জিজ্ঞাসা–৬১৮: আসসালামু আলাইকুম। হযরত, জনৈক ব্যক্তি তার স্ত্রী কে নিন্মের কথাগুলা বললো, কুত্তার বাইচ্ছা মনে রাখিস, খাওয়া নিয়ে রাগ করা এটাই লাস্ট, এরপর খাওয়া লই রাগ করবি তালাক। এখন প্রশ্ন হলো উল্লেখিত শব্দ প্রয়োগের পর তার স্ত্রী যদি তার শর্ত ভঙ্গ করে অর্থাৎ খাওয়া ভঙ্গবাম, তাহলে ওই স্ত্রী এর উপর কোন তালাক অর্পিত হবে কি? আর যদি তালাক অর্পিত হয় তাহলে কয় তালাক? আর এই মুহুর্তে তাদের করণীয় কী? উল্লেখ্য যে.. স্বামী তার স্ত্রী কে এই কথা ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে বলেছিলো, তালাকের উদ্দেশ্যে নয়। — সালমান সেলিম।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক. প্রশ্নোক্ত অবস্থায় স্বামী ঐ কথা বলার পর তার স্ত্রী যদি পরবর্তীতে কখনো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় শর্ত ভঙ্গ করে তাহলে তার উপর এক তালাক রজয়ী পতিত হয়ে যাবে।
এখন স্বামী পুণরায় সুষ্ঠুরূপে ঘর-সংসার করতে চাইলে ইদ্দতের মধ্যে রজআত অর্থাৎ স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবে।
রজআতের উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, ইদ্দতের ভিতরে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করা। যেমন, এ কথা বলবে যে, তোমাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করলাম। এর দ্বারাই তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পুণঃবহাল হয়ে যাবে।
আর যদি স্বামী ইদ্দতের ভিতরে (ঋতুমতী মহিলার জন্য তিনটি হায়েয অতিক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত আর অন্তঃসত্তা মহিলার জন্য সন্তান প্রসব পর্যন্ত) রজআত না করে তবে ইদ্দত শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আবার ঘর-সংসার করতে চাইলে নতুন মোহর ধার্য করে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে নতুন করে বিবাহ করতে হবে।
প্রকাশ থাকে যে, এই স্ত্রীকে ইদ্দতের ভিতরে কিংবা ইদ্দত শেষ হয়ার পর পুণরায় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলে পরবর্তীতে স্বামী দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। তাই পরবর্তীতে এই স্ত্রীকে কখনো দুই তালাক দিলে পূর্বের এক তালাকের সাথে মিলে তিন তালাক হয়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে নতুন করে বিবাহ করেও একত্রিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪২০, ১/৪১৬;ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৫৪;আলবাহরুর রায়েক ৪/৮,৪/১৪;আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩৫৫)
দুই. জেনে রাখা দরকার যে, ঝগড়া লাগলেই তালাক শব্দ উচ্চারণ করার প্রবণতা অবিবেচক মানুষের কাজ। তাই প্রতিটি বিবেচক স্বামীর দায়িত্ব হল, তালাকের শব্দ কিংবা এর সমার্থক কোনো শব্দ মুখে উচ্চারণ করা থেকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকা। কেননা, তালাকের পরিণতি খুবই ভয়াবহ হয়। কথায় কথায় তালাক শব্দ উচ্চারণ করা মানে আল্লাহর কিতাবের সঙ্গে তামাশা করা। হাদিসে এসেছে,
عن مَحْمُود بْن لَبِيدٍ قَالَ أُخْبِرَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ عَنْ رَجُلٍ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلاثَ تَطْلِيقَاتٍ جَمِيعًا ؟ فَقَامَ غَضْبَان ثُمَّ قَالَ : أَيُلْعَبُ بِكِتَابِ اللَّهِ وَأَنَا بَيْنَ أَظْهُرِكُمْ ؟! حَتَّى قَامَ رَجُلٌ وَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَلا أَقْتُلُهُ ؟
মাহমুদ ইবনু লাবীদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ-কে কোন লোক সম্বন্ধে সংবাদ দেয়া হলো যে, লোকটি তার স্ত্রীকে একই সাথে তিন তালাক দিয়ে ফেলেছে। (এরূপ শুনে) নাবী ﷺ রাগাম্বিত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন, অতঃপর বললেন, তোমাদের মধ্যে আমি বিদ্যমান থাকা অবস্থাতেই কোরআন নিয়ে কি খেলা করা হচ্ছে? এমনকি এক ব্যক্তি (সাহাবী) দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি কি তাকে হত্যা করব না? (নাসাঈ ৩৪০১)
উক্ত হাদিসে একই সাথে তিন তালাক প্রদানকারীকে কোরআন নিয়ে খেলাকারী হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে, তাহলে যে ব্যক্তির স্বভাব হল, কথায় কথায় তালাক শব্দ উচ্চারণ করা সে ব্যক্তিও কি কোরআন নিয়ে খেলাকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে না! উপরন্তু কাউকে কুকুরের বাচ্চার সঙ্গে তুলনা কোনো ফাসেকই করতে পারে, প্রকৃত মুমিনের স্বভাব এমনটি হতে পারে না। কেননা, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকি কর্ম। (বুখারী ৪৮)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন–
☞ তালাক দিয়ে দিব বললে বিয়ের কোনো ক্ষতি হয় কিনা?
☞ ‘ভালো থেকো’ লিখে স্ত্রীকে পাঠালে কি স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে?
☞ স্বামী স্ত্রীর মাঝে আদর্শিক দ্বন্দ্ব; তাহলে কি তালাকের উপদেশ দিব?
☞ মনে মনে তালাকের চিন্তা করলে তালাক হয় কিনা?
☞ এক সঙ্গে তিন তালাক দিয়েছে–এখন কী করবে?
☞ বাবা-মায়ের কথায় স্ত্রীকে তালাক দেয়া যাবে কিনা?
☞ ঘুমের ঘোরে স্ত্রীকে ‘তুই তালাক’ বললে তালাক হয় কিনা?