জিজ্ঞাসা–১০৮৩: আমার প্রশ্নটা একটু বড়। আশা করি তবুও উত্তর পাবো।
أَخْبَرَنَا أَبُو دَاوُدَ، سُلَيْمَانُ بْنُ سَيْفٍ قَالَ حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الأَعْرَجِ، عَنِ ابْنِ بُحَيْنَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم صَلَّى فَقَامَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ فَسَبَّحُوا فَمَضَى فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ صَلاَتِهِ سَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ سَلَّمَ .
আবূ দাউদ সুলায়মান ইবনু সায়ফ (রহঃ) … ইবনু বুহায়না (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দু’রাকআতের পরে না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন সাহাবায়ে কিরাম সুবহানাল্লাহ বলে উঠলেন। তিনি সালাত চালিয়ে গেলেন। তারপর যখন তিনি সালাতের শেষ অবস্থায় পৌছলেন, তখন দুটি সিজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন।
সুনান নাসাঈ (ইফাঃ) -১১৮১সাহল ইবনু সা‘দ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, আমর ইবনু আওফ গোত্রের কিছু লোকের মধ্যে সামান্য বিবাদ ছিল। তাই নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবিদের একটি জামাত নিয়ে তাদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য সেখানে গেলেন। এদিকে সালাতের সময় হয়ে গেল। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে এসে পৌঁছেননি। বিলাল (রা.) সালাতের আজান দিলেন, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনও এসে পৌঁছেননি।পরে বিলাল (রা.) আবু বকর (রা.)-এর কাছে এসে বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে সালাতেরও সময় হয়ে গেছে। আপনি সালাতে লোকদের ইমামতি করবেন? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি ইচ্ছা কর।’তারপর বিলাল (রা.) সালাতের ইকামত বললেন, আর আবু বকর (রা.) এগিয়ে গেলেন। পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং কাতারগুলো অতিক্রম করে প্রথম কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা দেখে) লোকজন হাততালি দিতে শুরু করল এবং তা অধিক মাত্রায় দিতে লাগলেন। আবু বকর (রা.) সালাত অবস্থায় কোনো দিকে তাকাতেন না, কিন্তু (হাততালির কারণে) তিনি তাকিয়ে দেখতে পেলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পেছনে দাঁড়িয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে হাতের ইশারায় আগের মতো সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিলেন। আবু বকর (রা.) তাঁর দু’হাত উপরে তুলে আল্লাহর হামদ বর্ণনা করলেন। তারপর কিবলার দিকে মুখ রেখে পেছনে ফিরে এসে কাতারে শামিল হলেন।তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগে বেড়ে লোকদের ইমামত করলেন এবং সালাত সমাপ্ত করে লোকদের দিকে ফিরে বললেন, ‘হে লোক সকল! সালাত অবস্থায় তোমাদের কিছু ঘটলে তোমরা হাততালি দিতে শুরু কর। অথচ হাততালি দেওয়া নারীদের কাজ। সালাত অবস্থায় কারো কিছু ঘটলে সে যেন “সুবহানাল্লাহ” বলে। কেননা এটা শুনলে তার দিকে দৃষ্টিপাত না করে পারত না।‘হে আবু বকর! তোমাকে যখন ইশারা করলাম, তখন সালাত আদায় করাতে তোমার কিসের বাধা ছিল?’ তিনি বললেন, ‘আবু কুহাফার পুত্রের জন্য শোভা পায় না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে ইমামতি করা। (সহীহ বুখারী ইফাঃ- ৬৫০)
আমার প্রশ্ন সরাসরি যেখানে সুবহানাল্লাহ বলে ইমামকে সতর্ক করার হাদিস রয়েছে সেখানে আমরা কেনো আল্লাহু আকবার বলে ইমামকে সতর্ক করবো? আল্লাহু আকবর বলে সতর্ক করার দলিল কি?
أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ عَوْفٍ، قَالَ حَدَّثَنِي مُحَمَّدٌ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ التَّسْبِيحُ لِلرِّجَالِ وَالتَّصْفِيقُ لِلنِّسَاءِ
উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তাসবীহ পূরুষদের জন্য আর হাতে তালি দেওয়া নারীদের জন্য।সুনানে নাসাঈ (ইফাঃ) -১২১৩
আপনারা মূলত এই তসবীহ পাঠ করার হাদিস দেখিয়ে আল্লাহু আকবার বলা প্রমাণ করতে চান। আচ্ছা তাসবীহ মানে কি আল্লাহু আকবার নাকি তাকবীর মানে আল্লাহু আকবার? নিম্নোক্ত হাদিসটি দেখুনঃ
بَاب الذِّكْرِ بَعْدَ الصَّلاَةِمُحَمَّدُ بْنُ أَبِي بَكْرٍ قَالَ حَدَّثَنَا مُعْتَمِرٌ عَنْ عُبَيْدِ اللهِ عَنْ سُمَيٍّ عَنْ أَبِي صَالِحٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَقَالَ جَاءَ الْفُقَرَاءُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالُوا ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ مِنَ الْأَمْوَالِ بِالدَّرَجَاتِ الْعُلَا وَالنَّعِيمِ الْمُقِيمِ يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ وَلَهُمْ فَضْلٌ مِنْ أَمْوَالٍ يَحُجُّونَ بِهَا وَيَعْتَمِرُونَ وَيُجَاهِدُونَ وَيَتَصَدَّقُونَ قَالَ أَلاَ أُحَدِّثُكُمْ إِنْ أَخَذْتُمْ أَدْرَكْتُمْ مَنْ سَبَقَكُمْ وَلَمْ يُدْرِكْكُمْ أَحَدٌ بَعْدَكُمْ وَكُنْتُمْ خَيْرَ مَنْ أَنْتُمْ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِ إِلاَّ مَنْ عَمِلَ مِثْلَهُ تُسَبِّحُونَ وَتَحْمَدُونَ وَتُكَبِّرُونَ خَلْفَ كُلِّ صَلاَةٍ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ فَاخْتَلَفْنَا بَيْنَنَا فَقَالَ بَعْضُنَا نُسَبِّحُ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ وَنَحْمَدُ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ وَنُكَبِّرُ أَرْبَعًا وَثَلاَثِينَ فَرَجَعْتُ إِلَيْهِ فَقَالَ تَقُولُ سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَاللهُ أَكْبَرُ حَتَّى يَكُونَ مِنْهُنَّ كُلِّهِنَّ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দরিদ্রলোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, সম্পদশালী ও ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চমর্যাদা ও স্থায়ী আবাস লাভ করছেন, তাঁরা আমাদের মত সালাত আদায় করছেন, আমাদের মত সিয়াম পালন করছেন এবং অর্থের দ্বারা হাজ্জ, ‘উমরাহ, জিহাদ ও সদাক্বাহ করার মর্যাদাও লাভ করছেন। এ শুনে তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে, যারা নেক কাজে তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে, তাদের পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে। তবে যারা পুনরায় এ ধরনের কাজ করবে তাদের কথা স্বতন্ত্র। তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশ বার করে তাসবীহ্ (সুবহানাল্লাহ্), তাহমীদ (আলহামদু ল্লিল্লাহ্) এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে। (এ নিয়ে) আমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হলো। কেউ বলল, আমরা তেত্রিশ বার তাসবীহ্ পড়ব। তেত্রিশ বার তাহমীদ আর চৌত্রিশ বার তাকবীর পড়ব। অতঃপর আমি তাঁর নিকট ফিরে গেলাম। তিনি বললেন, سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَاللهُ أَكْبَرُ বলবে, যাতে সবগুলোই তেত্রিশবার করে হয়ে যায়। (৬৩২৯; মুসলিম ৫/২৬, হাঃ ৫৯৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৯৫ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০৩)
এই হাদিসে তাসবীহ, তাহমীদ এবং তাকবীর আলাদা ভাবে বলা হয়েছে এবং তাসবীহ বলতে সুবহানাল্লাহ কে বুঝানো হয়েছে। তারপরেও যদি আপনি ঘুরিয়ে পেচিয়ে তাসবীহ বলতে আল্লাহু আকবার কে বুঝাতে চান তাহলে আমার কথা হচ্ছে যেহেতু সুবহানাল্লাহ বলার সরাসরি হাদিস রয়েছে এবং আল্লাহু আকবার বলার সরাসরি কোন হাদিস নেই, তার মানে তাসবীহ মানে সুবহানাল্লাহ। আর যেখানে সরাসরি সুবহানাল্লাহ বলার হাদিস আছে সেখানে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আল্লাহু আকবার বলার কথা কেনো বলা হচ্ছে?–Arif
জবাব:
এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, মূলত ইমামের ভুল হলে আল্লাহু আকবার বলে লোকমা দেয়ার প্রতি উৎসাহ কোনো মুহাক্কিক আলেম দেন না। কেননা, নিঃসন্দেহে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেয়া সুন্নত। হাদীস ও ফিকহের কিতাবাদিতে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়ার কথাই আছে। আল্লাহু আকবার বলে নয়। সুতরাং কোনো ভুলের ব্যাপারে ইমামকে সতর্ক করতে চাইলে আল্লাহু আকবার না বলে সুবহানাল্লাহই বলা উচিত। (শরহু মাআনিল আছার ১/২৯৪; নুখাবুল আফকার ৪/৩৬৯; আলমাবসূত ১/২০০; আল মুহীতুল বুরহানী ২/২১৩; শরহুল মুনইয়া ৪৪৯)
দুই. কিন্তু প্রশ্ন হল, কোনো ব্যক্তির যদি উক্ত সুন্নাত সম্পর্কে ইলম না থাকার কারণে ইমামের ভুল হলে আল্লাহু আকবার বলে লোকমা দেয় তাহলে এক্ষেত্রে তার ব্যাপারে হুকুম কী হবে? তখন কি এটা বলে হবে যে, উক্ত সুন্নাত ছেড়ে দেয়ার কারণে তার নামায হয় নি!
বলা বাহুল্য যে, নিশ্চয় এমন মূর্খতাপূর্ণ কথা কেউ বলবে না। বরং যদি কেউ রুকুর তাসবীহ সিজদাতে পড়ে ফেলে অথবা সিজদার তাসবীহ রুকুতে পড়ে ফেলে তার ব্যাপারে যেমন বলা হয় যে, এ ব্যক্তির কাজটি সুন্নাত পরিপন্থী হলেও তার করণীয় কিছু নেই। এটি তার নামাযে অমনোযোগীতার আলামত। তাই মনোযোগের সাথে নামায আদায়ের ব্যাপারে তাকে আরো যত্নশীল হতে হবে। অনুরূপভাবে উক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও এটাই বলা হবে যে, তার কাজটি সুন্নাত পরিপন্থী হলেও তারও করণীয় কিছু নেই। বরং সম্ভব হলে তখন তাকে উক্ত সুন্নাত সম্পর্কে ভদ্রোচিতভাবে অবহিত করা হবে এবং সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেয়ার প্রতি উৎসাহ দেয়া হবে। আর এ নিয়ে কটাক্ষজাত আচরণ প্রদর্শন তো কোনোভাবেই কাম্য নয়!
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী