এভাবে সমিতি ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে একটা নির্ধারিত অংকের টাকা অতিরিক্ত নেয়ার ফন্দি করে।

শরিয়তের দৃষ্টিতে এটাকে বলা হয়, ‘বাই ঈনা’ বা পাতানো ক্রয়-বিক্রয়। কেননা, এখানে ক্রয়-বিক্রয়টা হয় নামেমাত্র। বাস্তবে ক্রয়-বিক্রয়ের কোনো প্রতিফলন হয় না। এটা বাহ্যত ক্রয়-বিক্রয় হলেও উদ্দেশ্যের বিবেচনায় সুদ। তাই এ ধরণের লেনদেন শরিয়তের দৃষ্টিতে  হারাম। এর দলিল হল,

১. আব্দুল্লাহ ইবনু উমর রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ -কে বলতে শুনেছি যে,

 إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِينَةِ ، وَأَخَذْتُمْ أَذْنَابَ الْبَقَرِ ، وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ ، وَتَرَكْتُمُ الْجِهَادَ ، سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ذُلًّا لَا يَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُ

যখন তোমরা ঈনা পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় করবে, গরুর লেজ আঁকড়ে ধরবে, কৃষিকাজেই সন্তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর অপমান চাপিয়ে দিবেন। তোমরা তোমাদের দ্বীনে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদেরকে এই অপমান থেকে মুক্তি দিবেন না। (আবু দাউদ ৩৪৬২)

২. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযি.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তির নিকট এক টুকরা রেশমি কাপড় ১০০ দেরহামে (বাকিতে) বিক্রি করল। পুনরায় সে তা ৫০ দেরহামে ক্রয় করে নিল (এর হুকুম কী?)। তিনি উত্তর দেন, دَرَاهِم بِدَرَاهِم مُتَفَاضِلَة دَخَلَتْ بَيْنهَا حَرِيرَة অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে দেরহাম ক্রয়-বিক্রয়ের মাঝে এক টুকরা রেশমি কাপড় রাখা হয়েছে মাত্র। (তাহযীবুস সুনান ৯/২৪১)

৩. তিনি আরো বলেন, اِتَّقُوا هَذِهِ الْعِينَة لَا تَبِيعُوا دَرَاهِم بِدَرَاهِم بَيْنهمَا حَرِيرَة তোমরা এ ধরণের ‘ঈনা’ থেকে দূরে থাক। এক টুকরা রেশমি কাপড় মাঝখানে রেখে দেরহামের ক্রয়-বিক্রয় করো না। (হাশিয়াতু ইবনিল কায়্যিম মা’ আ’উনিল মা’বুদ ৯/২৪১)

৪. অপর বর্ণনায় এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযি. ও আনাস রাযি.-কে ‘বাই ঈনা’ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা উভয়ে উত্তর দেন, إِنَّ اللهَ لاَ يُخْدَعُ، هَذَا مِمَّا حَرَّمَ اللهُ وَرَسُولُهُ নিশ্চয় আল্লাহকে ধোঁকা দেয়া যায় না। এটা এমন লেনদেন, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল হারাম করেছেন। (তাহযীবুস সুনান ৯/২৪২)

والله اعلم بالصواب
আরো পড়ুন–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + three =