জিজ্ঞাসা–৭০৩: আমাদের গ্রামের এক লোক তার স্ত্রীকে বলে, তুই তোর বাপের বাড়ি চলে যা, তুই এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক। তারপর মহিলা তার বাপের বাড়িতে বিষয়টি জানালে তার ভাই এসে তাকে নিয়ে চলে যায় এবং সে এরপর থেকে বিগত তিন বছর পর্যন্ত তার বাপের বাড়িতেই আছে। অনেক বার চেষ্টা করার পরেও তার স্বামী তাকে ফেরত নিতে রাজি হয় না। সে একটা কথাই বলে, আমি তো তাকে অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। এখন ওই মহিলার অন্যত্র বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে। এখন অনেকে বলে, অন্যখানে বিয়ে দিলে হবে না। কারণ তাকে যে তার স্বামী তালাক দিয়েছে এর কোন প্রমাণ তো নাই। এ বিষয়ে সমাধান কী হবে? এখন আসলেই কি ঐ মহিলা অন্যত্র বিয়ে বসতে পারবে না?–আমানুল্লাহ আমান।
জবাব:
এক. যখন উক্ত ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে এবং সে স্বীকারও করে নিয়েছে তখন উক্ত স্ত্রী উক্ত ব্যক্তির জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে গিয়েছে। সুতরাং এরপর পুনরায় তার কাছে উক্ত স্ত্রীকে ফেরত পাঠানোর চেষ্টাগুলো ছিল অন্যায় চেষ্টা। কেননা, ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামীর জন্য তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ‘হালালা’ ব্যতীত দ্বিতীয় বার গ্রহণ করার অবকাশ নেই। এর দলিল হল, আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। (সূরা বাকারা-২৩০)
দুই. তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে বসতে হলে ইদ্দত পূর্ণ করা ওয়াজিব। আর ইদ্দত হল, তালাকের পর থেকে তিন হায়েজ অতিবাহিত হওয়া। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ ۚ
আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। (সূরা বাকারা-২২৮)
আর উক্ত ইদ্দত প্রশ্নোক্ত স্ত্রীর ক্ষেত্রে তালাকের পর থেকে তিন হায়েজ গত হওয়ার পর পরই পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং বর্তমানে সে অন্যত্র বিয়ে বসতে পারবে। এক্ষেত্রে যারা বলে, অন্যখানে বিয়ে দিলে হবে না–তাদের একথা ঠিক নয়।