জিজ্ঞাসা–২০২: কাজা নামাজ আদায়ের নিয়ম কি? আমি বুঝব কিভাবে যে, আমার আর কাজা নামাজ পড়তে হবে না?–মোঃ মুবিন।
জবাব: এক- প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, মনে রাখতে হবে, শরিয়তে নামায কাযা করার বিধান থাকলেও ইচ্ছাকৃতভাবে নামায কাযা করা কবিরা গুনাহ। হাদিস শরিফে এসেছে,
عن أم أيمن أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لا تترك الصلاة متعمدا فإنه من ترك الصلاة متعمدا فقد برئت منه ذمة الله ورسوله
উম্মে আইমান রাযি.হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেন,তোমরা ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করো না। কেননা যে ইচ্ছাকৃত নামাজ ত্যাগ করে,আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার থেকে জিম্মা মুক্ত হয়ে যান। (মুসনাদে আহমদ,হাদিস নং ২৭৩৬৪)
দুই- তবে কোনো ব্যক্তি কোনো কারণে কোনো ওয়াক্তের নামায আদায় না করলে তা কাযা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম মূলনীতি হলো, যখনই কাযা নামাযের কথা মনে পড়বে তখনই পড়ে নিবে। এ সম্পর্কে হাদিসের বাণী-
عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ ” مَنْ نَسِيَ صَلاَةً فَلْيُصَلِّ إِذَا ذَكَرَهَا، لاَ كَفَّارَةَ لَهَا إِلاَّ ذَلِكَ فإن الله يقول {وَأَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِي}
আনাস ইবনু মালিক রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেছেন, যদি কেউ কোনো নামাযের কথা ভুলে যায়, তাহলে যখনই স্মরণ হবে, তখন তাকে তা আদায় করতে হবে। এ ব্যতীত সে নামাযের অন্য কোনো কাফ্ফারা নেই। কেননা, আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন, {وَأَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِي} আমাকে স্মরণের উদ্দেশে নামায কায়েম কর। (মুসলিম, হাদিস নং ৬৮৪)
দ্বিতীয় মূলনীতি হলো, ছুটে যাওয়া নামায পরবর্তী নামায পড়ার আগে পড়ে নিবে। অর্থাৎ ফজর ছুটে গেলে ঘুম থেকে উঠার পরপরই অথবা যোহরের আগে, যোহর ছুটে গেলে আসরের আগে, আসর ছুটে গেলে মাগরিবের আগে, মাগরিব ছুটে গেলে এশার আগে এভাবে নামায পড়ে নিবে। এ প্রসঙ্গে হাদীসের বাণী-
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، جَاءَ يَوْمَ الْخَنْدَقِ بَعْدَ مَا غَرَبَتِ الشَّمْسُ، فَجَعَلَ يَسُبُّ كُفَّارَ قُرَيْشٍ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا كِدْتُ أُصَلِّي الْعَصْرَ حَتَّى كَادَتِ الشَّمْسُ تَغْرُبُ. قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم “ وَاللَّهِ مَا صَلَّيْتُهَا ”. فَقُمْنَا إِلَى بُطْحَانَ، فَتَوَضَّأَ لِلصَّلاَةِ، وَتَوَضَّأْنَا لَهَا فَصَلَّى الْعَصْرَ بَعْدَ مَا غَرَبَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى بَعْدَهَا الْمَغْرِبَ.
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাযি. হতে বর্ণিত, খন্দকের দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ওমর ইবনু খাত্তাব রাযি. এসে কুরাইশ গোত্রীয় কাফিরদের ভৎর্সনা করতে লাগলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এখনও আসরের নামায আদায় করতে পারি নি, এমন কি সূর্য অস্ত যায় যায় অবস্থা। রাসূল ﷺ বললেন, আল্লাহর শপথ! আমিও তা আদায় করিনি। অতঃপর আমরা উঠে বুতহানের দিকে গেলাম। সেখানে তিনি নামাযের জন্য উযূ করলেন এবং আমরাও উযূ করলাম; অতঃপর সূর্য ডুবে গেলে আসরের নামায আদায় করেন, অতঃপর মাগরিবের নামায আদায় করেন। (বুখারী, হাদিস নং ৫৯৬)
তৃতীয় মূলনীতি হল, যদি কারো পাঁচ ওয়াক্তের বেশী কাযা হয়ে যায় – সেটা কয়েক দিন কয়েক মাস এমনকি কয়েক বছরও হতে পারে-তাহলে তার উচিত কাযা নামাযগুলো একটা অনুমান করে কোন নামায কত ওয়াক্ত কাযা হয়েছে তা নির্ধারণ করে নিবে। তারপর একে একে তা আদায় করবে। যত দ্রুত এবং যত বেশি সম্ভব এই কাযাগুলো আদায় করতে হবে। প্রতি ওয়াক্তে কয়েক ওয়াক্তের কাযা আদায় করলেও ভালো। এ ছাড়া সুবিধামতো সময়ে যখন যে নামাযের কাযা আদায়ের সুযোগ হয় আদায় করা যাবে। তবে প্রতি ওয়াক্তে ওই ওয়াক্তের কাযা আদায় করলে হিসাব রাখা সহজ। এভাবে আদায়কৃত নামায আনুমানিক হিসাব থেকে কমতে থাকবে। এ নিয়মে ছুটে যাওয়া নামায আদায় হয়ে গেলে ভালো। নতুবা জীবনের শেষ মুহূর্তে অবশিষ্ট নামাযের ফিদয়া দেয়ার ওসিয়ত করতে হবে।
এ অবস্থায় কাযা নামায আদায়ের নিয়ম এই যে, সে যে ওয়াক্তের কাযা আদায় করতে চাইবে সে ওয়াক্তের নিয়ত করবে যে, অমুক ওয়াক্তের সবচেয়ে প্রথম বা শেষ নামায আদায় করছি। যেমন- কাযা হওয়া নামাযের মধ্যে ফজরের নামাযের কাযা আদায় করতে চাই। তাহলে নিয়ত করবে, আমার জিম্মায় যত ফজরের নামায কাযা আছে, তার সবচেয়ে প্রথম অথবা শেষটা আদায় করছি। এভাবে আদায় করবে যাতে সকল কাযা নামায পুরো হয়ে যায়।
এভাবে বাকি নামায আদায় করবে। যোহর, আছর, মাগরিব, ইশাও এভাবে আদায় করবে।
উল্লেখ্য, সুন্নাত নামাযের কাযা করা যায় না, কেবল ফরজ ও বেতরের নামাযের কাযা করার সুযোগ থাকে। (আদ্দুররুল মুখতার, সাঈদ, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৬৮; ফাতাওয়া দারুল উলুম, জাকারিয়া, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৩৩২)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী