বাবা মদ পানে অভ্যস্ত; সন্তানের করণীয় কী?

জিজ্ঞাসা–১৭১৯: হুজুর, আমার আব্বা সবসময় মদ খায় আর বাড়িতে এসে অশান্তি করে। তো আমি আমার আব্বাকে কিভাবে এই সব কিছু থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে দ্বীনের পথে নিয়ে আসতে পারবো?–Imtiyaz molla

জবাব:

এক. প্রিয় প্রশ্নকারী দীনী ভাই, আপনার পিতার এই অবস্থার কারণে আপনার সাধ্যের ভেতরে যা কিছু আছে, সন্তান হিসেবে সবকিছু করতে হবে, আপনাকে তার হেদায়েত লাভের ব্যাপারে সাবধানে চিন্তা করতে হবে এবং পাশাপাশি আরও ধৈর্য্য ধারণ করতে নিজেকে অভ্যস্ত করতে হবে, যাতে তিনি এমন খারাপ অবস্থায় মারা না যান। এটা আপনার ওপর আপনার পিতার অধিকার। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ

মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম ৬)

আর এ ক্ষেত্রে আদর্শ পদ্ধতি হতে পারে সংক্ষেপে নিম্নরূপ:

১. তাকে মদ পান করার অপকারিতা ও ক্ষতি ব্যাখ্যা করে ক্রমাগত পরামর্শ এবং উপদেশ দিতে থাকুন। যেমন, তাকে বার বার স্মরণ করিয়ে দিন যে, মদ্য পান একটি মারাত্মক কবিরা গুনাহ, যার ওপর আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল ﷺ-এর অভিসম্পাত রয়েছে। এমনকি হাদিস শরিফে অভ্যস্ত মাদকসেবীকে মূর্তিপূজকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مُدْمِنُ الْـخَمْرِ كَعَابِدِ وَثَنٍ

অভ্যস্ত (Adicted) মাদকসেবী মূর্তিপূজক সমতুল্য। (ইবনু মাজাহ ৩৪৩৮)

. তাকে মদ পান করার ক্ষতি ও শাস্তি সংক্রান্ত কিছু পুস্তিকা উপহার দিন।

৩. তার সাথে নম্র  হোন  এবং কথায় ও আচরণে তার প্রতি সদয় থাকুন। কেননা, তিনি আপনার বাবা। আর মা-বাবা সর্বাবস্থায় সদ্ব্যবহারে হকদার; এমন কি তারা অমুসলিম হলেও।  আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَإِن جَاهَدَاكَ عَلى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا

পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। (সূরা লুকমান ১৫)

৪. পরিবারের কেউ যেন তাকে মদ পানে সাহায্য না করে; না তা এনে দেয়ার ক্ষেত্রে, না তা কেনার জন্য অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে।

৫. যখন তিনি মাতাল হয়ে ঘরে ফিরেন তখন চেষ্টা করবেন, তাকে পরিবার থেকে দূরে রাখতে। যেন তার আচরণ পরিবারের অন্য সদস্যদের ওপর প্রভাব ফেলতে না পারে  এবং তার মাতালতায় পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে না পারে।

৬. প্রয়োজনে তাকে আইনের হাতে তুলে দিন, যারা তাকে শাস্তি দিতে পারে।

দুই. প্রিয় ভাই, আপনার উক্ত মেহনত ও দরদ আরও বেশি কার্যকরী ও সহজ হবে, যদি তাকে কোন হক্কানী আলেমের সঙ্গে সম্পর্ক করিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি প্রথমে তাকে কোন হক্কানী আলেমের বয়ান শোনার জন্য আগ্রহী করে তুলতে পারেন। ওলামাদের মজলিসে আসা যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে পারেন। অথবা তাকে দাওয়াত-তাবলিগে কিছু সময় দেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

প্রিয় ভাই, উক্ত মেহনত আপনাকে চালিয়ে যেতে হবে প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি তার হেদায়তের জন্যও দোয়া করতে হবে নিয়মিত। কোন অবস্থায় আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। আশাহত হয়ে চেষ্টা কিংবা দোয়া বর্জন করবেন না। ইনশাআল্লাহ একদিন না একদিন সাফল্য পাবেন। আল্লাহ তাআলা তো বলেছেন,

وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ

যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। (সূরা ত্বলাক ৩)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ

ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দোয়া ব্যতীত। (তিরমিযী ২১৩৯)

তথাপি যদি তিনি থেকে ফিরে না আসেন, তাহলে আপনি দায়িত্বমুক্ত বলে বিবেচিত হবেন এবং উক্ত চেষ্টা ও দোয়ার জন্য অশেষ সাওয়াবের অধিকারী হবেন। আমরাও দোয়া করি, আল্লাহ আপনার বাবাকে পরিপূর্ণ হেদায়াত দান করুন। আমিন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী