পিতামাতা আল্লাহর বিধান পালনে বাধা দিলে সন্তানের করণীয়

জিজ্ঞাসা-০৫: মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশ্ত। সুতরাং মা যা বলবে তা মাথা পেতে নিতে হবে৷কিন্তু সেই বাবা মা যদি নাজায়েজ কাজের জন্য চাপ সৃষ্টি করে তাহলে তা অমান্য করলে কি আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন?

আসলে আমি ইসলামিক বিধান পরিপূর্ণভাবে মেনে চলতে চাই৷ আমি পরিপুর্ণ পর্দা করতে চাই৷অনেক জোর জবরদস্তি করে আমি পর্দা করছি৷ কিন্তু আমার বাবা মা কোনোভাবেই তা মেনে নিচ্ছেন না বরং বিভিন্নরকম কথা বলে মানষিক নির্যাতন চালাচ্ছে৷ তারা বলে, আমি সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে তাই এইসব কালো হেজাব-বোরকা আমি পরলে মান-সম্মান চলে যাবে৷কিন্তু আমি ইসলামিক পর্দা বিধান মানতে চাই৷ আমাকে কোনোভাবেই পর্দা করতে দিচ্ছে না৷ এখন আমার করণীয় কি? এক্ষেত্রে আমি মায়ের কথা না মানলে মা বলছেন,যতই পর্দা কর নামাজ পড় মায়ের কথা না শুনলে তুই জান্নাত পাবি না৷ এখন আমার করণীয় কি??–আইরিন আক্তার,উত্তরা,ঢাকা।

জবাব : পর্দা করা সম্পর্কে সামগ্রিক নির্দেশনা সুরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু বর্তমান সেক্যুলার সমাজে এটি একটি মারাত্মক সমস্যা যে, পিতামাতা তাঁর সন্তানদেরকে ইসলামী বিধিবিধান পালনে তো উৎসাহী করে তোলেনই না, উল্টো কোন সন্তান যদি আল্লাহর অসীম দয়া আর করুণায় প্রকৃত ইসলাম বুঝতে পেরে একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম/মুসলিমাহ হতে চায়, তাকে বাঁধা দেন। মনে রাখবেন, আনুগত্যের সবচেয়ে বড় দাবিদার সন্তানের জন্য বাবা-মা অবশ্যই কিন্তু এ দাবী বিকল হয়ে যাবে, যখন তাঁরা এমন কিছু দাবী করবেন, যা আল্লাহর আদেশ-নিষেধের সীমা লঙ্ঘন করবে। কারণ ইসলামের শিক্ষা হল,لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق অর্থাৎ, আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতা যেখানে আসবে, সেখানে সৃষ্টির আনুগত্য কোনো অবস্থাতেই করা যাবেনা। সৃষ্টির আনুগত্যের সীমারেখা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল বলেন,

فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ

অসৎকাজে আনুগত্য নয় ;আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে। (বুখারী ৭১৪৫  মুসলিম ১৮৪০)

সুতরাং আলোচ্য ক্ষেত্রে আপনার উচিত, বাবা মায়ের সঙ্গে অসদাচারণ না করে ধৈর্য ধারণ করা, বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দুআ করা, যেন আপনার পিতামাতার মন-মানসিকতার পরিবর্তন হয়, শয়তানের ধোঁকা থেকে যেন তাঁরা পরিত্রাণ লাভ করতে পারেন।

তবে এক্ষেত্রে একটি সূক্ষ্ম সতর্কতা পুণরায় উল্লেখ করছি তাহলো, গুনাহের কাজে তাদের আনুগত্য না করা মানে তাদের সঙ্গে অসদাচারণ করা নয়; বরং তাঁরা যে গুনাহের কাজের আদেশ দিয়েছেন তা না করা এবং অন্যান্য বৈধ আদেশগুলো মান্য করা। কারণ পিতামাতার সেবা ও সদ্ব্যবহারের জন্য তাঁদের মুসলমানও হওয়া জরুরী নয়। এসম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক বলেন,

وَإِن جَاهَدَاكَ عَلى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

যদি তাঁরা (পিতামাতা) তোমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে আমার সাথে কাউকে শরীক করার জন্য যা (শিরক) তোমার বোধগম্য নয়, তাহলে তুমি তাঁদের কথা অমান্য করো, (অর্থাৎ আমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না) আর পার্থিব জীবনে উৎকৃষ্ট পন্থায় তাঁদের সাথে সৎ সম্পর্ক বজায় রেখো। আর তুমি তাঁদের পথ অনুসরণ করো যারা (আমি এক) আমার প্রতি অবিচলভাবে আকৃষ্ট রয়েছে।’ (সূরা লুকমান ১৫)

রাসূল বলেন,

عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ، إِلَّا أَنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ.

মুসলিমের ওপর অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে আমীরের কথা শোনা এবং আনুগত্য করা, চাইতা তার মনঃপূত হোক বা না হোক। তবে যদি গুনাহের কাজের নির্দেশ দেওয়া হয় (তাহলে স্বতন্ত্র কথা)। যদি গুনাহের কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয় তাহলে তা শোনাও যাবে না, আনুগত্যও করা যাবে না। (বুখারী ৭১৪৪  মুসলিম ১৮৩৯)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − nine =