জিজ্ঞাসা–৫৯৭: শোনা যায়, নবী ও রাসূলের সংখ্যা এক কিংবা দুই লাখ চব্বিশ হাজার। কিন্তু আপনার একটা বয়ানে আপনি বলেছেন, এভাবে সংখ্যা নির্ধারণ করা উচিত নয়। আরেক হুজুর বলেছেন, এই সংখ্যার কথা নাকি হাদিসে আছে। তাহলে আমরা কোনটা মানবো?–আরেফিন মা’হাদ।
জবাব:
এক. আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক জাতির কাছে নবী বা রাসূল পাঠিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَإِن مِّنْ أُمَّةٍ إِلَّا خلَا فِيهَا نَذِيرٌ
আমি আপনাকে সত্যধর্মসহ পাঠিয়েছি সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। এমন কোন সম্প্রদায় নেই যাতে সতর্ককারী আসে নি। (সূরা ফাতির ২৪)
তাঁদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যকের নাম কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। আর অধিকাংশের নাম উল্লেখ করা হয় নি। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَرُسُلًا قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِنْ قَبْلُ وَرُسُلًا لَمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ
এছাড়া এমন রাসূল পাঠিয়েছি যাদের ইতিবৃত্ত আমি আপনাকে শুনিয়েছি ইতিপূর্বে এবং এমন রাসূল পাঠিয়েছি যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে শোনাইনি। (সূরা নিসা ১৬৪)
উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইবন আতিয়্যাহ আন্দুলুসি রহ বলেন,
وقوله تعالى : ( ورسلاً لم نقصصهم عليك ) النساء/164 : يقتضي كثرة الأنبياء ، دون تحديد بعدد ، وقد قال تعالى ( وإن من أمة إلا خلا فيها نذير ) فاطر/24 ، وقال تعالى : ( وقروناً بين ذلك كثيراً ) الفرقان/38 ، وما يُذكر من عدد الأنبياء فغير صحيح ، الله أعلم بعدتهم ، صلى الله عليهم
আল্লাহ তাআলার বাণী: ‘এমন রাসূল পাঠিয়েছি যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে শোনাই নি।’ এটা দাবী করে যে, নবীগণ অনেক, যাঁদের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। আল্লাহ তাআলা এও বলেছেন: ‘এমন কোন সম্প্রদায় নেই যাতে সতর্ককারী আসে নি।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘তাদের মধ্যবর্তী অনেক সম্প্রদায়কে।’ আর নবীদের সংখ্যার ব্যাপারে যা উল্লেখ করা হয় তা সহিহ নয়। তাঁদের সংখ্যা আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহ তাঁদের উপর রহমত নাযিল করুন। (আল মুহাররারুল ওয়াজীয ২/১৩৭)
ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা (২৬/২২৪)-তে এসেছে,
لا يعلم عددهم إلا الله ؛ لقوله تعالى : ( وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ مِنْهُمْ مَنْ قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُمْ مَنْ لَمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ ) غافر/78 ، والمعروف منهم من ذكروا في القرآن أو صحت بخبره السنَّة
‘তাঁদের সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। কেননা, তিনি বলেছেন, ‘আমি আপনার পূর্বে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি, তাঁদের কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করেছি এবং কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করি নি-সূরা গাফির৭৮।’ তাঁদের মধ্যে প্রসিদ্ধ তাঁরা যাঁদের উল্লেখ কোরআনে অথবা বিশুদ্ধ সূত্রে সুন্নাহয় এসেছে।’
দুই. হ্যাঁ, নবী ও রাসূলের সংখ্যার পরিমাণ সম্পর্কিত হাদিসও আছে। যেমন, এক হাদিসে এসেছে,
عن أبي ذر قال : قلت : يا رسول الله ، كم الأنبياء ؟ قال : مائة ألف وأربعة وعشرون ألفًاً ، قلت : يا رسول الله ، كم الرسل منهم ؟ قال : ثلاثمائة وثلاثة عشر جَمّ غَفِير، قلت : يا رسول الله ، من كان أولهم ؟ قال : آدم
আবু যর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! নবীদের সংখ্যা কত? তিনি উত্তর দিলেন, এক লাখ চব্বিশ হাজার। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাঁদের মধ্যে কতজন রাসূল? উত্তর দিলেন, তিন শত তের জনের একটি বড় দল। আমি বললাম, তাঁদের মধ্যে প্রথম কে? বললেন, আদম। (ইবন হিব্বান ৩৬১)
উক্ত হাদিস সম্পর্কে শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত রহ. বলেন, إسناده ضعيف جدّاً ‘হাদিসটির সনদ নিতান্ত দুর্বল।’ (তাহকীকু সহীহ ইবন হিব্বান ২/৭৯)
এই মর্মে আরেকটি হাদিসও আছে। সেখানে এক লাখ চব্বিশ হাজারের কথা নেই। সেখানে আছে এভাবে–
عن أنس قال : قال رسول الله ﷺ : بعث الله ثمانية آلاف نبي ، أربعة آلاف إلى بني إسرائيل ، وأربعة آلاف إلى سائر الناس
আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আট হাজার নবী পাঠিয়েছেন। চার হাজার বনী ইসরাইলের নিকট এবং বাকি চার হাজার গোটা মানবজাতির নিকট। (মুসনাদ আবূ ইয়া’লা ৭/১৬০)
উক্ত হাদিস সম্পর্কে আল্লামা হাইছামী রহ. বলেন, رواه أبو يعلي وفيه : موسى بن عبيدة الربذي ، وهو ضعيف جدّاً ‘হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আবু ইয়া’লা। এর সনদে রয়েছে মুসা ইবন উবাইদা আর-রাবযী। যিনি নিতান্ত দুর্বল।’ (মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/২১০)
ইবন কাসীর রহ. বলেন, وهذا أيضاً إسناد ضعيف ؛ فيه الربذي : ضعيف ، وشيخه الرَّقَاشي : أضعف منه أيضاً ‘এটির সনদও দুর্বল। এতে রয়েছে রাবাযী। যিনি দুর্বল। আর রয়েছে তাঁর শায়েখ রক্কাশী। যিনি আরও দুর্বল।’ (তাফসির ইবন কাসীর ২/৪৭০)
মোটকথা, যেসব বর্ণনায় সংখ্যার উল্লেখ পাওয়া যায়, সবগুলোই দুর্বল এবং পরস্পর সাংঘর্ষিক। আর এটা তো জানা কথা যে, দুর্বল হাদিস দ্বারা আকিদার বিষয় প্রমাণিত হয় না। সুতরাং আমরা কোনো প্রকার সংখ্যা নির্ধারণ না করে বলবো, আল্লাহ যত নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন সকলের উপর আমরা ঈমান এনেছি। ফেরেশতাদের সংখ্যা আমরা জানি না। তবুও আমরা ঈমান এনেছি। অনুরূপভাবে নবী-রাসূলের সংখ্যাও আমরা জানি না। এসবের সংখ্যা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে তাঁদের প্রত্যেকের উপর আমরা ঈমান এনেছি। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللّهِ وَمَلآئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لاَ نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ
এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। (সূরা বাকারা ২৮৫)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন ☞ ☞ ☞ হুজুর সা. নুরের তৈরি না মাটির তৈরি? ☞ ☞ ☞ তাওহীদ বাস্তবায়িত হয় কিভাবে এবং বাস্তবায়নকারী কী পুরস্কার পাবে? ☞ শুধু ঈমানের উপর কি জান্নাতের সুসংবাদ; যদিও ব্যক্তি কবিরা গুনাহ করে? ☞ মুসলিম হওয়ার পর কুফরি যামানার ভাল কাজগুলোর সাওয়াব পাবে কিনা? ☞ খিযির আ. অলি না নবী? তিনি কি এখনও জীবিত? ☞ বিধর্মীর ঘরে জন্ম নেয়া মানে কি আল্লাহ্র রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া? ☞ চিরকাল জান্নাতে এবং চিরকাল জাহান্নামে বলতে কী বুঝানো হয়েছে? ☞ রুহ বা আত্মার মৃত্যু হয় কিনা?