জিজ্ঞাসা–১১৮৭: আমাদের মহল্লায় এক লোক আছে, হুজুর দেখতে পারে না। সে দাঁড়িওয়ালা কাউকে দেখলেই কখনো জঙ্গি কখনো হেফাজতি বলে গালি দেয়। অত্যন্ত দুখের বিষয় হল, এই লোক টাকা ও ক্ষমতার জোরে মহল্লার মসজিদের সভাপতি। কেউ তাকে পসন্দ করে না। কিন্তু ভয়ে কিছু বলে না। আমার প্রশ্ন হল, এই লোকের হুকুম কী? সে কি মসজিদের সভাপতি হওয়ার যোগ্যতা রাখে?–হুমায়ুন আহমদ।
জবাব:
এক. দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব। এটি ইসলামের নিদর্শন বলে বিবেচিত। কেননা, সকল নবীর সুন্নাহ এটি। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
ولكن ربي أمرني بإعفاء لحيتي وقص شاربي
কিন্তু আমার রব আমাকে আদেশ করেছেন, দাঁড়ি লম্বা রাখার ও মোচ খাটো করার। (আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/৪৫৯-৪৬০)
এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন তাকওয়ার পরিচয় এবং উপহাস করা এমন হারাম যে, যার কারণে ঈমান চলে যাওয়ার আশংকা থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ
আর কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে এটা তার হৃদয়ের তাকওয়া হতে উদ্ভূত বা আল্লাহ সচেতনতার লক্ষণ। (সূরা আল-হাজ ৩২)
দুই. আলেমগণ নবীদের ওয়ারিস। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
وَإِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ
আলেমগণ হলেন নবীদের ওয়ারিস। (সুনান আবু দাউদ ৩৬৪৩)
অপর হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لَيْسَ مِنْ أُمَّتِي مَنْ لَمْ يُجِلَّ كَبِيرَنَا وَيَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيَعْرِفْ لِعَالِمِنَا حَقَّهُ
সে আমার উম্মতভুক্ত নয় যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না এবং আমাদের ছোটকে স্নেহ করে না এবং আমাদের আলেমের হক জানে না। (মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/১৪)
ইবন কাইয়িম আল জাওযিয়া রহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন,
একারণেই ফকিহগণ লিখেছেন,
وَيُخَافُ عَلَيْهِ الْكُفْرُ إذَا شَتَمَ عَالِمًا، أَوْ فَقِيهًا مِنْ غَيْرِ سَبَبٍ
ওই ব্যক্তির ব্যাপারে কাফের হয়ে যাওয়ার ভয় আছে, যে ব্যক্তি অকারণে কোন আলেম কিংবা ফকিহকে গালি দেয়। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৭০)
তিন. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, কুরআন-সুন্নাহ ও ফিকহের কিতাবাদিতে অনুরূপ আরো বহু স্পষ্ট সতর্কবাণী এসেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এটা তো স্পষ্ট যে প্রশ্নেল্লেখিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে এমন ফাসিক যে, যার ঈমানের ব্যাপারে প্রবল সন্দেহ রয়েছে। সে যে দুষ্ট ও নিকৃষ্ট তা তার উক্ত আচরণেই প্রকাশ পায়। মালিক ইবনু দীনার রহ বলেন,
كفى المرء شرًّا ألا يكون صالحًا، ويقع في الصالحين
একজন মানুষ নিকৃষ্টতর হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে নিজে সৎ হবে না এবং নেককারদের পেছনে পড়বে। (শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী ৫/৩১৬)
সুতরাং এমন ব্যক্তি মসজিদ কমিটির সভাপতি হওয়া তো দুরের কথা; সদস্য হওয়ারও যোগ্যতা রাখে না। যে বা যারা লোকটিকে মসজিদ কমিটিতে এনেছে, নিশ্চয় তারা সমাজের সকলের হক নষ্টকারী হিসেবে আল্লাহর কাছে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَى فِي خَرَابِهَا أُوْلَـئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَن يَدْخُلُوهَا إِلاَّ خَآئِفِينَ لهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
যে ব্যাক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় যালেম আর কে? এদের পক্ষে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়। ওদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। (সুরা বাকারা ১১৪)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী