পীর ধরা কি বাধ্যতামূলক? নারীরা এক্ষেত্রে কী করবে?

জিজ্ঞাসা–১৬০২: আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। সম্মানিত মুহতারাম, আপনার কাছে আমার একটা প্রশ্ন। প্রশ্ন হচ্ছে, মুরিদ হওয়া কি বাধ্যতামূলক? পীর না ধরলে কি আমরা জান্নাতে যেতে পারব না এবং মেয়েদের কী করতে হবে? তাদের ক্ষেত্রেও এটা কি আবশ্যক? প্রশ্নগুলোর উত্তর দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।–মোঃ ফয়জুল ইসলাম সোহাগ।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله

এক. প্রিয় প্রশ্নকারী দীনি ভাই, মূল জরুরি বিষয় হল, নিজের আত্মাকে যাবতীয় গুনাহর চিন্তা থেকে পরিশুদ্ধ করে নেক আমলের প্রতি আগ্রহী করে তোলা। নিজেকে শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচিয়ে রেখে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,

قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا

যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয় এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়। (সূরা আশ শামস ৯, ১০)

অন্যত্র তিনি বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিতরূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারা ২০৮)

আর উক্ত বিষয়টা একজন হক্কানি পীরের দিকনির্দেশনা পেলে সহজ হয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে এটা সুন্নাত। মুহাদ্দিস আবদূল হক্ব মুহাদ্দেসে দেহলভী রহ. তার ‘কওলুল জামিল’ কিতাবে লিখেন, বায়আত গ্রহণ করা তথা হক্কানি পীরের মুরিদ হওয়া সুন্নাত।

সুতরাং পীরের মুরিদ না হলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না; যেমনিভাবে এজাতীয় কথা বলা বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছুই নয়। অনুরূপভাবে ‘পীরের প্রয়োজন নেই’ একথা বলাও উচিত নয়। আমাদের উচিত সকল বাড়াবাড়ি এবং ছাড়াছাড়ি থেকে দূরে থাকা।

দুই. পর্দাসহ শরীয়তের অন্যান্য বিধানের প্রতি লক্ষ রেখে নারীদের জন্যও পীরের মুরিদ হওয়ার তথা বায়আত গ্রহণ করার অনুমতি আছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَىٰ أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ ۙ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

হে নবী! বিশ্বাসী নারীরা যখন তোমার নিকট এসে বায়আত করে এই মর্মে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন শরীক স্থির করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তান-সন্ততিদের হত্যা করবে না, তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না এবং সৎকার্যে তোমাকে অমান্য করবে না, তখন তাদের বায়আত গ্রহণ কর[১] এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা মুমতাহিনা ১২)

হাদিস শরিফে এসেছে, আয়েশা রাযি. বলেন,

وَاللَّهِ، ما أَخَذَ رَسولُ اللهِ ﷺ علَى النِّسَاءِ قَطُّ إلَّا بما أَمَرَهُ اللَّهُ تَعَالَى، وَما مَسَّتْ كَفُّ رَسولِ اللهِ ﷺ كَفَّ امْرَأَةٍ قَطُّ، وَكانَ يقولُ لهنَّ إذَا أَخَذَ عليهنَّ: قدْ بَايَعْتُكُنَّ كَلَامًا

আল্লাহর কসম! আল্লাহর নির্দেশিত পথ ছাড়া রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন দিন মহিলাদের ওয়াদা গ্রহণ করেন নি এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর হাত কোন দিন কোন (অপরিচিত) মহিলার হাত স্পর্শ করে নি। তাদের ওয়াদাবদ্ধ হওয়ার পরই তিনি মৌখিকভাবে বলে দিতেন, তোমাদের বায়আত গ্রহণ করলাম। (বুখারী ৫২৮৮ মুসলিম ১৮৬৬)

والله أعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 1 =