ডোর বেল, মোবাইলের রিংটোন বা অ্যালার্ম কি নিষিদ্ধ বাজনা-বাদ্যের অন্তর্ভুক্ত?

জিজ্ঞাসা–১৩৫৭: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, মুহতারাম, ‘ঘন্টা’ লাগানো থাকলে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। সেক্ষেত্রে, উইন্ডচাইম কিংবা ডোর বেল (ঘন্টা না কিন্তু টং টাং শব্দ করে) থাকলেও কী একই ব্যাপার হবে? মোবাইলে রিংটোন বা অ্যালার্ম হিসেবে সাধারণভাবে এবং উচ্চ ভলিউমের যেসব সুর-বাজনা ব্যবহার করা হয় তাতে কি কোনো অসুবিধা আছে? থাকলে কেমন ধরনের রিংটোন ব্যবহার করা উচিত?–Monowar Mostafa Sarkar

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

ইমাম মুসলিম রহ. আবু হুরাইরা রাযি. সূত্রে হাদিস এনেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

لا تَصْحَبُ المَلائِكَةُ رُفْقَةً فيها كَلْبٌ ولا جَرَسٌ

যে কাফেলার সাথে কুকুর অথবা ঘণ্টা থাকে ফেরেশতাগণ তাদের সঙ্গী হয় না। (মুসলিম ২১১৩)

রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেছেন,

الْجَرَسُ مَزامِيرُ الشَّيْطانِ

ঘন্টা বা ঘুঙুর হল শয়তানের বাঁশি। (মুসলিম ২১১৩)

উক্ত হাদিসের ব্যখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন,

وَأَمَّا الْجَرَس فَقِيلَ : سَبَب مُنَافَرَة الْمَلَائِكَة لَهُ أَنَّهُ شَبِيه بِالنَّوَاقِيسِ , أَوْ لِأَنَّهُ مِنْ الْمَعَالِيق الْمَنْهِيّ عَنْهَا , وَقِيلَ : سَبَبه كَرَاهَة صَوْتهَا , وَتُؤَيِّدهُ رِوَايَة : مَزَامِير الشَّيْطَان

‘ঘন্টা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটিকে ফেরেশতারা ঘৃণা করার কারণ হল, এটি নাকুস (নাসারাদের ঘণ্টাধ্বনি)-এর মত। অথবা এটি নিষিদ্ধ ঝুলন্ত তাগা-মাদুলির মত। কেউ কেউ বলেন, এর কারণ হল, এর বিশ্রী ধ্বনি। ‘ঘন্টা বা ঘুঙুর হল শয়তানের বাঁশি’ হাদিসটি এর সমর্থন করে।’ (ইমাম নববী রহ. কৃত শরহু মুসলিম ২৭৮)

ইবনু হাজার আসকালানি রহ. বলেন,

وَالْحَاصِل أَنَّ الصَّوْت لَهُ جِهَتَانِ : جِهَة قُوَّة وَجِهَة طَنِين , … وَمِنْ حَيْثُ الطَّرَب وَقَعَ التَّنْفِير عَنْهُ وَعُلِّلَ بِكَوْنِهِ مِزْمَار الشَّيْطَان

‘সার কথা হল, ধ্বনির দুটি দিক রয়েছে। এক. প্রচণ্ডতার দিক। দুই. ঝঙ্কার বা বাজনার দিক…ঝঙ্কার বা বাজনার দিক বিবেচনায় এটি ঘৃণার বিষয় বলা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এটি শয়তানের বাঁশি।’ (ফাতহুল বাড়ী ১/২৮)

উক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, সাধারণ ডোর বেল, মোবাইলের সাধারণ রিংটোন কিংবা সাধারণ অ্যালার্ম আর হাদিসে নিষিদ্ধ ঘণ্টাধ্বনির উদ্দেশ্য এক নয়। সুতরাং সাধারণ ডোর বেল, মোবাইলের সাধারণ রিংটোন কিংবা সাধারণ অ্যালার্ম ব্যবহার জায়েয হবে। তবে যদি ডোর বেল কিংবা মোবাইলের রিংটোনের ধ্বনিতে গান কিংবা ঝঙ্কার ও বাজনা যুক্ত হয় তাহলে তা নিঃসন্দেহে হারাম। কেননা, গান-বাজনা নিঃসন্দেহে হারাম। বিস্তারিত দেখুন জিজ্ঞাসা নং–৫৯৩।

বাকি রইল, উইন্ড চাইম বিষয়ে।  এ সম্পর্কে কথা হল, চীনারা বিশ্বাস করে যে উইন্ড চাইম বিষণ্ণতা দূর করতে খুবই কার্যকরী। (www.priyo.com) সুতরাং যেহেতু এগুলোর সঙ্গে বিধর্মীদের ভ্রান্ত ভক্তি ও বিশ্বাস জড়িত সেহেতু ঘরের সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যেও এগুলো রাখা বা ঝুলানো উচিত হবে না। বিস্তারিত দেখুন জিজ্ঞাসা নং–৫৭৪।

والله اعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × two =