ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার ইত্যাদিতে ইমোজির জায়েয ও নাজায়েয ব্যবহার

জিজ্ঞাসা–১৬৪১: ফেসবুক মেসেঞ্জার এ ইমোজি এর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাই।–সাদিয়া।

জবাব:

এক. প্রিয় প্রশ্নকারী দীনি বোন, ইমোজিতে যদি মুখমণ্ডল কিংবা প্রাণীর পূর্ণ দেহাবয়ব স্পষ্ট থাকে তাহলে তা নিষিদ্ধ ছবির আওতাভুক্ত হবে। কেননা, মুখমণ্ডল আঁকাও প্রাণীর সম্পূর্ণ ছবি আঁকার নামান্তর। আবার ছবি ছোট হওয়ার কারণে বিধানে কোনো তারতম্য হয় না। তাই এ ধরনের ছবিযুক্ত স্মাইলি বা ইমোজি ব্যবহার জায়েয হবে না।

হাদিসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ বলেছেন,

كُلُّ مُصَوِّرٍ فِي النَّارِ يُجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسٌ فَيُعَذِِّبُهُ فِي جَهَنَّمَ

প্রত্যেক ছবিনির্মাতা জাহান্নামে যাবে, তার নির্মিত প্রতিটি ছবি পরিবর্তে একটি করে প্রাণ সৃষ্টি করা হবে, যা তাকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে।’ (বুখারী ২২২৫, ৫৯৬৩, মুসলিম ৫৬৬২)

দুই. আর যদি ইমোজি কোলন ও ব্র্যাকেটের সমন্বয়ে কিংবা শুধু অক্ষর যোগে বানানো হয়। যেমন, 🙂 😞 😀 😉 ইত্যাদি। তাহলে যেহেতু এগুলোতে প্রকৃত মুখের কোনো বৈশিষ্ট্য নেই, যেমন চোখ, মুখ, নাক, মাথা ও কান নেই, তাই এগুলো নিষিদ্ধ ছবির আওতাভুক্ত হবে না। সুতরাং এগুলোর ব্যবহার জায়েয হবে। তবে অকারণে এগুলোর ব্যবহার পরিত্যাগ করাই তাক্বওয়ার পরিচয় হবে।
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ বলেছেন,

الصورة الرأس ، فإذا قطع الرأس فلا صورة

ছবি হল মাথার অংশ, আর মাথা কেটে ফেললে ছবি থাকে না। (সহীহ আলজামি’ ৩৮৬৪)

তিন. প্রিয় প্রশ্নকারী বোন, এ পর্যায়ে ইমোজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সতর্ক করাও জরুরি মনে করছি। যেমন,

১. জায়েযের আওতায় পড়ে এমন ইমোজির ব্যবহারও কেবল একই জেন্ডার এবং মাহরামের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। কেননা, প্রথমত, বিপরীত জেন্ডার যদি গাইরে-মাহরাম তথা পরপুরুষ হয় তাহলে তার সঙ্গে বিনা প্রয়োজনে কথা বলা জায়েয নেই। দ্বিতীয়ত, পর্দার বিধান ঠিক রেখে একান্ত প্রয়োজনে তার সঙ্গে কথা বলা জায়েয হলেও এক্ষেত্রে নারীর প্রতি নির্দেশ হল, এমন কোনো আচরণ তার সঙ্গে প্রকাশ করা যাবে না, যার মাঝে ফেতনার আশঙ্কা বিদ্যমান।

সুতরাং পরপুরুষের সাথে কথা বলার সময় এ ইমোজিগুলো ব্যবহার করা জায়েয হবে না। কেননা, এগুলো সে কেমন অনুভব করছে তা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। মনে হবে, সে হাসছে, লাজুক অভিনয় করছে…। আর এতে বিপরীত প্রান্তের পুরুষটির অন্তরে তার চেহারার কল্পনা আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সুতরাং এতে ফেতনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কাই প্রবল।

২. উক্ত ইমোজির ব্যবহার যেন কাউকে তাচ্ছিল্য বা বিদ্রূপ করার উদ্দশ্যে না হয়। কেননা, বলা বাহুল্য যে, ইসলাম এটাকে হারাম মনে করে।

৩. কিছু ইমোজি রয়েছে যেগুলো কুফর, শিরক, সমকামিতা, নগ্নতাসহ বিভিন্ন গর্হিত বিষয়ের সিম্বল হিসেবে পরিচিত। সেগুলোর ব্যবহার থেকেও একজন মুমিন দূরে থাকবেন অবশ্যই।

والله أعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − eight =