জিজ্ঞাসা–৮৩: প্রায় মাহফিলে দেখা যায়, বাইরে টুপি মেসওয়াক আতর নিয়ে কিছু হকার বসে। সেখানে ওয়ালমেটজাতীয় কিছু মোটা কাগজও বিক্রি হয়। এরকমই একটি কাগজ আমার ছোট ভাই একটি মাহফিল থেকে নিয়ে এসেছে। যেখানে হাদীসের বরাত দিয়ে কিছু আমলের কথা বলা হয়েছে। আমাদের বাসার লোকজন এর উপর আমলও শুরু করে দিয়েছে। এখন হুজুরের নিকট জানতে চাই–হাদীসটি আসলে কোথাও আছে কি না? হাদীসটি এই, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রা.)কে বলেছেন, হে আলী! প্রত্যেক রাতে পাঁচ কাজ করে ঘুমাও। যথা : ১. চার হাজার দিনার সদকা করে ঘুমাও ২. এক খতম কুরআন পড়ে ঘুমাও ৩. জান্নাতের মূল্য আদায় করে ঘুমাও। ৪. দুজনের মাঝে বিবাদ মিটিয়ে ঘুমাও ও ৫. একটি হজ্ব আদায় করে ঘুমাও। আলী রা. বললেন, এটা তো অসম্ভব। কীভাবে আমি তা আদায় করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চার বার সূরা ফাতিহা পড়ে ঘুমাও তাহলে চার হাজার দিনার সদকার সওয়াব পাবে। তিন মর্তবা সূরা ইখলাস পড়ে ঘুমাও তাহলে একবার কুরআন খতম করার সওয়াব পাবে। তিন বার দুরূদ পড়ে ঘুমাও তাহলে জান্নাতের মূল্য আদায় হয়ে যাবে। দশবার ইস্তেগফার পড়ে ঘুমাও তাহলে দুজনের বিবাদ মিটানোর সওয়াব পাবে। চারবার কালিমায়ে তামজীদ পড়ে ঘুমাও তাহলে একটি হজ্বের সওয়াব পাবে। হযরত আলী (রা.) বলেন, আমি প্রত্যহ রাতে এ আমল করে ঘুমাব।–আবুল বাশার।
জবাব: মূলত উল্লেখিত হাদীস জাল। কেননা, হাদীসের নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবে হাদীসটি পাওয়া যায়না। এ ধরনের জাল ও ভিত্তিহীন কথা হাদীস বলে চালিয়ে দেয়া এবং মানুষের মাঝে তা প্রচার করা মারাত্মক গুনাহ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিঃসন্দেহে আমার উপর মিথ্যারোপ করা (এর ভয়াবহতা) অন্যের উপর মিথ্যারোপ করার মতো নয়। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত আমার উপর মিথ্যারোপ করল সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামকে বানিয়ে নেয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১২২৯)
তাই মুসলমানের কর্তব্য হল, এ ধরনের বর্ণনা প্রচার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকা এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে তওবা-ইস্তিগফার করা।
প্রকাশ থাকে যে, সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাস, দরূদ, ইস্তেগফার ও কালিমার বিভিন্ন ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বার প্রমাণিত আছে। সেসব ফযীলতসমূহই মানুষের মাঝে প্রচার করা কর্তব্য। (ফাতাওয়া লাজনায়ে দায়েমা ৩৭৮৯১; শায়েখ সালেহ আল উসাইমিন)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী