জিজ্ঞাসা–১৫৩৬: আসসালামু আলাইকুম। জন্মদিন উপলক্ষে দেওয়া কোনো কাপড় (উপহার) গ্রহণ করে ফেলা হয়েছে, এখন ফেরত দিলে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে সে কাপড় পড়ে নামাজ পড়া জায়েয হবে? নামাজের বাইরে কি পরা যাবে?–Anjum
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক- প্রিয় প্রশ্নকারী দীনি বোন, জন্মদিন পালনের মূল বিষয়টি যেহেতু বিধর্মীদের থেকে এসেছে তাই বলা যায় এর মূল জিনিসটিই ইসলামে প্রত্যাখ্যাত। তা যে কোন পদ্ধতিতেই হোক। আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
اتَّبِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء
তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন বন্ধু বা অভিভাবকের অনুসরণ করো না। (সূরা আ’রাফ ৩)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে,সে তাঁদেরই দলভুক্ত। (আবূ দাঊদ ৪০৩১)
সুতরাং জন্মদিন উপলক্ষে হাদিয়া নেয়া, পরিবারের সাথে ভালো মন্দ রান্না করে খাওয়া, উইশের উত্তর দেয়া নাজায়েয। কেননা এগুলো করা মানে জন্মদিনকে ‘উদযাপনযোগ্য’ মনে করা। যা বিধর্মীদের বিশ্বাসের সাথে মিলে যায়। কেননা তাদের কাছেও কারো জন্মগ্রহণের দিনটি তার জন্য ‘উদযাপনযোগ্য’ বিশেষ একটি দিন; যা বছর ঘুরে বার বার ফিরে আসে। পক্ষান্তরে মুসলমানদের কাছে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ছাড়া ‘উদযাপনযোগ্য’ বিশেষ দিন নেই।
দুই- যদি এ উপলক্ষে আপনাকে কেউ হাদিয়া দিয়ে থাকে কিংবা উইশ করে থাকে; সে ক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য দু’টি–
১. আপনি তাদেরকে উপদেশ দিবেন এবং ব্যাখ্যা করে জানাবেন যে, এটি আমাদের ধর্মীয় অনুশাসন বিরোধী কাজ।
২. আপনি সুন্দর আচরণ দিয়ে এ উপহার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যদি আপনি সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশংকা করে থাকেন, তাহলে আপনি এটি পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিন যে, আপনি শুধু তার সম্পর্কের কারণে উপহারটি গ্রহণ করেছেন; এ নাজায়েয উপলক্ষকে কেন্দ্র করে নয় এবং তাকে এটাও জানিয়ে দিবেন যে, ভবিষ্যতে আপনি এ ধরণের উপহার গ্রহণ করবেন না এবং তার জন্মদিবসে তাকে উপহার দিবেন না।
যদি এমনটি করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য উক্ত কাপড় নামাজে কিংবা নামাজের বাইরে ব্যবহার করা জায়েয হবে।
আর যদি এমনটি করতে না পারেন তাহলে উক্ত কাপড়ের হুকুম অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অন্যান্য সম্পদের মত। এই কাপড় সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করে দিতে হবে। আর এ ধরণের পোশাকে নামায হয়ে যাবে কিন্তু পরিহার করতে পারলে সবচেয়ে উত্তম হবে। কেননা রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لا يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ فَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنْ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ} [المؤمنون:51]، وَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُواْ لِلّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ} [البقرة:172]. ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ: يَا رَبِّ يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ
হে মানব সকল! আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না। তিনি এ ব্যাপারে মুমিনদের সে নির্দেশই দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলদেরকে। তিনি বলেছেন, হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎকর্ম কর; তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত। এবং তিনি (মুমিনদের উদ্দেশে) বলেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি তা হতে আহার কর। এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ ﷺ এমন এক ব্যক্তির কথা বললেন, যে দীর্ঘ সফর করে মাথার চুলগুলোকে এলোমেলো করেছে এবং পদযুগল ধুলায় ধুসরিত করেছে অতঃপর আকাশের দিকে হাত তুলে দোয়া করে, হে প্রভু! হে প্রভু! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পোশাক হারাম, তার শরীর গঠিত হয়েছে হারাম দিয়ে, কিভাবে তার দোয়া কবুল করা হবে? (মুসলিম ২৭৬০)