জিজ্ঞাসা–১৩২: শুনেছি, ‘মাংস’ শব্দটা হিন্দুদের বিশেষ পরিভাষা বিধায় গোশতকে মাংস বলা না-জায়েয। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।–আতা উল্লাহ। চাঁদপুর।
জবাব: ইসলামে কোনো কিছু জায়েয/না-জায়েয হতে হলে প্রমাণ লাগে। আর গোশতকে ‘মাংস’ বলা না-জায়েয আখ্যায়িত দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো দলিল নেই। সুতরাং বিষয়টিকে না-জায়েযের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। তবে যারা ‘মাংস’ না বলে ‘গোশত’ বলতে চান তাদের উদ্দেশ্য ভালো বলেই মনে হয়। মূলতঃ তারা ইসলামী স্বকীয়তাকে বজায় রাখতে ও সম্ভাব্য শাব্দিক অপসংস্কৃতির ছোবল থেকে বাঁচতে চান। তাদের উদ্দেশ্য যেহেতু সৎ , সেহেতু তাদের সমালোচনা করা বা তাদেরকে কটাক্ষ করাও উচিৎ হবে না।
আসলে অভিধানগুলো মন্থন করে আমি দেখেছি, শব্দটা ‘মাংস’। ‘মাংশ’ নয়। শব্দটি সংস্কৃত থেকে আসলেও এটি কোনো কালেই ‘মাংশ’ বানানে ছিলো না। সকল বাংলা অভিধানেই শব্দটির বানান ‘মাংস’ই লেখা হয়েছে। (দেখুনঃ ব্যবহারিক বাংলা অভিধান পৃ. ৯৬৮; সংসদ বাংলা অভিধান পৃ. ৬৯৩; আধুনিক বঙ্গভাষার অভিধান চলন্তিকা পৃ. ৫৮২)
‘মাংস’ শব্দটির উৎস হচ্ছে সংস্কৃত (মন + স) থেকে। বাংলা একাডেমি ‘মাংস’ শব্দের অর্থ লিখেছে, ‘প্রাণীর দেহের হাড় ও চামড়ার মধ্যবর্তী শরীরের অংশবিশেষ’। (ব্যবহারিক বাংলা অভিধান পৃ. ৯৬৮ ) অন্যান্য অভিধানেও এ জাতীয় অর্থ ছাড়া অন্য কোনো অর্থ লেখা হয় নি।
সুতরাং ‘মাংস’কে ‘মাংশ’ মনে করে ‘মায়ের (গরুর) অংশ’ ব্যাসবাক্যে সন্ধিবিচ্ছেদ (!) করা বাংলা ব্যকরণের কোনো নিয়মে পড়ে না বিধায় এ ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হবে না। তাছাড়া বাংলা ভাষার কোনো বিশেষজ্ঞ ( মুসলিম কিংবা হিন্দু) ‘মাংস’কে ‘মাংশ’ শব্দের পরিবর্তিত রূপ বলে আখ্যায়িত করে তাকে হিন্দুদের বিশ্বাসজাত কোনো শব্দ বলে উল্লেখ করেন নি, যেমনটা করেছেন কীর্তন বেদী, স্নাতক, আচার্য, উপাচার্য, বিশ্বভ্রম্মাণ্ড ইত্যাদি শব্দের ক্ষেত্রে।
অতএব ‘মাংস’কে ‘মাংশ’ ভেবে একে হিন্দুদের বিশ্বাসজাত শব্দ মনে করা এবং মুসলিমদের জন্য শব্দটির ব্যবহার না-জায়েয বলে দেয়া কোনোক্রমেই ঠিক হবে না। তবে হ্যাঁ, ‘মাংস’ ও ‘মাংশ’ উচ্চারণে এককরম বিধায় এর ব্যবহার বড়জোর অনুচিত বলা যেতে পারে। কিন্তু যদিও মজার ব্যাপার হল, ‘মাংস’ শব্দ অভিধানে থাকলেও ‘মাংশ’ বলে কোনো শব্দই বাংলা ভাষার কোনো অভিধানেই নেই।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী