জিজ্ঞাসা–১৭৩২: আমি ওমানে থাকি ভালে পদে চাকরির জন্য দাঁড়ি কাটতে বলতেছে। বাধ্যতামূলক কাটতে হবে। এখন আমার করণীয় কী?–ফয়সাল।
এক: আমরা আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এমন একটি মাসয়ালার শরয়ি হুকুম জিজ্ঞেস করার জন্য, বর্তমানে যে সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আমরা আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আপনাকে ইসলামের উপর অবিচল রাখেন, আপনাকে তাওফিক দেন । আরো প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের পরিবেশ-পরিস্থিতি শোধরে দেন। আমাদেরকে প্রকাশ্য ও গোপন সকল ফেতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও দোয়া কবুলকারী।
দুই: প্রিয় দ্বীনি ভাই, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের সকল মুজতাহিদ-ইমাম বলেন, দাড়ি লম্বা রাখা ওয়াজিব এবং তা কমপক্ষে এক মুষ্ঠি পরিমাণ হতে হবে । এ ব্যাপারে চার মাযহাবের সকল ইমামের ইজমা প্রতিষ্ঠিত। এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কাটার সুযোগ শরীয়তে রয়েছে। এক মুষ্ঠির কম রাখা বা একেবারে তা মুন্ডানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম এবং কবীরা গোনাহ। কেননা ইবনে ওমর রাযি.-এর সূত্রে বর্ণিত রাসূলুল্লাহু ﷺ বলেছেন,
خَالِفُوا المُشْرِكِينَ وَفِّرُوا اللِّحَى، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ
তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর, দাঁড়ি লম্বা রাখো এবং গোঁফ ছোট কর। (বুখারী ৫৮৯৩ , মুসলিম ৬০০)
আলেমগণ এও বলেন যে, এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন তাকওয়ার পরিচয় এবং উপহাস করা এমন হারাম যে, যার কারণে ঈমান চলে যাওয়ার আশংকা থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ
আর কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে এটা তার হৃদয়ের তাকওয়া হতে উদ্ভূত বা আল্লাহ সচেতনতার লক্ষণ। (সূরা আল-হাজ ৩২)
তিন: যদি কোন মুসলিম দেশে পুরুষের দাড়ি লম্বা রাখা সংক্রান্ত উক্ত বিধান পালনে বাঁধা প্রদান করে; তাহলে এটি একটি দুঃখজনক বিশেষ বাস্তবতা। এ ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হল–
১. প্রথমে আপনার বুঝতে হবে যে, আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, সে সব কিছুই শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। আর আপনি এ সমস্যার সাথে যেভাবে মানিয়ে চলার চেষ্টা করে চলছেন এটা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ধৈর্য্য এবং আল্লাহর দীনের প্রতি অবিচল থাকতে যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তার প্রতি ধৈর্য্যধারণ করা। আর আল্লাহ এজাতীয় ক্ষেত্রে বলেছেন,
وَاصْبِرُوا إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
তোমরা ধৈর্য্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা আল-আনফাল : ৪৬)
হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
وما أعطي أحدا عطاء خيرا وأوسع من الصبر
ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপকতর কল্যাণ কাউকে প্রদান করা হয় নি। (সহীহ বুখারী ১৭৪৫)
সাহাবায়ে কেরামের জীবন্ত উদাহরণগুলো নিয়ে চিন্তা করুন, যারা তাদের রবের আনুগত্য করার জন্য, এই দীনের উপর অটল থাকার জন্য হাজারো বাধা-বিপত্তি কষ্ট আর ভয়ানক পরিস্থিতির মুকাবিলা করেছেন!
২. আপনি ধৈর্য্যকে হাতিয়ার বানিয়ে মমতার সঙ্গে তাদেরকে বুঝিয়ে বলুন যে, ইসলামের শিক্ষা হল, দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব। এটি ইসলামের নিদর্শন বলে বিবেচিত। ইসলামের দৃষ্টিতে ইবাদত-বন্দেগিতে বাধা প্রদান সবচেয়ে বড় জুলুম। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ
আর তার চেয়ে বড় জালেম কে হবে, যে আল্লাহর ঘরে তাঁর নাম স্মরণ করা থেকে মানুষকে বাধা দেয়।’ (সূরা বাকারা ১১৪)
প্রয়োজনে এ ব্যাপারে এমন কারো সাহায্য নিন যার কথা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। পাশাপাশি বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকুন যে, যেন তাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন হয়।
৩. এরপরেও যদি তারা না মানে এবং তাদের ভাগ্যে হেদায়েত না থাকে তাহলে যদি আপনার আর্থিক অবস্থা মজবুত হয় এবং আপনি উক্ত ভালো পদের চাকরি গ্রহণ না করেও সংসার চালাতে সক্ষম হন তাহলে কোনো চিন্তা না করে এ জাতীয় চাকরি গ্রহণ করার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। কেননা, রিযিকের বহু পথ রয়েছে, এ পথ বন্ধ নয়, বরং সর্বদা খোলা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ بَٰلِغُ أَمۡرِهِۦۚ قَدۡ جَعَلَ ٱللَّهُ لِكُلِّ شَيۡءٖ قَدۡرٗا
আর যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের বা বাঁচার পথ করে দেবেন এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে দান করবেন রিযিক। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট । আল্লাহ তাঁর ইচ্ছে পূরণ করবেনই, অবশ্যই আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন সুনির্দিষ্ট মাত্রা। (সূরা আত-ত্বালাক: ২-৩)
কিন্তু যদি আপনার উপার্জনের অন্য কোনো উৎস না থাকে তাহলে আপনি অন্য কোনো চাকুরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত ওই চাকুরি করতে থাকুন এবং তাওবাসহ আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকুন। এর পাশাপাশি আপনি অন্য কোনো চাকুরি খুঁজে নিন।
৪. মনে রাখবেন, ‘অন্য কোনো চাকুরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত ওই চাকুরি করতে থাকুন’–আমাদের এই শেষোক্ত পরামর্শ কেবল আপনার আপারগতার ক্ষেত্রে। অন্যথায় ইসলামের মূলনীতি তো এই যে,
لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق
অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতা যেখানে আসবে, সেখানে সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না। কেননা, সৃষ্টির আনুগত্যের সীমারেখা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল ﷺ বলেন,
فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ
অর্থাৎ অসৎকাজে আনুগত্য নয় ;আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে। (সহীহ বুখারী ৭১৪৫)
সুতরাং সর্বাবস্থায় আপনি অবশ্যই সাবধান থাকবেন যেন আপনার এই অপারাগতা আল্লাহর পথ থেকে আপনাকে বিচ্যুত না করতে পারে।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী